সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গ্রাহকদের টাকা আটকে যাওয়ায় ‘ভালো ব্যাংক’ ও ‘খারাপ ব্যাংক’ নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকের আগ্রহ হলো, বেশি সুদ দেওয়া ব্যাংক ভালো, নাকি কম সুদ দেওয়া ব্যাংক। আপনার কষ্টার্জিত টাকা কোথায় নিরাপদে রাখবেন, তা নিয়ে দ্বিধা থাকা স্বাভাবিক।

আপনি নিশ্চয়ই চান না আপনার কষ্টের জমানো টাকা বেহাত হোক। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পেতে সমস্যা হয়েছে।

একসময় ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক, যেমন ক্রেডিট রেটিং, ক্যামেলস রেটিং, মূলধন পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণের হার ইত্যাদি দেখে ব্যাংকের ভালো-মন্দ বিচার করা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সূচকগুলোর গুরুত্ব কমেছে। এর কারণ হলো, রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্বল ব্যাংকও ভালো রেটিং পাচ্ছে। আবার যে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের প্রতিবেদন নিয়েও বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক নানা সুবিধা নিয়ে খেলাপি ঋণকেও অনাদায়ি দেখাচ্ছে না। তাই সহজে বোঝা কঠিন হয়ে গেছে, কোন ব্যাংক ভালো আর কোনটি খারাপ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আস্থাহীনতার কারণে ব্যাংক খাতে আমানত বৃদ্ধি ৮ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোন ব্যাংকে টাকা রাখবেন, তা বাছাইয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।

বেশি সুদের ফাঁদ থেকে সাবধান

গ্রাহকদের মনে রাখা উচিত, যে ব্যাংক আমানতে অস্বাভাবিক বেশি সুদ দেয়, সেই ব্যাংক ততটা দুর্বল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, কোনো ব্যাংক তারল্য–সংকটে পড়লেই উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত টানার চেষ্টা করে। তাই উচ্চ সুদের ফাঁদে পা না দেওয়াই ভালো। এসব ব্যাংক বেশি সুদ দেবে ঠিকই, তবে একটা সময় পর আসল টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হতে পারে। প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সুদের হারের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। আপনি চাইলে নিকটস্থ শাখাতেও খোঁজ নিতে পারেন।

আপনার কষ্টার্জিত টাকা যেহেতু আপনার, তাই এসব খোঁজখবর নিজে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, কষ্টের টাকা আটকে গেলে বিপদ। আর টাকা সময়মতো না পেলে তার সঠিক মূল্য থাকে না।

অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা আছে কি না

আপনি ব্যাংক লেনদেন করার জন্য ব্যাংকটিতে অনলাইন ব্যাংক সুবিধা আছে কি না, তাও বিবেচনায় আনতে হবে। যদি আপনি মোবাইলে বা অনলাইনে লেনদেন করতে চান, তাহলে ব্যাংকের ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মান কেমন, তা যাচাই করুন।

আমানতের ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন

বেশি অঙ্কের টাকা ব্যাংক আমানত হিসেবে রাখার ক্ষেত্রে কিছু কৌশল নেওয়া উচিত। এক ব্যাংকে না রেখে একাধিক ব্যাংকে ভাগ করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আমানতের ঝুঁকি কম থাকে, আপনার অর্থ নিরাপদ থাকবে।

ভালো ব্যাংক চেনার কিছু উপায়

ভালো ব্যাংকে চেনার কিছু উপায় আছে। এক.

পরিচালনা পর্ষদের স্বচ্ছতা আছে কি না, তা দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাবমূর্তি দেখতে পারেন। যে ব্যাংকের পর্ষদ যত বেশি স্বচ্ছ, সেই ব্যাংক তত বেশি নিরাপদ। প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পরিচালকদের নাম ও পরিচয় দেওয়া থাকে। তাঁদের নিজস্ব ব্যবসার স্বচ্ছতাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। দুই. ওই ব্যাংকের বড় গ্রাহক কারা, তা দেখতে পারেন। যেমন কোন ব্যাংকের বড় গ্রাহক কারা, অর্থাৎ ব্যাংকটি আমানতের টাকা কাকে ঋণ দিচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজ নিন। ব্যাংকগুলো প্রতিবছর যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করে, সেখানে কয়েকজন শীর্ষ গ্রাহকের নাম ও ঋণের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। তিন. নিয়োগপ্রক্রিয়া ও পেশাদারত্ব কত আছে, তা বিবেচনায় আনতে পারে। যে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগপ্রক্রিয়া যত স্বচ্ছ, সেই ব্যাংক ততটা ভালো। কারণ, দিন শেষে ব্যাংকের কর্মকর্তারাই ব্যাংককে ভালো রাখতে পারেন। পাশাপাশি ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের পেশাদারত্বও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে আপনার জমানো টাকা নিরাপদ থাকতে পারে। এ ছাড়া ব্যাংকের নানা আর্থিক সূচক ও ভাবমূর্তিও বিবেচনায় নিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পদ আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই ‘মব কালচার’ বৃদ্ধি পাচ্ছে: রিজভী

প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই ‘মব কালচারের’ প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে নানাবিধ সামাজিক অপরাধের বিভিন্ন মাত্রার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই মব কালচারের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবৈধ কালো টাকা এবং গোপন অপতৎপরতার প্রভাবে মব কালচারের নামে সমাজে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে। আবার অন্যদিকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বার্থান্বেষী মহল বিএনপির নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই পরিকল্পিত অপপ্রচার, অপতৎপরতা, কৃত্রিমভাবে তৈরি সামাজিক অশান্তি গণতন্ত্রের পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং নির্বাচন পেছানোর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বলে জনগণ মনে করে। শেখ হাসিনার আমলে অদ্ভুত উন্নয়নের বয়ানের মতো এখন নির্বাচন পেছানো নিয়ে নানা ধরণের বয়ান দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দলের ভেতরে থেকে অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, অব্যাহতি প্রদান, পদ স্থগিত, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, দলের পক্ষ থেকে এমন চলমান সাংগঠনিক ব্যবস্থার বিষয়ে গণমাধ্যমে খুব একটা উল্লেখ করা হয়নি। উপরন্তু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা ভূমিকা রহস্যজনক। দলের পক্ষ থেকে বারবার অপরাধী ও বিশৃঙ্খলাকারিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও প্রশাসন নির্বিকার থাকছে। দুস্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দল থেকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও প্রশাসন কোন সহযোগিতা করছে না।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন খুব একটা সক্রিয় হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কলকাঠি নাড়ছেন বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সমাজ সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ বিপন্ন হয়ে পড়বে। প্রশাসনিক এই নিষ্ক্রিয়তার কারণে জনগণের এখন জীবনমরণের প্রশ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের স্থায়ী পুনরুজ্জীবন ও ঐতিহাসিক সার্থকতা নির্ভর করছে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তি ও স্থিতির ওপর। আর এ ক্ষেত্রে দক্ষ প্রশাসন খুবই জরুরি। কিন্তু আওয়ামী আমলের কালো টাকা ও তাদের দোসরদের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ তৎপরতার কারণে দুস্কৃতিকারিরা আশকারা পাচ্ছে এবং সমাজে নৈরাজ্য তৈরীর সম্ভাবনা সৃষ্টির আলামত দেখা যাচ্ছে।’’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার মূলমন্ত্র বুকে ধারণ করে এই দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্রের মূল নীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেই শত প্রতিকুলতা ও ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। স্বজাতির সব ধর্ম ও বর্ণের সজ্জন মানুষ ও বিভিন্ন শ্রণি-পেশায় যুক্ত ব্যক্তিরা এই দলের সদস্য হতে পারেন। সমাজবিরোধী কোন ব্যক্তি, দখলবাজ, চাঁদাবাজদের স্থান এই দল বরদাস্ত করে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু দল যখনই এ ধরনের ঘটনা অবহিত হয় তখনই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই গণতান্ত্রিক সংবিধান ও সুশাসনের জন্য আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এরজন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে এসেছে। এই দল মনে করে একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজে নেতৃস্থানীয় মানুষদের যোগ্যতা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ ও মানবিক গুণাবলী থাকা ব্যক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই উল্লিখিত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী শক্তির সমবেত ধ্বণীই হচ্ছে সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ