কক্সবাজারের চকরিয়ায় গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। প্রতিবছর গ্রীষ্মে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।
জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এ উপজেলার বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে গত তিন বছরে ১৮টি ইউনিয়নে সাত হাজার ২৯২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। এছাড়া বেসরকারি গভীর নলকূপ রয়েছে ৯ হাজার। এসবের মধ্যে বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। বিশেষ করে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সময় পর্যন্ত পানির এ সংকট তীব্র হয়। এলাকার লোকজন বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ে খাল, নদী-নালা ও পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করছেন এবং রান্নাবান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এ ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় স্থাপন করা অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। মাঝেমধ্যে কয়েকটি গভীর নলকূপে পানি উঠলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করছেন।
এ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাসপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা বেগমের (৬০) ভাষ্য, দৈনিক তাদের পরিবারে খাওয়াসহ ব্যবহারিক কাজে ১০ কলস পানির প্রয়োজন হয়। এর অর্ধেক পানি
সংগ্রহ করতেও ছুটতে হয় অন্তত দুই কিলোমিটার। একজনের ব্যক্তিগত গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। একসময় এমন অবস্থা ছিল না। বেশ কয়েক
বছর ধরে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। একই কথা বলেন এ এলাকার গিয়াস উদ্দিন।
বদরখালী ইউনিয়নের আজমনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল করিম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ বসানো হলেও চলতি মৌসুমে মোটর চালিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য পানি জুটলেও তা দিয়ে তিন থেকে চারশ ছাত্রছাত্রীর তৃষ্ণা মেটানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুতুবদিয়া পাড়ার জমিলা খাতুন (৬৫) জানান, এক কলস বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে অন্তত দুই কিলোমিটারে হাঁটতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হয় পুকুর ও জলাশয়ের পানি।
উপকূলীয় এলাকায় বিশুদ্ধ পানির আকাল চলছে জানিয়ে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাস্টার কায়কোবাদ বলেন, খাওয়ার পানির জন্য কয়েক মাইল দূরে গিয়ে বোম মোটরচালিত নলকূপ থেকে সংগ্রহ করা যায় স্বল্প পরিমাণ পানি। পুকুর ও ঢেমুশিয়া জলমহালের পানি দিয়ে গোসলসহ অন্যান্য কাজ সারতে হয়।
এ প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চকরিয়ার খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চকরিয়া পৌরসভা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বমুবিলছড়ি, বরইতলী, হারবাং, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিলসহ সবক’টি ইউনিয়নে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর অন্তত দুই ফুট করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম চালু রাখতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো বেশির ভাগ গভীর নলকূপ থেকে দিন-রাত পানি তুলতে থাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছ চাষের জন্য ফসলি জমি, পুকুর খনন করে সেখানেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও বিএডিসি সেচ কর্তৃপক্ষের নজরে না এনে গভীর নলকূপ বসিয়ে দিন-রাত পানি তোলা হচ্ছে। এতে গ্রামীণ জনপদে গভীর, অগভীর নলকূপ থেকে আগের মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাতের দাবি, অতীতে এমন পানির সংকট কখনও দেখা যায়নি। প্রতি মৌসুমে দীর্ঘদিন একটানা অনাবৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ নলকূপ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি তোলা যাচ্ছে না। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পাড়ার অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘপথ অতিক্রম করে পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করছে। এতে তারা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ের ছরাগুলোও অনেকটা শুকিয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নোনাপানি থাকলেও এসব পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। বেশির ভাগ এলাকার মানুষ খাবার পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন বিশুদ্ধ পানির উৎস ধ্বংসের ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি না করলে এ উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির সংকট আর তীব্র হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নলক প থ ক চকর য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হেফাজতে ইসলাম আড়াইহাজার উপজেলার কমিটি গঠন
আড়াইহাজারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ উপজেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক ইমাম ও খতিব মাওলানা কারী আবুল হোসেনকে সভাপতি, মাওলানা মাসরুর আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক ও মাওলানা ইসমাইল হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১১ টায় আড়াই হাজার পৌরসভার শিবপুর মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জেলা হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান এ কমিটির ঘোষণা দেন।
কমিটিতে উপজেলা সকল ইউনিয়ন থেকে আসা শূরার সদস্যগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করা হয়। বাকি সদস্যদের নাম পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঘোষণা করা হবে।
এ সময় উপজেলার ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।