দেশের ভোটারেরা ২০০ টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেন: হাসনাত
Published: 4th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আমাদের দেশের ভোটারেরাও ২০০ টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেন। আপনারা যদি, টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেন, তাহলে যোগ্য নেতা কোনোদিন আসবে না।”
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা শহরের ফকিরগঞ্জ বাজারে এনসিপির উপজেলা কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এ কথা বলেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “মনে রাখবেন, আপনি ভোট বিক্রি করবেন, তারা পাঁচ বছর ধরে আপনাকে নির্যাতন করবে। দয়া করে একদিনের আমানত খেয়ানত করবেন না।”
আরো পড়ুন:
আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু
টানলেই উঠছে কার্পেটিং, রাস্তায় নিম্নমানের কাজ বন্ধ করালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা পঞ্চগড়ে আসেন।
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
মহাপরিচালক নেই, চার মাস ধরে শিল্পচর্চায় ভাটা
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এর পর থেকে একাডেমিতে শিল্পচর্চায় কার্যত ভাটা পড়েছে।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ সরে দাঁড়ালেও অস্বস্তির বিষয়টি একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন পরিচালনা পরিষদের একাধিক সদস্য।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা পরিষদের ১২৫তম সভা হয়। এর পর সভা হয়নি। যদিও তিন মাস অন্তর এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী, পরিচালনা পরিষদ থেকে কর্মপরিকল্পনা তৈরি হয়ে আসার কথা। পরিষদই একাডেমির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবশেষ গত অক্টোবরে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদ
পুনর্গঠন করা হয়।
সর্বশেষ মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ একাডেমিকে চাঙ্গা করেছিলেন। গত ডিসেম্বরে সারাদেশে একযোগে জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, কাওয়ালি সন্ধ্যা, গণঅভ্যুত্থানের গান, আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ, সাপ্তাহিক বাহাস, ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জেলায় জেলায় শিল্পীদের জন্য গবেষণা বৃত্তি ঘোষণা ও প্রস্তাব আহ্বান, ৬৪ জেলায় জাতীয় নাট্যকর্মশালা, ভাওয়াইয়া গানের অনুষ্ঠান, রাজধানীর বাইরে নাট্য প্রদর্শনী, লোকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নতুন ওয়েব জার্নাল প্রকাশসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে শিল্পকলা একাডেমি।
অনুষ্ঠান আয়োজন কমেছে
ঢাকার অন্তত পাঁচটি নাট্যদলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেও তারা মিলনায়তন বরাদ্দ পাচ্ছেন না। জায়গা সংকটে তাদের নাটকের মঞ্চায়ন স্থগিত কিংবা তারিখ একের পর এক পেছাতে হচ্ছে।
তাড়ুয়ার এক নাট্যকর্মী জানান, গত এপ্রিলে নতুন নাট্যদল ‘তাড়ুয়া’ মঞ্চে আনে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ নাটক। টানা তিন দিনে চারটি প্রদর্শনী হয় এই নাটকের। এরিখ মারিয়া রেমার্কের যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটকের চারটি প্রদর্শনীতে দর্শকের উপস্থিতি ছিল বেশ। গত জুনের শেষের দিকে এ নাটকটির প্রদর্শনীর জন্য শিল্পকলার কাছে পাঁচ দিনের জন্য মিলনায়তন চেয়ে এক দিনও বরাদ্দ পায়নি নাট্যদলটি। সামনে বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে।
নাট্যদল ‘অনুস্বর’-এর সদস্য মাহফুজ সুমন বলেন, ‘নাট্যদলসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা করবে শিল্পকলা। তা না করে ইভেন্ট প্রতিষ্ঠানের মতো কিছু দায়সারা অনুষ্ঠান আয়োজন করে যাচ্ছে। মিলনায়তন সংকটে প্রদর্শনী করতে পারছে না নাট্যদলগুলো।’
সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের পর শিল্পকলা গেল ঈদে চাঁদরাতের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এপ্রিলে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে কনসার্ট, ড্রোন শো, সাধুমেলা, লোকনাট্যের আসর আয়োজন করা হয়। এর আগে মার্চে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানসহ কিছু আয়োজন ছিল। বর্তমানে জুলাই রেভল্যুশনকে উপজীব্য করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে মঞ্চনাটক।
হল বরাদ্দে কারসাজি
শিল্পকলার হল বরাদ্দ নিয়ে ‘সংরক্ষিত’ নামে কারসাজি চলছে। ঢাকাকেন্দ্রিক নাট্যদলগুলো বলছে, জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তনের বেশির ভাগ সময় ‘সংরক্ষিত’ করে নিজেদের অনুষ্ঠান করছে শিল্পকলা। মে মাসে পরীক্ষণ থিয়েটার হল ১১ দিন সংরক্ষিত ছিল। আর স্টুডিও থিয়েটার হল ২১ দিন সংরক্ষিত ছিল। জুন মাসে ১৩ দিন স্টুডিও থিয়েটার হল সংরক্ষিত ছিল। গড়ে নাট্যদলগুলো হল ব্যবহার করতে পারছে ৭ থেকে ১২ দিন।
জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তন বরাদ্দ নীতিমালায় বলা আছে, স্টুডিও থিয়েটার হল প্রতি মাসে সাত দিন সংরক্ষণ করা যাবে। বাস্তবে তা গড়ে ১৫ থেকে ২০ দিনে পৌঁছে গেছে। এতে নাট্যচর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মত নাট্যকর্মীদের।
শিল্পকলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, ‘শিল্পকলা নিজের নামে মিলনায়তন বরাদ্দ রাখতেই পারে। কিন্তু তার যৌক্তিক ব্যাখ্যাও থাকতে হবে। শুধু সংরক্ষিত শব্দ লেখা দায়িত্বশীলতা নয়।’
পরিচালনা পরিষদে অসন্তোষ
দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকায় শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনা পরিষদে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। চলমান স্থবিরতা নিয়ে পরিষদের সদস্য অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক আজাদ আবুল কালাম সমকালকে বলেন, একাডেমির গঠন অনুযায়ী মহাপরিচালক হচ্ছেন প্রধান ব্যক্তি। প্রধান ব্যক্তি না থাকায় শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। সার্বিকভাবে একাডেমি পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ লোকের দরকার, তা নেই। দক্ষ লোকের সংখ্যা আরও কম। সংস্কারের যে আওয়াজ সর্বক্ষেত্রে উঠেছে, সেটার অন্তর্ভুক্ত শিল্পকলা একাডেমিও ছিল। কিন্তু এখানে সংস্কার বলতে কিছুই হয়নি। আগের মতো সবকিছু রয়ে গেছে। মাঝখান দিয়ে নানা ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে।
পরিষদের আরেক সদস্য ও লেখক আলতাফ পারভেজ খসড়া পদত্যাগপত্র তৈরি করে রেখেছেন জানিয়ে বলেন, ‘এটি আমাদের জাতীয় সংকটেরই একটা অংশ। মহাপরিচালক ও পরিচালকের পদত্যাগ দেখলে বোঝা যায়, কতটা ভালোভাবে চলছে শিল্পকলা একাডেমি। দীর্ঘদিন কেন, এক দিনের জন্যও এ রকম দায়িত্বের পদ খালি থাকা উচিত নয়। দেশে তো এমন সংকট নেই যে, এখানে দক্ষ পরিচালক-মহাপরিচালক পাওয়া যাবে না। এটি তাৎক্ষণিক সমাধান হওয়া উচিত।’
পরিষদের সভা বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (সচিব) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘গত পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সাব-কমিটির কাজ শেষ। প্রবিধানসহ কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে সময় লাগে বেশি, সে জন্য আমরা সঠিক সময়ে সভা করতে পারিনি। দ্রুত পরিষদের সভাপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাব।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সমকালকে বলেন, আমরা একটি আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি গঠনের পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করার কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য, সামগ্রিক সংস্কার। কেবল মহাপরিচালক নিযুক্ত করে আগের মতো একাডেমি পরিচালনা করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। নতুন মহাপরিচালক এমন একজন হবেন, যিনি পূর্ণ রূপান্তরের দায়িত্ব নিতে সক্ষম। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এরই মধ্যে কিছু মেধাবী ও দূরদর্শী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আগস্টের পর থেকে সবকিছু দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। আপাতত একাডেমির নিয়মিত কাজই চলছে।’