প্রবাসীর টাকা, গ্রামবাসীর শ্রমে ৩ কিমি রাস্তা সংস্কার
Published: 4th, July 2025 GMT
হবিগঞ্জের বাহুবলে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন মিরপুর ইউনিয়নের পূর্ব লাকুড়িপাড়া গ্রামবাসী। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রাস্তাটি মেরামতে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। প্রতিকার না পেয়ে স্থানীয় প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতায় নিজেরাই সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ভূগলি থেকে পূর্ব লাকুড়িপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ফদ্রখলা, রাউদাগাঁও, দত্তপাড়া, নোয়াগাঁও, লাকুড়িপাড়াসহ ৬-৭টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। রাস্তাটি কয়েক বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে হাঁটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। কাদাপানিতে পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্কদের চলাফেরায় বেশি ভোগান্তি হতো।
রাস্তাটি সংস্কারের বিষয় নিয়ে এলাকার প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন গ্রামবাসী। কয়েকজন প্রবাসী অর্থ সহায়তা পাঠালে এলাকার যুবকেরা স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার সকালে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রথম দিনে রাস্তাটির চার ভাগের এক ভাগ সংস্কার করা হয়েছে।
পূর্ব লাকুড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জুবাইদ মিয়া জানান, রাস্তাটি সংস্কারে তারা বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কোনো কাজ হয়নি। গ্রামের প্রবাসীদের সহায়তায় রাস্তাটির সংস্কার শুরু হয়েছে। রাস্তাটি এবার অন্তত চলাচলের উপযোগী হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
স্থানীয় অটোরিকশাচালক আয়াত আলী জানান, ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ির ক্ষতি হয়। ঝাঁকুনির পাশাপাশি সময়ও বেশি লাগে। এ কারণে যাত্রীরা বেশি টাকা দিতে চাইলেও এই সড়কে যেতে মন চায় না। তারা চান রাস্তাটি স্থায়ীভাবে পাকা করা হোক।
রজবুন্নেছা নামে একজন বাসিন্দা বলেন, গ্রামের কোনো রোগী নিয়ে জরুরিভাবে হাসপাতালে যেতে চাইলে ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে সম্ভব হয় না। কোনো ধরনের যানবাহন মেলে না। চালকেরা কেউ রাজি হলেও অনেক বেশি ভাড়া দাবি করেন।
মাহি নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, বৃষ্টি হলে রাস্তায় চলাচল করা যায় না, শার্ট-প্যান্ট ময়লায় নষ্ট হয়।
প্রবাসীর অর্থায়ন ও গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের সার্ভেয়ার উজ্জ্বল মণ্ডল জানান, রাস্তাটি সংস্কারে টেন্ডার হয়েছিল। ঠিকাদারের মৃত্যুর কারণে তা বাতিল হয়েছে। ফের টেন্ডারের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
বাহুবলের ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রবাসীরা যেভাবে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছেন, তা সত্যিই অনুকরণীয়। রাস্তাটি শিগগিরই পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে অব্যবহৃত বোমা ফেলা হতো গাজায়
ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেওয়া ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো অব্যবহৃত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র অবতরণের আগে গাজায় নিক্ষেপ করত। দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম প্রহর থেকেই তেল আবিবে ফেরার পথে অবশিষ্ট গোলাবারুদ হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পাইলটরা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) কমান্ডারদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। তারা যুদ্ধবিমানগুলোর অবশিষ্ট লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন গাজাকে। এ কারণে ইরানের সঙ্গে যে ১২ দিনের লড়াই চলাকালে গাজায়ও ব্যাপক বিমান হামলা ও প্রাণহানি ঘটে।
সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমা ফেলার বিষয়টিকে আবারও সামনে এনেছে। এসব বোমায় নিহত প্রায় সবাই বেসামরিক নাগরিক; বিশেষ করে নারী ও শিশু।
আইডিএফের মূল লক্ষ্য ইরানে স্থানান্তরিত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় তার বিমান হামলার তীব্রতা অনেকাংশে বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে পরিকল্পনা থাকলেও এসব হামলা যথাযথভাবে পরিকল্পিত ছিল না; এগুলো ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’তেও আঘাত হানেনি।
গত ১৪ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ পরিচালনা করে ইসরায়েল। এ সময় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি তেহরানেই নিবদ্ধ ছিল। তবে সময়টি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্যও ছিল তীব্র রক্তক্ষয়ী। তখন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতেও ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সামগ্রিকভাবে ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রে গুলিবর্ষণসহ বিমান হামলায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা শত শত।
গত ১৮ জুন বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে আইডিএফ বিমান হামলায় এক নারী ও তাঁর শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আল-আত্তারের একটি তাঁবুযুক্ত এলাকায় খান ইউনিসে একই দিনে একটি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, আইএএফ কমান্ডার মেজর জেনারেল তোমের বার গোলাবারুদ অবশিষ্ট আছে– এমনটা জানতে পেরে তা ব্যাপকভাবে গাজায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৬১৩ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা, জানাল জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ৬১৩ জনকে হত্যা করেছে। জিএইচএফের বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্র এবং এর ‘মানবিক’ কনভয়ের কাছাকাছি অথবা উভয় স্থানেই ক্ষুধার্ত এ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়। এ পরিসংখ্যান গত ২৭ জুন পর্যন্ত। এরপর আরও ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানায়, মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জনেরও বেশি। আর ৪ হাজার জনের বেশি আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের বারণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে গাজায় গত মে মাসের শেষ দিকে অস্ত্র হাতে ত্রাণ বিরতণ শুরু করে জিএইচএফ। জাতিসংঘ বলছে, যে প্রক্রিয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিরপেক্ষ নয়। আর মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ পদক্ষেপকে ‘মানুষ হত্যার কসাইখানা’ বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়ে আসছে।
গাজার একজন বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, তারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রমাণ রেকর্ড করেছেন। এ কেন্দ্রগুলোতে ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। কিছু ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের স্নাইপাররা গুলি করে। অন্যরা সাহায্যপ্রার্থী পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়।
আরও ১৩৮ জন নিহত
গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েল বাহিনীর হামলায় আরও ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫২ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস, আল-মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় অস্থায়ী তাঁবুতে ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় ১৫ জন নিহত হন। এক সময় ইসরায়েল কর্তৃক এটাকে তথাকথিত ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছিল। এখন সেই ‘নিরাপদ অঞ্চলকেই’ সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ করে তুলেছে তারা।
হামলায় ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা নিহত
মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৫৭ হাজার ২৬৮ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫-এর বেশি। গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা মুহান্নাদ ফাদল আল-লেই নিহত হন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে মধ্য গাজার আল মুগাজি শরণার্থী শিবিরে হামলায় তিনি আহত হন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। এ নিয়ে ইসরায়েল ২৬৫ ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করল।
যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করছেন হামাস নেতা
চলমান পরিস্থিতিতে হামাস নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবিত চুক্তি বিবেচনা করছেন। একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন গতকাল শুক্রবার জানায়, হামাস নেতারা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছেন। তবে তারা আরও দৃঢ় নিশ্চয়তা চান যে, এ যুদ্ধবিরতি ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটাবে।
হামাস কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন। পরে এক বিবৃতি জারি করে নিশ্চিত করেন যে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া ঘোষণার আগে অন্য ‘ফিলিস্তিনি দলগুলোর’ সঙ্গে কথা বলছেন।
মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তীব্র মানবিক সংকট আরও খারাপ হয়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি মেনে নিয়েছে।
ইসরায়েলের আরেক সেনা নিহত
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় তাদের আরেক সেনা নিহত হয়েছেন। আসাফ জামির নামে ১৯ বছর বয়সী ওই সেনা সদস্য দক্ষিণ গাজায় নিহত হন। আহত হয়েছেন দু’জন। আলজাজিরা জানায়, গাজায় এ পর্যন্ত ৮৮০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত হন ৩২০ জন।