স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) ২৫৭ প্রকৌশলীর চাকরি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, চাকরি নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতিতে নানা অনিয়ম হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পাশ কাটানো হয়েছে সব বিধিবিধান। আইনগত সুযোগ না থাকলেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।

এসব প্রকৌশলীর নিয়োগ–পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। ৩ জুলাই বিচারপতি মো.

আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

এলজিইডির ২৫৭ প্রকৌশলীর চাকরির অনিয়ম নিয়ে ২০২৩ সালের ২৮ জুন এবং ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী আরিফ চৌধুরী। গত বছরের ২ ডিসেম্বর আদালত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এই সহকারী প্রকৌশলীদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হয়েছে, তা কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট।মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিবচাকরি নিয়মিতকরণ হয়নি

উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২০১০ সালে ১৩১ জন, ২০১১ সালে ১০৯ জন এবং ২০১৩ সালে ১৭ জনকে এলজিইডির রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তে দেখা গেছে, রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণের আবশ্যকতা থাকলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।

উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই ২৫৭ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে পিএসসিরও সুপারিশ নেওয়া হয়নি। নির্ধারিত প্রক্রিয়া ও বিধি অনুসরণ না করেই এই প্রকৌশলীদের রাজস্ব খাতে পদায়ন ও নিয়মিত করা হয়।

কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভূতাপেক্ষ তারিখে নিয়মিত করার সুযোগ না থাকায় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এই প্রকৌশলীদের নিয়মিতকরণের আদেশ জারির বিধিগত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আইনগত সুযোগ নেই, তবু পেয়েছেন পদোন্নতি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী, প্রকল্পের কোনো কর্মচারীকে ভূতাপেক্ষ তারিখ থেকে নিয়মিতকরণের সুযোগ নেই। এর সঙ্গে জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি জড়িত থাকায় ভূতাপেক্ষ তারিখ হতে জ্যেষ্ঠতা গণনারও সুযোগ নেই।

তদন্ত কমিটির মতে, চাকরি নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা গণনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। নিয়মিতকরণ যথাযথভাবে না হওয়ায় তাঁদের জ্যেষ্ঠতা গণনা করারও সুযোগ নেই। এমনকি তাঁদের সপ্তম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া ও ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার আইনগত সুযোগ ছিল না। তাঁদের যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, সেটি আইনসম্মত হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যেষ্ঠতা তালিকায় অবস্থান নির্ধারণ না করে ২৫৭ প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এতে ২০০৮ সালের পরে পিএসসির মাধ্যমে এলজিইডিতে নিয়োগ পাওয়া সহকারী প্রকৌশলীরা প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চাকরির ধারাবাহিকতা ছিল না, সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিও নেই

নিয়মিতকরণ বিধিমালা অনুযায়ী, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করতে হলে চাকরির ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ২৫৭ প্রকৌশলীকে রাজস্ব খাতভুক্ত করার প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে ৩৬ জনের চাকরির ধারাবাহিকতা ছিল না। অর্থাৎ তাঁরা সে সময় কর্মরত ছিলেন না।

এলজিইডির নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি। তদন্তে দেখা গেছে, রাজস্ব খাতে আসা এসব প্রকৌশলীর মধ্যে পাঁচজনের নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। তাঁদের মধ্যে তিনজনের বিএসসি ইন অ্যাগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং ও দুজনের বিএসসি ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল সোমবার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশীদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তদন্ত নিয়ে চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এই সহকারী প্রকৌশলীদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে, তা কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট। পিএসসির সুপারিশ ছাড়া চাকরি নিয়মিতকরণ করা যায় না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার তালিকাও থাকতে হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন প রকল প থ ক স থ ন ন তর কম ট র প ন প রক চ কর র র চ কর অন য য় সহক র তদন ত প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ ডিসেম্বর, প্রতি আসনে লড়বেন ৩৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বেলা ১১টায় শুরু হয়ে পরীক্ষা চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে ২ হাজার ৯৩৪টি আসনের বিপরীতে মোট আবেদন করেছেন এক লাখ ৭ হাজার ৭০১ শিক্ষার্থী। সে হিসেবে একটি আসনের বিপরীতে লড়বেন ৩৭ জন।

এর আগে, গত বছর এই ইউনিটে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৯৯ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী।

বিগত বছরের মতো এবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৮টি বিভাগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ঢাকা বিভাগে ৭৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে পরীক্ষা। এর মধ্যে, ঢাবি ক্যাম্পাসে ৬৬টি এবং ঢাবি ক্যাম্পাসের বাইরে ৯টি কেন্দ্র রয়েছে।

ঢাবি ক্যাম্পাসের বাইরের কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ, নীলক্ষেত হাই স্কুল, সরকারি বাংলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ (মতিঝিল), তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।

ঢাকা/সৌরভ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ