এমন অভাবনীয় কাণ্ডও ঘটতে পারে! ধারণায় ছিল না। কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম রমনা নার্সারিতে। অভ্যাসবশত প্রিয় গাছগুলো দেখছিলাম। আগাম বৃষ্টিতে গাছগুলো প্রাণপ্রাচুর্যে রূপসী হয়ে উঠেছে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি গাছে। ফুলভর্তি গাছটি। সাদা রঙের ফুলগুলো স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র! ছুটে গেলাম গাছটির কাছে। বিস্মিত আমি চোখ বড় বড় করে অপলক তাকিয়ে থাকলাম গাছটির দিকে। ছুঁয়ে দেখলাম। বিড়বিড় করে বললাম, কত বড় হয়েছে গাছটি।

২০১৩ সালে সুলতানচাঁপার দুটি গাছ রোপণ করি এখানে। একটি হারিয়ে গেলেও বেঁচে আছে এই গাছ। সুদর্শন পাতা ও ডালপালায় বেশ সুদৃশ্য হয়ে উঠেছে।

সুলতানচাঁপার প্রতি আমার কিঞ্চিৎ পক্ষপাত রয়েছে হয়তোবা। সুদর্শন এই গাছ ঢাকায় বেশ দুষ্প্রাপ্য। জানামতে, ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কয়েকটি গাছই ছিল ঢাকাবাসীর জন্য। এ কারণে অনেক কষ্টে সংগ্রহ করা দুটি চারা রমনা পার্কে রোপণ করি ২০১২ সালে। কয়েক মাসের মধ্যেই গাছ দুটি লাপাত্তা। পরে (২০১৩ সাল) আবার লাগানো হয় দুটি গাছ, যার একটি এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক বছর খোঁজখবর নেওয়ার পর গাছ দুটির কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম। সেদিন আক্ষরিক অর্থেই চমকে গিয়েছিলাম। জানি না, কত বছর ধরে ফুল ফুটছে গাছটিতে। পরে অবশ্য ঢাকার চারুকলা অনুষদ এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও দুটি গাছ লাগানো হয়েছে। টেনেটুনে হাতে গোনা কয়েকটি গাছ মাত্র। অথচ এমন সুদর্শন গাছ নগরের বৃক্ষায়ন পরিকল্পনায় আরও ব্যাপক পরিমাণে থাকা প্রয়োজন।

প্রায় ২২ বছর আগে সুলতানচাঁপার ফুল প্রথম দেখি মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। তখন ডিজিটাল ক্যামেরা ততটা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। ম্যানুয়াল ক্যামেরায় ছবি তুলে প্রিন্ট করে দেখাই অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাকে। তাঁর মুখেই প্রথম সুলতানচাঁপার নাম শুনি। গ্রামে দেখা কন্ন্যাল বা পুন্ন্যাগগাছই যে সুলতানচাঁপা, সে রহস্যটাও তিনিই উন্মোচন করেন। ছেলেবেলায় ফুলের সৌন্দর্য খুব একটা চোখে না পড়লেও গাছতলায় অনেকবার পরিপক্ব ফল দেখেছি। যখন স্কুলে পড়ি, তখনো গ্রামের বাজারে হাটবারে কন্ন্যাল (ফল) বিক্রি হতে দেখেছি। এ কারণে বোটানিক্যাল গার্ডেনে রাজসিক গড়নের সেই একই পাতার গাছ দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম।

সুলতানচাঁপার অপরিপক্ব ফল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ