মাদ্রাসা তালাবদ্ধ করে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
Published: 4th, July 2025 GMT
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে মাদ্রাসা তালাবদ্ধ রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীর পথসভায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী কলাগাঁও জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয়ভাবে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বাদাঘাট বাজারে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী পথসভা ও গণসংযোগ ছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান। তিনি জামায়াতের জেলা আমিরও। এই সভা সফল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা আসেন। বেলা ১১টার দিকে কলাগাঁও জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশস্থলে আসেন।
অভিযোগ উঠেছে, মাদ্রাসার চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে, মাদ্রাসা তালাবদ্ধ রেখে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাদাঘাট বাজারের জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী পথসভায় অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে, এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানান। ওইদিন মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির বাংলা, অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান এবং দশম শ্রেণির আরবি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল বলে দাবি করেন প্রতিবাদকারীরা।
কলাগাঁও গ্রামের আজহার ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ছিল। মাদ্রাসার সুপার শিক্ষার্থীদের চলমান পরীক্ষা না নিয়ে নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেন। এ সময় মাদ্রাসার দরজা তালাবদ্ধ রেখে যান তিনি। পরে কয়েকজন পরীক্ষার্থী তাদের বিষয়টি জানালে, গ্রামবাসীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা মাদ্রাসায় গিয়ে এর সত্যতা পান।
জঙ্গলবাড়ীর মোর্শেদ আলম সাদ্দাম বলেন, এই মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জামায়াতের স্থানীয় আমির। তিনি হয়তোবা তাঁর দলের কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেছেন।
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় কোনো বিষয়ে পরীক্ষা ছিল না। মাদ্রাসা বন্ধ ছিল কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের জেলা আমির ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী তোফায়েল আহমদ খান বললেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বাদাঘাটের সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের হাজারো কর্মী-সমর্থক, সুধী ও শুভাকাঙ্ক্ষী এসেছেন। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কে কীভাবে এসেছেন বিষয়টি জানেন না তিনি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বললেন, মাদ্রাসা বোর্ড আলাদা। বিষয়টি দেখভাল করে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি। এখানে তাদের কিছুই বলার থাকে না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম বললেন, খোঁজ নিয়ে যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী সাতজন। তারা আলাদা-আলাদা সভা সমাবেশ ও শোডাউন করছেন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমিরকে এ আসনে তাঁর সংগঠন ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ন মগঞ জ পথসভ য় পর ক ষ ইসল ম ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
যে সংবিধান মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেনি, সেটি জনগণের নয়: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান লাগবে। আওয়ামী লীগের সংবিধান, মুজিববাদের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। যে সংবিধান আমাদের অধিকার রক্ষা করতে পারে না, যে সংবিধান আমাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারে নাই, সে সংবিধান জনগণের সংবিধান না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এনসিপির জেলা শাখা আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচিত সরকার চাই। কিন্তু অবশ্যই গণ–অভ্যুত্থানে যারা হত্যা করেছে, সেই শেখ হাসিনার দোসরেরা বাংলাদেশের এলাকায় এলাকায় লুকিয়ে আছে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।’
পথসভায় উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নীলফামারীর শহীদ রুবেলের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম। তাঁকে দেখিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছেন, মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন, সেই গণ–অভ্যুত্থানে তাঁর সন্তান জীবন দিয়েছে। তার জীবন দানের মধ্য দিয়ে, তার রক্ত দেওয়ার মধ্য দিয়েই আমরা একটা স্বপ্নের কথা, একটা নতুন বাংলাদেশের কথা বলতে পারছি। শহীদ রুবেল সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত, গার্মেন্টসেও কাজ করত নিজের পড়াশোনার খরচ মেটানোর জন্য। সে খুব গরিব ঘরের সন্তান ছিল। সেই রুবেলের কোনো প্রয়োজন ছিল না রাস্তায় নামার। রুবেলের প্রয়োজন ছিল না পুলিশের বুলেটের সামনে যাওয়ার। ক্লাস সেভেনের একটা ছেলে রাস্তায় নামছিল, কেন নামছিল, আপনারা আপনাদের নিজেকে প্রশ্ন করেন, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন। সপ্তম শ্রেণির একটা ছেলে যদি রাস্তায় নেমে পুলিশের বুলেটের সামনে, সন্ত্রাসীদের বুলেটের সামনে সাহস করে দাঁড়াতে পারে, স্বৈরাচারকে হটাতে পারে, তাহলে আপনারা আমরা যারা জীবিত আছি, তারা কি একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব না?’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা, মেয়েরা শহীদ হলো, জীবন দিল, তাদের জীবন দানের বিনিময়ে হলেও আমাদের বাংলাদেশকে সুন্দর এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির নীলফামারী জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল মজিদ। পথসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।