আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ইউকে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউকে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রবাস থেকে যেন ভোট দিতে পারেন, এটা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অতীতের কোনো সরকারই এ দাবি পূরণে সত্যিকার আন্তরিকতা দেখায়নি। বিগত ৫৪ বছর শুধু মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ভোটের অধিকার তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এবার যদি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আর কখনও হয়ত করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন। সভা-সমাবেশ করেছেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে সরকারের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল। সুতরাং এমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদের অবহেলা করার কোনও সুযোগ নেই। তাদের ন্যায্য ভোটাধিকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই দিতে হবে।

দাবি তুলে ধরে প্রবাসী এই নেতা বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান তৎপরতা দেখতে চাই। প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কাজ শিগগিরই শুরু হয়েছে দেখতে চাই। প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড প্রদানের পর ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে গেলে আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন না। তাই ভোটার তালিকা প্রস্তুতি সহজতর করা দরকার। বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ফরেন পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার্ড স্টাম্প, জন্ম সনদ, এসএসসি সার্টিফিকেটসহ যেকোনো পাবলিক ডকুমেন্টে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দেখায়- তা দেখিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করা দরকার।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা হচ্ছেন আসল স্টেকহোল্ডার। তাই তাদের পরামর্শ ও প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে হবে। এর পাশাপাশি ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে রিটার্নিং অথবা প্রিজাইডিং অফিসার নিযুক্ত করে প্রয়োজনীয় বুথ সরবরাহ করে ফিজিক্যাল ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স প রব স দ র ভ ট ন শ চ ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

অম্লান স্লোগান

২০২৪ সালের জুন মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে শিগগিরই পথশিশু থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত, রিকশাচালক থেকে করপোরেট পেশাজীবী– সকল শ্রেণিপেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ সংযুক্ত হয়। আন্দোলন রূপ নেয় বহু বছরের শোষণ, নিপীড়ন আর অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তির পথ হিসেবে। দেশের মেধাবীদের মেধার প্রকাশ ঘটেছে আন্দোলনে ব্যবহার করা বিভিন্ন শব্দ, স্লোগান, টার্মের মাধ্যমে। সেটি যেমন ছিল নতুনত্বে ভরা, তেমনি আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধুর।

জুলাই মাসের এই আন্দোলনকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ ছিল ১৪ জুলাই রাত পর্যন্ত, যা ছিল শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলন। সেখানে ব্যবহৃত স্লোগানগুলোও ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। প্রথম পর্যায়ে ব্যবহৃত স্লোগানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘কোটা না মেধা? মেধা, মেধা’ ইত্যাদি। স্লোগান ও কর্মসূচির ঘোষণা আসত আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সম্মিলিত আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী দিনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিত। তাৎপর্যপূর্ণ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার, রিচ বাড়ানোর জন্য একটি ক্যাপশন ব্যবহার করে ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা, যেন তা অ্যালগরিদমে আটকে না যায়– এমন আরও চমৎকার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয় আন্দোলনকে বেগবান ও সফল করতে।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশবাসী পরিচিত হয় নতুন একটি শব্দের সঙ্গে–‘বাংলা ব্লকেড’। ৭ জুলাই দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ করে এই কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা নিয়ে করা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে!’ সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে স্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
পরদিন ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আরও কিছু স্লোগান যুক্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’।

১৬ জুলাই থেকে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু হয়। সেদিন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, চট্টগ্রামের ওয়াসীম আকরামসহ পাঁচজন শহীদ হন। এ সময় দেশবাসী পরিচিত হয় আরেকটি শব্দ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর সঙ্গে। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা-খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ ১৮ জুলাই থেকে এই কর্মসূচি পালন করেন  আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কমপ্লিট শাটডাউন বলতে তারা ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ বুঝিয়েছেন। এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যুক্ত হয়। 

১৮ জুলাই শহীদ হন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ। এরপর আন্দোলনের রূপ পালটে যেতে শুরু করে দ্রুত। পাল্টানো হয় কর্মসূচি ও স্লোগান– ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘সাঈদ, ওয়াসীম, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘আসছে ফাগুন, আমরা হবো বহুগুণ’; ‘শোন মহাজন, আমরা অনেকজন’; ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ’; ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার’।
গণঅভ্যুত্থানের পথে এগিয়ে চলা আন্দোলনে যুগান্তকারী স্লোগানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল– ‘ক্ষমতা না জনতা? জনতা, জনতা’; ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম’; ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ’; ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। এমন বহু প্রতিবাদী ও শিহরণ জাগানো স্লোগানে গর্জে উঠে বাংলাদেশ। দেশের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা–সর্বত্র চলে এই স্লোগান।

এ সময় ‘ফ্ল্যাশ প্রটেস্ট’ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম– অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ সংগঠিত হয়ে একত্র হওয়া বোঝাতে এটি ব্যবহার করা হতো। মূলত পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে বার্তা পৌঁছানোর জন্য এই টার্ম ব্যবহার করা হতো। কিছু জায়গা, নাম, সময়কে সাংকেতিক ভাষায় বলা হতো। যেমন– ভোর ৬টা মানে ‘মার্চ টাইম’, ‘গার্ডেন’ বলতে গণভবন। এভাবে কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করা হতো। এসব স্লোগান এবং টার্মের নির্ধারণ হতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রয়াসেই।
জেনারেশন জেড ট্রল করতে ভালোবাসে। তারা বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্মক শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ‘নাটক কম করো পিও’; তথ্যমন্ত্রীকে ‘তথ্যগুপ্তি মন্ত্রী’ ইত্যাদি।
আন্দোলনে আরেকটা বড় দিক ছিল ‘রক্তাক্ত জুলাই’কে শেষ হতে না দেওয়া। ৩১ জুলাইয়ের পর গণনায় আগস্ট আসেনি, এসেছে ৩২ জুলাই। সব দাবি একদফা মিলিত হতে থাকে; সেই সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন স্লোগানও– ‘দফা এক, দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ’; ‘দফা এক, দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ’; ‘এক দুই তিন চার, খুনি হাসিনা গদি ছাড়’; ‘লাশের বুকে জীবন দে, নাইলে গদি ছাইড়া দে’। 
পরবর্তীকালে লং মার্চ টু গণভবন (ফাতেহ-ই-গণভবন) ঘোষিত হয়। ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন। সেদিন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় ঢাকাসহ সারাদেশ। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ