ট্রাম্পের ঘোষণায় মার্কিন শেয়ারবাজারে পতন
Published: 8th, July 2025 GMT
গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিগুলোর ভাষা ছিল কড়া ও সোজাসাপটা। সেটা হলো, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের ওপর নতুন করে আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
এই ঘোষণার প্রভাব পড়ে যায় বিশ্ববাজারে। নিউইয়র্কের প্রধান পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের পতন দেখা দেয়। ডাও সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট। নাসডাক সূচক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৯২ এবং শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে যায়। এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে পতন হলেও আজ মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোতে চাঙাভাব দেখা গেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পতনের পেছনে কেবল শুল্ক নয়, বরং আছে গভীর অনিশ্চয়তার প্রভাব। ট্রাম্পের ‘শুল্ক চিঠি’ ও তার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কারণে এই পরিস্থিতি ঘনীভূত হয়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকমের মতো বড় বড় কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত পড়ে যায়। কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে ৭ শতাংশ পর্যন্ত। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে পরিচালিত বিভিন্ন দেশের শেয়ারভিত্তিক তহবিলের মূল্যও ২ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় শেয়ারবাজারে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের মূল্য কমে গেছে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। বন্ডের সুদের হার ও মূল্য সাধারণত বিপরীতমুখী, অর্থাৎ বন্ডের সুদহার বাড়লে মূল্য কমে যায়।
অন্যদিকে ইউএস ডলার ইনডেক্স বা ডলার সূচকের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ড—সব মুদ্রাই ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে উত্থান দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, শুল্ক নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল, তার সবচেয়ে খারাপ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ট্রাম্পের নিজস্ব সিদ্ধান্তে বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমা (৯ জুলাই) যত ঘনিয়ে আসছে, ওয়াল স্ট্রিট ততই সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী হচ্ছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেফরিসে ইউরোপের প্রধান কৌশলবিদ ও অর্থনীতিবিদ মোহিত কুমার এক নোটে বলেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে না। এই সময়সীমার কারণে স্বল্পমেয়াদে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। যে চিঠিগুলো পাঠানো হবে, তা অন্যান্য দেশকে দ্রুত চুক্তিতে আসতে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে। তাঁর আশা, আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও বেশ কিছু বাণিজ্য চুক্তি সই হবে। মোহিত কুমার আরও বলেন, দাম কমে যাওয়া শেয়ার কেনার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসবে, ততই স্পষ্টতা আসবে এবং শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের আশা, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক ঘোষণা আসবে। কিন্তু চুক্তি না হলে শুল্কহার আগস্ট মাস থেকে বাড়বে। প্ল্যান্ট মোরান ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজারের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জিম বেয়ার্ড বলেন, সময় খুবই অস্থির, কখন কী হবে, তা বোঝা মুশকিল।
শেয়ারবাজার নিয়ে অবশ্য নানা মত আছে। অনেক বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা, শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হবে। কিন্তু অন্যরা আবার সতর্ক, বাজারে কিছুটা আত্মতুষ্টি দেখা যাচ্ছে। ওয়েলস ফারগো ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউটের বিশ্ববাজার কৌশলবিদ স্কট রেন এক নোটে বলেন, তিনি মনে করেন ওয়াল স্ট্রিট শুল্ক পরিস্থিতি নিয়ে ‘অতিমাত্রায় আশাবাদী।’
রেন আরও বলেন, ‘শুল্কহার নির্ধারিত হলে অর্থনীতি ধীরে ধীরে মন্দার দিকে যেতে পারে, এর প্রভাব পড়বে ভোক্তা ব্যয়ে। তিনি বলেন, শেয়ারের দাম কিছুটা বেশি। অতিমূল্যায়ন হচ্ছে। বিশেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ছোট কোম্পানির শেয়ার ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর ভোক্তাবিষয়ক খাতগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন; সম্প্রতি এসব খাতের শেয়ার বাজারে ভালোই করেছে।
অনিশ্চয়তা কাল হচ্ছেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের খেয়ালিপনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বছর ডলারের মান ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়েছে এবার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন ধীরে ধীরে ডলার ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সম্পদের বিকল্প খুঁজছেন। যদিও দীর্ঘদিন বৈশ্বিক বিনিয়োগের নিরাপদ গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে শুল্কের নীতি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়কতা। মানুষ এতকাল মনে করত, মার্কিন অর্থনীতি ‘ব্যতিক্রমধর্মী’, কিন্তু এখন সেই ব্যতিক্রমধর্মিতা হারিয়ে যাচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ট্রাম্প যে আচরণ করছেন, তাতে পরিস্থিতির অবনতিই ঘটছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। সেই সঙ্গে গত ২ এপ্রিলের আরোপিত শুল্ক কার্যকর হলে মন্দা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র বন ড র স দ শ য় রব জ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য পিএসসির যত নির্দেশনা
আগামী শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার আসনব্যবস্থা, সময়সূচি ও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।
পিএসসি জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএসে অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৪৭তম বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে (ক্যাডার ও নন–ক্যাডার মিলিয়ে) নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিসিএসে কিছু নতুন পদ যুক্ত হয়েছে।
সময়সূচি ও কেন্দ্র১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ৮টি। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
আরও পড়ুনইউনিমেট-শাবানা মাহমুদ-দেখার হাওর-বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর-কী, জেনে নিন১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরীক্ষার্থীদের করণীয়১। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটের পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের হলের নাম ও কক্ষ নম্বর আগেই মেসেজের মাধ্যমে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে প্রেরণ করা হবে।
২। সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র বিতরণ করা হবে। উত্তরপত্রের ৪টি সেট থাকবে, যেমন সেট # ১, ২, ৩ ও ৪। সকাল ১০টায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৩। পরীক্ষাকেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক কার্ড/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গহনা ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্ণিত নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৪। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৫। পরীক্ষায় মোট ২০০টি এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা হবে।
আরও পড়ুন৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসই আসল প্রস্তুতি১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৬। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য শ্রুতলেখকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্র ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএসের প্রশাসনে প্রথম শানিরুলকে ভাইভায় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল ২৯ মে ২০২৪