চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিপইয়ার্ডে চোরাইপথে লাইটারেজ জাহাজ এনে কেটে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে অবৈধভাবে শতাধিক জাহাজ কেটেছে মো. হামিদের নেতৃত্ব সাত-আটজনের সিন্ডিকেট। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও প্রশাসন নির্বিকার। এতে পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত ইয়ার্ড মালিকরা। তাদের ভাষ্য, সরকারের ইজারা দেওয়া ইয়ার্ডে অবৈধভাবে জাহাজ কাটার কোনো সুযোগ নেই।
কয়েক বছর ধরে ডলার সংকট ও মন্দার প্রভাব পড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পে। আগে ১৫৫টি ইয়ার্ড থাকলেও ধুঁকে ধুঁকে এখন ৪০টিতে কার্যক্রম চলছে। তিন বছর ধরে হংকং কনভেনশনের শর্ত মেনে মাত্র ১২টি ইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তর হয়েছে। সেগুলোতে গত ২৬ জুন থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা হচ্ছে। বাকিগুলো হয় পরিত্যক্ত, নয় বন্ধ।
অভিযোগ উঠেছে, পরিত্যক্ত ও বন্ধ থাকা কয়েকটি ইয়ার্ডে চোরাইপথে লাইটারেজ জাহাজ এনে অবৈধভাবে কেটে লোহাগুলো বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। ছোট হওয়ায় পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই ইয়ার্ডে একটি করে জাহাজ কাটা হচ্ছে। এভাবে গত ছয় মাসে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ কেটেছে সিন্ডিকেট। জাহাজপ্রতি তাদের দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকে বলে জানিয়েছেন কাটার সঙ্গে জড়িতরা।
একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার জন্য ইয়ার্ডে আনার আগে শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পাঁচ দপ্তরের অনুমতি লাগে। কিন্তু সরকারি লিজের ইয়ার্ডগুলো অনুমতির ধার ধারছে না।
সরেজমিন পরিত্যক্ত শীতলপুর, সোনাইছড়ি ও মাদামবিবিরহাট এলাকার একাধিক ইয়ার্ডে চোরাইপথে আনা লাইটারেজ জাহাজ কাটতে দেখা যায়। ২০০ থেকে ৩০০ টনের জাহাজগুলো প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে। সোনাইছড়ির তেঁতুলতলায় পরিত্যক্ত রহমানিয়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গত বুধবার একটি লাইটারেজ জাহাজ কাটতে দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম জানান, গত বছরের মার্চে রহমানিয়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে পুলিশ অবৈধ মালপত্র জব্দ করেছিল। সে সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে পার পেয়েছিল। এখনও অবৈধ কার্যক্রম চলছে। শুধু রাজনৈতিক হাতবদল হয়েছে বলে জানান তিনি।
লাইটারেজ স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা চক্রের নেতৃত্বে থাকা মো.

হামিদের নম্বরে কল দিলে পরিচয় পেয়ে ফোনটি সহযোগী মো. নাছিরুজ্জামানকে ধরিয়ে দেন। নাছিরুজ্জামান কয়েকটি ছোট স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘লাইটারেজ জাহাজগুলো বাংলাদেশে তৈরি। এগুলো তৈরির সময়ই মালিকরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছেন। এ জন্য ইয়ার্ডে কাটার ক্ষেত্রে কোনো অনুমতির দরকার পড়ে না।’
ফেরদৌস স্টিল শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, পরিত্যক্ত ইয়ার্ডগুলোতে লাইটারেজ জাহাজ কেটে বিক্রি করা অবৈধ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সীতাকুণ্ডের ইউএনও ফখরুজ্জামান বলেন, ‘লিজের ইয়ার্ডে লাইটারেজ জাহাজ কীভাবে কাটা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। নিয়মের বাইরে কারও কিছু করার সুযোগ নেই।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইট র জ জ হ জ ক ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, কুওমোকে সমর্থন ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে আজ মঙ্গলবার। আগাম ভোট শুরু হয়েছে আগেই। নির্বাচনে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জরিপে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় তাকে ঠেকাতে ‍উঠেপড়ে লেগেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন করেছেন। 

মঙ্গবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

৬০ হাজার ৮০২ টন গম নিয়ে দেশে এল যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় জাহাজ 

আমি থাকাকালে তাইওয়ানে হামলার ‘পরিণতি কী হবে’ চীন জানে: ট্রাম্প

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউ ইয়র্ক বাসীদেরকে বামপন্থি প্রার্থী জোহরান মামদানিকে নির্বাচিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্প স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, “আপনি ব্যক্তিগতভাবে অ্যান্ড্রু কুওমোকে পছন্দ করুন বা না করুন, আপনার আসলে কোনো বিকল্প নেই। আপনাকে অবশ্যই তাকে ভোট দিতে হবে এবং আশা করি তিনি দুর্দান্ত কাজ করবেন। তিনি এটি করতে সক্ষম, মামদানি নন!”

নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্নরের প্রতি ট্রাম্পের এই সমর্থন বহুল আলোচিত মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে এসেছে।

এর আগে রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, মামদানি নির্বাচিত হলে তিনি তার শহর নিউ ইয়র্কে ফেডারেল তহবিল পাঠাতে অনিচ্ছুক হবেন।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ট্রাম্প বলেন, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউ ইয়র্কে প্রচুর অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে, কারণ যদি নিউ ইয়র্ক পরিচালনা করেন একজন কমিউনিস্ট, তাহলে আপনি কেবল সেখানে পাঠানো অর্থ নষ্ট করছেন।” 

উগান্ডায় জন্ম নেয়া নেয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা-বাবার সন্তান মামদানি একজন মুসলিম। 

জনমত জরিপে দেখা গেছে, মামদানি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত অ্যান্ড্রু কুওমোর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দীর্ঘদিনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কুওমো, ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানির কাছে হেরে যাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পিছিয়ে আছেন।

ট্রাম্প রিপাবলিকান হওয়া সত্ত্বেও দলীয় প্রার্থী স্লিওয়াকে সমর্থন করেননি।

ফেডারেল তহবিল সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “মামদানি নির্বাচিত হলে আমি ফেডারেল তহবিলে অবদান রাখার সম্ভাবনা খুবই কম।”

ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্য বা শহরগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ফেডারেল অনুদান কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। নিউ ইয়র্ক সিটি এই অর্থবছরে ফেডারেল তহবিলে ৭.৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে,  যা শহরের মোট ব্যয়ের প্রায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

তবে মামদানি জয়ী হলে এই সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
মামদানি ২৪ জুন প্রাইমারিতে এক অবিশ্বাস্য জয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের হতবাক করে দেন।

মামদানি তার প্রচারণার মাধ্যমে নিউ ইয়র্কবাসীদেরকে কুওমোর মতো প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছেন, কুওমো তিনবার নিউ ইয়র্কের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু ২০২১ সালে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি প্রতিবেদনের পর পদত্যাগ করেন।

নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্য সস্তায় খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান- এ তিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মামদানি। শনিবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফোন করেন মামদানিকে। জিতলে তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন ওবামা। মামদানির মুখপাত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ