সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
Published: 8th, July 2025 GMT
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের অপসারণ ও সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ ৬ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন শ্রমিকরা।
এর আগে গতকাল সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেয় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
এদিকে, ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে সিলেট থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেও কোনো বাস প্রবেশ করেনি। তবে নগরীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সকল ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সে কারণে নগরীতে ধর্মঘটের প্রভাব তেমনটা পড়েনি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড় ও মদিনা মার্কেট এলাকায় স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে, স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে যানবাহন সংখ্যায় অনেক কম। এতে করে বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। কিছু কিছু পয়েন্টে যানবাহনের অপেক্ষায় অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
অবশ্য এইচএসসি পরীক্ষার্থী, রোগী পরিবহনে সংশ্লিষ্ট যানবাহন ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা।
সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, “সিলেটের গণপরিবহন-পণ্যপরিবহন ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিকরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত অবহেলিত। আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রোষাণলে পড়ে সিলেটের কোটি মানুষের নেমে আসে অবর্ননীয় দুর্ভোগ। সিলেটের সব পাথর কোয়ারি ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে লাখ লাখ কর্মহীন মানুষ। তারা কীভাবে জীবন ধারণ করবে?”
মইনুল ইসলাম জানান, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৩৬ ধারায় যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তা মালিক-শ্রমিককে ধ্বংসের নীল নকশা। একইভাবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া আরেক হয়রানী ও ষড়যন্ত্র। তাছাড়া গাড়ি তল্লাশির নামের পুলিশ ট্রাক শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে। এসবের প্রতিকার পেতে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার (৬ জুলাই) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবর ৫ দফা দাবি উল্লেখ করে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন পরিবহন নেতারা। ৫ দফা দাবির মধ্যে জেলা প্রশাসকের অপসারণের বিষয়টি ছিল না। পরে সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ ৬ দফা দাবির কথা জানায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
৬ দফা দাবিগুলো হলো- সড়ক পরিবহণ আইন ২-১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যানের ক্ষেত্রে ১৫ ও সিএনজি ইমা ও লেগুনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল, সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহণের উপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার;
সিলেটের সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুতের মিটার ফেরত ও ভাঙচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর-বালুর ক্ষতিপূরণ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহার এবং বালু পাথরসহ পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি না করা।
ঢাকা/নূর/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন র বহন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে পানিবন্দী হাজারো মানুষ
টানা বৃষ্টিতে নাকাল উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বাসিন্দারা। ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে জেলা শহর মাইজদীর বেশির ভাগ সড়ক। ঘরবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল ও কলেজে পরীক্ষা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে গতকাল সোমবার বেলা তিনটা থেকে আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে নোয়াখালীর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, জেলার মাইজদীর কেন্দ্রীয় সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক, শিল্পকলা একাডেমি, জেলা জজ আদালত সড়ক, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক এবং মাইজদী স্টেশন রোড—প্রায় সব সড়কেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও এর চেয়েও বেশি। এসব এলাকায় নালার পানি সরছে ধীরগতিতে। ফলে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা নতুন নয়। প্রতিবছরই এমনটা হচ্ছে। এর মূল কারণ অপরিকল্পিত ও সরু ড্রেন। আবার এসব ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কারও করা হচ্ছে না। এর ফলে আবাসিক এলাকাসহ দোকানপাট এ বিপণিতেও পানি ঢুকছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শহরে কেউ নাগরিক সুবিধা নিয়ে ভাবে না। ড্রেনগুলো সরু, অপরিকল্পিত ও আবর্জনায় ভরা। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানি উঠে।’
ফ্ল্যাট রোড এলাকার দোকানি মো. রিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে সরকারি আবাসিক এলাকার লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তায় পানি জমে থাকায় এখন কেউ দোকানে আসতে চায় না। সড়কের চেয়ে উঁচুতে ড্রেন করা হয়েছে, ফলে পানি সরে না।’
জানতে চাইলে নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি-এলজিইডি) জালাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। সব জায়গাই কমবেশি জলাবদ্ধতা রয়েছে। জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনগুলোয় ময়লা ফেলা। পরিস্থিতি উন্নয়নে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ড্রেনগুলোর ময়লা পরিষ্কার করছেন। বৃষ্টি কমলে জলাবদ্ধতা কমে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।