লক্ষ্মীপুরে ১ বছরে পানিতে ডুবে অন্তত ১২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, শিশুদের সাঁতার না জানা, জলাশয় অরক্ষিত অবস্থায় থাকাসহ নানা কারণে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে নিহত শিশুদের বয়স দুই থেকে আট বছরের মধ্যে। গত এক বছরে লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে সদর উপজেলায়। এ উপজেলায় মৃত্যু হয় ৪০ শিশুর। এর বাইরে গত ১ বছরে রায়পুরে ২০, রামগঞ্জে ২৮, কমলনগরে ২৮ এবং রামগতি উপজেলায় ৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন, সিভিল সার্জন, লক্ষ্মীপুর

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের পুকুর, খাল ও ডোবা পানিতে টইটম্বুর থাকায় ঘটে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জুনেই কেবল জেলায় পানিতে ডুবে ২১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।’ তিনি আরও বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পরিবার ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্কুল, মসজিদ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের জীবন রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।

জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শিশু একাডেমির একটি প্রকল্প চলমান বলে জানিয়েছেন জেলার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো.

কাউছার আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পদক্ষেপ নামের একটি এনজিওর সহায়তায় শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে। এ বছর ১৩ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে আশপাশের জলাশয়গুলোতে, যার কারণে গ্রামেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। শিশুদের সাঁতার শেখানো, জলাশয় ঘিরে বেড়া দেওয়া ও প্রাক্‌-স্কুলশিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের মতো নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং পরিবার, কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এ ধরনের মৃত্যু কমে আসবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ভ ল স র জন লক ষ ম প র অন ক ই র ঘটন বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করছে বাংলাদেশ

নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। বিশাখাপত্তনমে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় মাঠে গড়িয়েছে ম্যাচটি। বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন এনেছে। অস্ট্রেলিয়াও তাদের একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে।

আরো পড়ুন:

নাঈমকে বাদ দিয়ে সৌম‌্যকে ফেরাল বিসিবি, নতুন মুখ মাহিদুল

বিশ্বকাপের আরো এক ম্যাচ বৃষ্টির পেটে

টস জিতে জ্যোতি বলেন, “আজ আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বোর্ডে ভালো একটা স্কোর দাঁড় করানো। আগের ম্যাচে আমরা কমপক্ষে ৩০–৪০ রান কম করেছি। আজ দলে দুটি পরিবর্তন এনেছি ফারিহা তৃষ্ণা ও নিশিতা আখতার ফিরেছেন একাদশে। আমাদের বোলিং ইউনিটটা খুবই শক্তিশালী। আগের ম্যাচে নাহিদা আক্তার চোট পেয়েছে, ওর কিছুটা সময় লাগবে সেরে উঠতে। আগের ম্যাচের পর মানসিকভাবে সামলে ওঠা কঠিন ছিল, কিন্তু কোনো অজুহাত দিতে চাই না। আমরা চাই খেলা উপভোগ করতে, নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিতে।”

অ্যালিসা হিলি বলেন, “আমিও আসলে টস জিতলে ব্যাটিংই নিতে চেয়েছিলাম। আজ বাতাসটা মনোরম, সূর্যের আলোও ভালো—মেয়েরা খেলতে উপভোগ করবে নিশ্চয়ই। ২০১১ সালে এই মাঠটা ছিল আমার প্রিয় জায়গা, তাই এখানে খেলতে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। নতুন প্রতিপক্ষ, নতুন চ্যালেঞ্জ। দলে দুটি পরিবর্তন এনেছি- ডার্সি ব্রাউন ফিরেছে কিম গার্থের জায়গায়, আর জর্জিয়া ওয়ারহ্যাম খেলছে সোফি মোলিনিউক্সের জায়গায়। ইন্দোরে টানা দুইটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে, তাই সবাইকে সতেজ রাখতে চাই। ব্রাউনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ও কীভাবে শুরু করে সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।”

বাংলাদেশ একাদশ:
রুবিয়া হায়দার, ফারজানা হক, শারমিন আখতার, নিগার সুলতানা (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), সোবহানা মোস্তারি, শর্না আখতার, ফাহিমা খাতুন, রাবেয়া খান, রিতু মনি, নিশিতা আখতার নিশি ও ফারিহা তৃষ্ণা।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
অ্যালিসা হিলি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), ফিবি লিচফিল্ড, এলিস পেরি, বেথ মুনি, আনাবেল সাদারল্যান্ড, অ্যাশলি গার্ডনার, তাহলিয়া ম্যাকগ্রা, জর্জিয়া ওয়ারহ্যাম, ডার্সি ব্রাউন, আলানা কিং ও মেগান শাট।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ