Samakal:
2025-11-03@03:35:04 GMT

শুভমানের দলটিই ভারতের সেরা!

Published: 8th, July 2025 GMT

শুভমানের দলটিই ভারতের সেরা!

১৯৬২ সাল থেকে এজবাস্টনে টেস্ট খেলা হচ্ছে। ভারত তথা এশীয় কোনো দলের সেই মাঠে টেস্ট জিততে লাগল ৬৩ বছর। রেকর্ড ৩৩৬ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরিয়েছে সফরকারীরা। স্মরণীয় সেই জয়ের পর ভারতের তরুণ অধিনায়ক শুভমান গিল দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড সফরে আসা ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে তাঁর দলটিই সেরা!

‘আমার প্রিয় সাংবাদিককে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি কোথায়? তাঁকে দেখতে চেয়েছিলাম.

..’– ম্যাচ শেষে এজবাস্টনের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসে হাসতে হাসতে এক সাংবাদিকের খোঁজ করেন শুভমান। খোঁজার কারণ হলো, দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে ওই সাংবাদিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানতে চান, এই মাঠে ভারত কখনও জেতেনি– এটি শুভমানের ওপর বাড়তি চাপ কিনা? 

সেদিন শুভমান বলেছিলেন, আলাদা কোনো চাপ নেই। আর পাঁচটা টেস্টের মতোই এখানে খেলবেন। রোববার জয়ের পর ওই সাংবাদিককে খুঁজে না পেলেও সেই প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেন ভারত অধিনায়ক, ‘টেস্ট শুরুর আগেও বলেছিলাম, আমি ইতিহাস বা পরিসংখ্যান নিয়ে বেশি ভাবি না। প্রায় ৬০ বছরে আমরা এখানে ৯টি টেস্ট খেলেছি। ভারতের বিভিন্ন দল এসেছে। আমার মতে, ইংল্যান্ড সফরে আসা ভারতীয় দলগুলোর মধ্যে আমাদের দলটাই সেরা।’ 

সিরিজ জেতার কথাও বলেছেন তিনি, ‘সিরিজ জেতার ক্ষমতা আমাদের আছে। যদি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিই ও লড়াই না ছাড়ি তাহলে মনে রাখার মতো একটা সিরিজ সমর্থকদের উপহার দেব।’

ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করে এ জয়ে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ অবদান অধিনায়ক শুভমান গিলের। তবে অবাক করেছেন ভারতীয় পেসাররা। জাসপ্রিত বুমরাহ এখানে খেলবেন না শুনে অনেকেই হায় হায় করে উঠেছিলেন। তার পরও ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট তুলতে সমস্যা হয়নি ভারতের। আকাশদীপ ১০টি ও সিরাজ ৭ উইকেট নিয়ে স্বাগতিক শিবিরে ধস নামান। 

এই বোলিং আক্রমণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুভমান, ‘জাসপ্রিত ভাই বিশ্বের সেরা বোলার। কিন্তু তাঁকে ছাড়াও আমাদের বোলিং প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই টেস্টই তার প্রমাণ।’ 

এজবাস্টনে ব্যাট হাতে শুভমান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৬১ রান। অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চান তিনি, ‘আমার মনে হয় অধিনায়কের উচিত সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। তাহলে যে কোনো পরিস্থিতিতে দলের অন্য ক্রিকেটারদের পরামর্শ বা নির্দেশ দেওয়া সহজ হয়। আপনি যদি নিজে ভালো খেলতে না পারেন, তাহলে অন্যকে ভালো খেলার কথা কীভাবে বলবেন? আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি।’ বৃহস্পতিবার থেকে লর্ডসে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ভমন গ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ