উত্তাল সাগরে ফেরি ও জাহাজ বন্ধ, ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্পিডবোট
Published: 4th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড–সন্দ্বীপ নৌপথে সাগর উত্তাল থাকায় আজ শুক্রবার ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্পিডবোট।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ সতর্কতা জারি থাকলে সন্দ্বীপ চ্যানেলে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই নৌপথে স্পিডবোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে স্পিডবোট। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১৬ জুনও উত্তাল সাগরে একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনায় পড়ে।
আজ বিকেল সোয়া চারটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট কুমিরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তবে সাগর ছিল প্রচণ্ড উত্তাল। মাঝপথে স্পিডবোট দুটি সরাসরি কুমিরা ঘাটে না গিয়ে বাঁশবাড়িয়া এলাকায় এসে পৌঁছায়। পরে উপকূল ধরে কুমিরা ঘাটের দিকে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সাগরের ঢেউ এতটাই প্রবল ছিল যে স্পিডবোট দুটি গতিপথ হারিয়ে কুমিরার বদলে বাঁশবাড়িয়ায় এসে পড়ে। তবে স্পিডবোটগুলোর মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সতর্কতা সংকেত থাকাকালে স্পিডবোট, ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্পিডবোট চলাচলে মৌসুমি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) উপমহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর নূর তুষার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবহাওয়া অফিস ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করলে আমরা ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ চালাই না। আজও সব ধরনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ