লোহার তৈরি খাঁচা, উপরে ছাউনি, খাঁচার সঙ্গে চাকা লাগিয়ে নেওয়া গাড়িতে যমজ ৩ শিশুসন্তানকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এক অসহায় মা। তার সঙ্গে হাঁটছে আরেকটি শিশু। বয়স ৩ বছর ৬ মাস।
৪ সন্তানের মা জান্নাত বেগমের সঙ্গে কথা হয় ঠাকুরগাঁও সদরে। মলিন পোশাক, চেহারায় বিষণ্নতা, দু’চোখে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দু’মুঠো খাবারের সন্ধানে। ১৩ মাস বয়সী ৩ যমজ শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়েশা। তাদের চেয়ে ৬ মাসের বড় মরিয়ম। অবুঝ ৪ সন্তানকে নিয়ে জীবনের অথৈ সাগর পাড়ি দিচ্ছেন জান্নাত বেগম।
তিনি জানান, বছরপাঁচেক আগে ঢাকায় তার বিয়ে হয় হাবিলের সঙ্গে। প্রেমের বিয়ে। বিয়ের পর ঠাকুরগাঁও চলে আসেন স্বামীর সঙ্গে। তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। শুরুর কিছুদিন সংসার ভালোই চলছিল। প্রথমে এক কন্যা সন্তানের পর যমজ ৩ সন্তানের মা হন জান্নাত বেগম। এরপরই তার জীবনে নেমে আসে দোজখ। সন্তান, স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান হাবিল।
এরপর থেকেই ৪ শিশুসন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন এই অসহায় মা। যেভাবেই হোক, সন্তানদের জন্য তিনি অনেক ভেবে বেঁচে থাকার একটা উপায় বের করেন। তিনি চলে যান কামারের দোকানে। তাদের বলে দুটি চাকা লাগানো একটি লোহার খাচা বানিয়ে নেন। সেই খাচার ভেতর ৩ শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে।
জান্নাত বেগম বলেন, ‘‘তিন পোলা-মাইয়া নিয়া তো আর হাঁটা যায় না। তাই গাড়ি বানাইছি। বিভিন্ন সময় অনেকেই সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিছে। আমি রাজি হই নাই।’’
সন্তানের প্রতি মায়ার কাছে হার মেনেছে টাকার লোভ। তারপরও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি জান্নাত বেগম। তিনি বলেন, ‘‘আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আপমানের, লজ্জার। কিন্তু এ ছাড়া আমার তো কোনো উপায় নাই। বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পাইছি। কিন্তু ছোটো ছোটো বাচ্চা, কার কাছে রেখে যাব?’’
৭ হাজার টাকা খরচ করে খাঁচাসহ গাড়ি বানিয়েছেন জান্নাত বেগম। সন্তানদের এই খাঁচায় নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তোলেন। যদিও খুব বেশি সহযোগিতা তিনি পান না। ‘ঘুরে বেশি পরিমাণে টাকা পাই না। সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারও কিনে দিতে পারি না। অনেক সময় তো পেট ভরে খাবারও দিতে পারি না,’’ বলেন জান্নাত বেগম।
রোকসানা পারভীন। জান্নাতের প্রতিবেশী। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনো নারীর পক্ষে এত ছোটো ছোটো ৪টি বাচ্চা লালন-পালন করা কষ্টকর। সেখানে তাকে লালন-পালনের পাশাপাশি উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। জান্নাতকে দেখলেই বোঝা যায় একটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে।’’
আরেক প্রতিবেশী শারমিন হাসান বলেন, ‘‘অনেক সময় তার বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনলে খারাপই লাগে। এত ছোটো ছোটো বাচ্চা! বিত্তশালীরা কত কত জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতা করে, কিন্তু জান্নাতকে সাহায্য করতে সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি।’’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা জানা ছিল না। আমি দ্রুত খোঁজখবর নেব। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়াবে।’’
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন জ ন ন ত ব গম ঠ ক রগ
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ছয় মাসে ৮০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫১
গোপালগঞ্জের সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন অন্তত ২ শতাধিক।
অসাবধানতা এবং দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাতদিন কাজ করেও কোনোভাবেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
গাড়ি চালকদের দাবি, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, অদক্ষ চালক ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো এবং মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনায় পড়েন তারা।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলবার থেকে সিলেটে শ্রমিকদের ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ
ময়মনসিংহে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ ও ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মো. রোকিবুজ্জামান দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পযর্ন্ত এই ছয় মাসে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশের ৭০ কিলোমিটারে ২৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৯ জন এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। মামলা হয়েছে ২৩টি।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালগঞ্জ অংশে চারটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২জন। মামলা হয়েছে তিনটি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ২৫টি দুর্ঘটনায় ১৯জন নিহত ও আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতটি।
স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল শেখ বলেন, “গোপালগঞ্জে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে এই মহাসড়কে। অদক্ষ বাস চালক আর গাড়ির দ্রুত গতি দুর্ঘটনার পেছনের মূল কারণ। যদি দক্ষ চালক দিয়ে এবং গতি কমিয়ে গাড়ি চালানো যায়, তাহলে আশা করছি, সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।”
কাশিয়ানী উপজেলার পোনা গ্রামের ররিউল শেখ বলেন, “ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শুধু বাস নয়, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ধরনের তিন চাকার যান চলাচল করে। এগুলোর চালকরা নিয়ম মানে না মহাসড়কে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গাড়ির চালক বলেন, শুধু পথচারীদের নয়, চালকদেরও নানা সমস্যা আর দোষ রয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন চালকরা। অনেক চালকের সঠিক লাইসেন্স নেই। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে তাদের কাজ করে তাহলে লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক গাড়ি চালাতে পারতো না।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনা কমাতে আমরা মহাসড়কে নিয়মিত টহল দিচ্ছি। মহাসড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে, যাতে চালকরা মহাসড়কে সঠিক নিয়মে যানবাহন চালান। চালকদের দক্ষতা বাড়াতে তাদের নিয়ে সভাও করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এসব করার পরেও চালকদের উদাসীনতার কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।”
ঢাকা/মাসুদ