যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী হিসেবে হয়তো চাঁদে পা রাখবেন রোজমেরি
Published: 16th, May 2025 GMT
রোজমেরি কুগানকে ঘিরে আছেন একদল মানুষ। তাঁরা তাঁকে মহাকাশযাত্রীর পোশাক পরিয়ে দিচ্ছেন। পুরো পোশাক পরাতে সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট। তারপর তাঁর মাথার ওপর সাবধানে একটা হেলমেট বসিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্যের এই মহাকাশচারী এখন তাঁর এযাবৎকালের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটি দিতে চলেছেন। আদৌ কি তিনি মহাকাশে হাঁটার জন্য প্রস্তুত? পরীক্ষাটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলাধারগুলোর একটিতে, যেটা ভরশূন্য ভাসমানতার এক পরীক্ষাগার—নাসার নিউট্রাল বয়ান্সি ল্যাবরেটরি। এটা যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে অবস্থিত।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের (আইএসএস) আসল আকারের একটি প্রতিরূপ রয়েছে ১২ মিটার (৪০ ফুট) গভীর এই জলাধারে। এখানে ‘মহাশূন্যে হাঁটার’ যে ধরনের অনুশীলন হয়, সেটি পৃথিবীতে বসে ভরশূন্যতার কাছাকাছি অভিজ্ঞতা।
পানিতে ডুব দেওয়ার আগে রোজমেরি বলেন, আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এমন ডুবে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘এটা শারীরিকভাবে ভীষণ কঠিন আর মানসিক দিক থেকেও দারুণ চাপের।’
তবে রোজমেরির মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগের ছাপ দেখা যাচ্ছে না। তিনি যে প্ল্যাটফর্মটিতে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা যখন ধীরে ধীরে পানির গভীরে নামতে শুরু করে, তখন তিনি হাসিমুখে হাত নাড়ছিলেন।
ড.
রোজমেরি বলেন, স্কুলের ক্যারিয়ারস ডে বা পেশা দিবসে সাধারণত মহাকাশচারীদের দেখা পাওয়া যায় না। এমন কারও দেখা মেলে না, যিনি বাস্তবে এটা করেছেন। তাঁদের গল্পগুলো শোনারও তেমন সুযোগ পাওয়া যায় না।
এসব ভেবে রোজমেরি তাঁর স্বপ্নের আশা ছেড়ে পড়াশোনা শুরু করলেন তারাদের নিয়ে। বেছে নিলেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক পদার্থবিদ্যা)। পরে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) মহাকাশ ভ্রমণের জন্য প্রার্থীর খোঁজে বিজ্ঞপ্তি দিলে রোজমেরি সেখানে আবেদন করেন এবং ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন।
ইএসএর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে রোজমেরিকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঠানো। ব্রিটিশ মহাকাশচারী হেলেন শার্মানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন রোজমেরি। তিনি ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মির স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন। এই তালিকায় আরও আছেন টিম পিক। তিনি ২০১৫ সালে আইএসএস–এ মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
রোজমেরি ছয় মাস ধরে জনসন স্পেস সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বিবিসিকে ল্যাবের মডিউলগুলো ঘুরে দেখান। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত। মহাকাশচারীরা এসব মডিউলে মাসের পর মাস থাকেন ভাবলে সেগুলো খুব আঁটসাঁট জায়গা বলে মনে হয়। তবে রোজমেরি এ সময় বিবিসিকে বাইরের অসাধারণ দৃশ্যপটের কথা মনে করিয়ে দেন।
‘এটা নিঃসঙ্গ এক পরিবেশ। তবে আমার মনে হয় এতে বাইরের জগতের সঙ্গে একটা মানসিক সংযোগ তৈরি হয়। আবদ্ধ, দম আটকানোর অনুভূতিও অনেকটা কমে যায়।’
প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির মহাকাশচারীদের সঙ্গে রোজমেরি কুগানউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মহাকাশে পাঠানো হলো আইসক্রিম
স্পেসএক্সের ফ্যালকন–৯ রকেটে করে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের (আইএসএস) উদ্দেশে রওনা হয়েছে নর্থরপ গ্রুম্যান কোম্পানির কার্গো মহাকাশযান ‘সিগনাস এক্সএল’। ১৪ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশনে মহাকাশযানে ৫ টনের বেশি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যন্ত্রাংশ, নাইট্রোজেন, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন গবেষণাসামগ্রী। মহাকাশচারীদের জন্য বিশেষ খাবার হিসেবে ক্ল্যামস, ওয়েস্টার্স, স্মোকড স্যামন, রোস্টেড টার্কি ও আইসক্রিম পাঠানো হয়েছে।
এই মিশন সিগনাস এক্সএলের প্রথম যাত্রা। পুরোনো সংস্করণের সিগনাসের চেয়ে প্রায় ১.৬ মিটার লম্বা ও ২ হাজার ৬০০ পাউন্ড বেশি মালামাল বহন করতে সক্ষম। ১৭ সেপ্টেম্বর সিগনাস এক্সএল মহাকাশ স্টেশনের রোবটিক বাহুর কাছে পৌঁছাবে। কার্গো মহাকাশযানটিতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, খাদ্য সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রয়েছে। এর মধ্যে স্টেশনের ইউরিন প্রসেসর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের প্রতিস্থাপন যন্ত্রাংশও অন্তর্ভুক্ত।
সিগনাস এক্সএল আগের রকেটের চেয়ে প্রায় ১.৬ মিটার লম্বা। নাসা ও নর্থরপ গ্রুম্যান এই অভিযানকে আইএসএসের সরবরাহ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। মহাকাশচারীদের দীর্ঘমেয়াদি মিশনে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ গবেষণার উপকরণ পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে কাজের অংশ হিসেবে এই মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া