সতেরো বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান নোয়াখালীর হাফিজুর রহমান। আর দশজন অভিবাসীর মতোই সীমিত আয় দিয়ে প্রবাসজীবন শুরু করেন তিনি। ভাগ্য বদলের যাত্রা নতুন দিকে মোড় নেয় দ্রুতই। বছর দুয়েকের মাঝে ভাতিজা মাহমুদের সহায়তায় হাফিজুর গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি মুদি দোকান। দীর্ঘ ১৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর সেই দোকান আজ রূপ নিয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারশপে। উপমহাদেশীয় পণ্যের বড় সংগ্রহ থাকায় রিয়াদের বাংলাবাজারে অবস্থিত সুপারশপটি এরই মধ্যে বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি অভিবাসীদের একটি পছন্দের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। 
ব্যবসা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাফিজুর লক্ষ্য করেন সৌদিতে বাংলাদেশি অনেক পণ্যের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল। তাই পর্যাপ্ত উপমহাদেশীয় ক্রেতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর দোকানের তাক ভর্তি থাকত সৌদি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি পণ্যে। 
বড় বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সৌদির বাজারে প্রবেশের আগে এটিই ছিল রিয়াদের এফএমসিজি বা ভোগ্যপণ্যের বাজারের চিত্র। সময়ের সঙ্গে শুধু বাংলাদেশের বড় কোম্পানিগুলোই এই বাজারে জায়গা করে নিতে পেরেছে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য চাহিদা সত্ত্বেও অনেকটাই অনুপস্থিত। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে হাফিজুর দেখতে পান রপ্তানিতে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও জটিল রপ্তানি অবকাঠামোই এর পেছনে দায়ী। 
এসব সমস্যা হাফিজুর আরও প্রকটভাবে অনুভব করেন যখন তিনি নিজেই বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে মুড়ি রপ্তানি করতে যান। রপ্তানি প্রক্রিয়ায় পদে পদে হোঁচট খেতে হয় তাঁকে। এলসি খোলা, বন্দরের কার্যক্রম, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সবকিছুই তাঁর কাছে এক দুর্বোধ্য জটিল প্রক্রিয়া বলে মনে হয়। হতাশ হয়ে পড়েন হাফিজুর। গল্পের মোড় ঘুরে যায় যখন হাফিজুর পরিচিত হন বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) সাপ্লাই চেইন প্ল্যাটফর্ম শপআপের সঙ্গে। মূলত বাংলাদেশের ভেতরে খাদ্যপণ্য, মুদি সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে থাকলেও নিজেদের সরবরাহ সক্ষমতা সম্প্রতি দেশের সীমানার বাইরেও বিস্তৃত করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি আরবভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন ফার্ম ‘সারি’ শপআপের সঙ্গে একীভূত হয়ে গঠন করেছে সিল্ক, যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল। শপআপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ চ্যানেল ব্যবহার করে অনেক বাংলাদেশি পণ্যই এখন পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি সৌদির বিভিন্ন দোকানে।
এ সুযোগ লুফে নেন হাফিজুর। শপআপের নতুন চ্যানেল ব্যবহার করে এলসিসহ অন্যান্য কাস্টমস ও রপ্তানিসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াই বিগত রমজানে ছয় কনটেইনার বোঝাই সাড়ে ১৯ টন মুড়ি সৌদি আরবে পৌঁছাতে সক্ষম হন তিনি। নোয়াখালী থেকে সংগৃহীত মুড়ি ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিং করেন বড় ছেলে ‘আনাস’-এর নামে। সৌভাগ্যক্রমে খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁর মুড়ি। নিজের শপ ছাড়াও রিয়াদের অন্যান্য সুপারশপ ও মুদি দোকানেও শুরু করেন সরবরাহ। 
হাফিজুর বলেন, ‘সৌদির বাজারে সব সময়ই বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা ছিল, কারণ এখানে প্রচুর বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। আমাদের মুড়ি এখানে জনপ্রিয় হয়েছে। আমি ভবিষ্যতে আরও পণ্য আনব যেন আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা এখানে বসে দেশের স্বাদ পেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘যখন প্রথম রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করি, কিছুই বুঝতাম না। অনেক হতাশ ছিলাম। শপআপ পুরো প্রক্রিয়া খুব সহজ করে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমার মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ীর উপকার হবে এই সেবায়।’
মুড়ি বিক্রি করে জনপ্রিয়তা পেলেও এখন কেবল মুড়িতে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না হাফিজুর। বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক ও মৌসুমি নানান পণ্য যেমন– পানপাতা, খেজুরের গুড়, দেশি ফল ইত্যাদিও সৌদির বাজারে আনতে চান তিনি। প্রবাসীদের মাঝে এসব পণ্যের চাহিদা থাকলেও পচনশীল হওয়ার কারণে এতদিন সেভাবে সৌদির বাজারে পৌঁছতে পারেনি। সারির আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক এখন সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাফিজুরকে।
হাফিজুরের এ সফলতা শুধু বাংলাদেশি পণ্য মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেনি, পাশাপাশি বিশ্ববাজারে আমাদের দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে উন্মোচন করেছে এক নতুন দিগন্ত। দেশের মাটিতে ফলানো কৃষকের কষ্টের ফসল যখন বিদেশের মাটিতে প্রবাসীর মুখে হাসি ফোটায়, তখন তা ব্যবসা ছাপিয়ে হয়ে ওঠে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি পণ্যের গর্বিত পথচলার গল্প।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শপআপ র সরবর হ প রক র প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে,  ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে,  একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খান
  • রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
  • যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
  • বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
  • এক ছাতার নিচে ৪৮ ব্র্যান্ডের ফার্নিচার, ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়
  • ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
  • নবম-দশম শ্রেণির সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছাপাবে সরকার
  • কুষ্টিয়ায় দুই দিনে ১৪ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ
  • পুতিন যুদ্ধ না থামালে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন ট্রাম্প