দেশের বাইরে বসবাসকারী প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, যুক্তরাজ্য। আজ শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় তারা।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নাজির আহমদ। নব্বইয়ের দশকে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের রাজনীতিবিদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও কোনো রাজনৈতিক দল কেন এই অধিকার নিশ্চিত করেনি, সেটা আমাদের জানা নেই।’

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বীকৃত ‘লাইফ লাইন’ বলে মন্তব্য করেন নাজির আহমেদ। তিনি বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সর্বশেষে প্রবাসীরা গত বছর ৫ আগস্টের আগে মাসব্যাপী রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে পতিত সরকারের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় অন্তর্বর্তী সরকার ‘রিজার্ভে হাত না দিয়েই’ বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে দাবি করে নাজির আহমদ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে শুধু প্রয়োজন, সত্যিকারের সদিচ্ছা ও যথাযথ প্রতিশ্রুতি। এই কাজ বাস্তবায়নে দেশে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব থাকলে সরকার পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা তাঁদের নিজ দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন উল্লেখ করে নাজির আহমদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারই পারে প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে। বিগত ৫৪ বছর ধরে অসম্পন্ন থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই দাবি পূরণের এখনই উপযুক্ত সময়।’

এ সময় আয়োজকেরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান তৎপরতা, দ্রুত সময় ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে রিটার্নিং অথবা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করে প্রয়োজনীয় বুথ সরবরাহ করে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ পাঁচটি দাবি উপস্থাপন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আইনজীবী মো.

মোজাক্কির হোসাইন, প্রবাসী ইকবাল হোসাইন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স দ র ন শ চ ত কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বর্ণিল আয়োজনে ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল, হোস্টেল ও প্রশাসনিক ভবন থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সম্মুখের পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন এবং কেক কাটা হয়। টিএসসি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।  

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন, টিএসসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়। 

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, সভ্যতা গঠনের শিকড় ও স্বাধীনতার জাগরণ গাথা।

অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এটির অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য। এখানে ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু– সবাই পেয়েছেন সমান মর্যাদা। এখানে প্রতিটি কণ্ঠের রয়েছে মূল্য, প্রতিটি স্বপ্নের রয়েছে ছুঁয়ে দেখার অধিকার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মই হয়েছিল বৈষম্য দূরীকরণের তাগিদে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ শিক্ষার্থী নিয়ে। আজ সেই প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং শিক্ষক আছেন প্রায় দুই হাজার। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ২০০টি প্রতিষ্ঠান। এতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নেও আমরা দায়বদ্ধ। যারা গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারা আমাদের কাঁধে কিছু দায়িত্ব রেখে গেছেন। সেই দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার বন্ধন অটুট রাখা।

উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা কখনও শুধু একাডেমিক পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ এবং ১৯৯০-এর প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ইতিহাসে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রেখেছে বলেই প্রতিটি ক্রান্তিকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকে সাড়া দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত ও উদ্দীপনামূলক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংগীত পরিবেশিত হয়। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদ্রাসায় তালা দিয়ে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় শিক্ষকরা
  • মসজিদের মোতাওয়াল্লি নিয়োগ নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫০
  • মাদ্রাসা তালাবদ্ধ করে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
  • বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, তিন চালক গ্রেপ্তার
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল অনিবার্য এক রাজনৈতিক বিস্ফোরণ
  • উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত’ করতে হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিচারের দাবিতে বিএনপির ঝাড়ুমিছিল
  • হবিগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ২
  • বর্ণিল আয়োজনে ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন