লক্ষ্মীপুরে ১ বছরে পানিতে ডুবে ১২৫ শিশুর মৃত্যু
Published: 8th, July 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে ১ বছরে পানিতে ডুবে অন্তত ১২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, শিশুদের সাঁতার না জানা, জলাশয় অরক্ষিত অবস্থায় থাকাসহ নানা কারণে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে নিহত শিশুদের বয়স দুই থেকে আট বছরের মধ্যে। গত এক বছরে লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে সদর উপজেলায়। এ উপজেলায় মৃত্যু হয় ৪০ শিশুর। এর বাইরে গত ১ বছরে রায়পুরে ২০, রামগঞ্জে ২৮, কমলনগরে ২৮ এবং রামগতি উপজেলায় ৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন, সিভিল সার্জন, লক্ষ্মীপুরসিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের পুকুর, খাল ও ডোবা পানিতে টইটম্বুর থাকায় ঘটে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জুনেই কেবল জেলায় পানিতে ডুবে ২১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।’ তিনি আরও বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পরিবার ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্কুল, মসজিদ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের জীবন রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।
জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শিশু একাডেমির একটি প্রকল্প চলমান বলে জানিয়েছেন জেলার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে আশপাশের জলাশয়গুলোতে, যার কারণে গ্রামেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। শিশুদের সাঁতার শেখানো, জলাশয় ঘিরে বেড়া দেওয়া ও প্রাক্-স্কুলশিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের মতো নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং পরিবার, কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এ ধরনের মৃত্যু কমে আসবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ভ ল স র জন লক ষ ম প র অন ক ই র ঘটন বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে ১ বছরে পানিতে ডুবে ১২৫ শিশুর মৃত্যু
লক্ষ্মীপুরে ১ বছরে পানিতে ডুবে অন্তত ১২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব, শিশুদের সাঁতার না জানা, জলাশয় অরক্ষিত অবস্থায় থাকাসহ নানা কারণে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে নিহত শিশুদের বয়স দুই থেকে আট বছরের মধ্যে। গত এক বছরে লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে সদর উপজেলায়। এ উপজেলায় মৃত্যু হয় ৪০ শিশুর। এর বাইরে গত ১ বছরে রায়পুরে ২০, রামগঞ্জে ২৮, কমলনগরে ২৮ এবং রামগতি উপজেলায় ৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন, সিভিল সার্জন, লক্ষ্মীপুরসিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির পাশের পুকুর, খাল ও ডোবা পানিতে টইটম্বুর থাকায় ঘটে দুর্ঘটনা। চলতি বছরের জুনেই কেবল জেলায় পানিতে ডুবে ২১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুর-খাল-বিল জলাশয়বহুল লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অন্যান্য জেলার তুলনায় কিছুটা বেশি। শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে।’ তিনি আরও বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পরিবার ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্কুল, মসজিদ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের জীবন রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।
জেলা শিশু একাডেমির সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই সাঁতার জানে না। পানিতে ডুবে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে দিতে হয়, তা–ও অনেকেই জানেন না। ফলে ডুবে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করলেও হাসপাতাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকেই মারা যায়।পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে শিশু একাডেমির একটি প্রকল্প চলমান বলে জানিয়েছেন জেলার শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. কাউছার আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পদক্ষেপ নামের একটি এনজিওর সহায়তায় শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে। এ বছর ১৩ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্যমতে, গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে ২৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে আশপাশের জলাশয়গুলোতে, যার কারণে গ্রামেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। শিশুদের সাঁতার শেখানো, জলাশয় ঘিরে বেড়া দেওয়া ও প্রাক্-স্কুলশিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের মতো নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং পরিবার, কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এ ধরনের মৃত্যু কমে আসবে।