নওগাঁর ছয়টি সংসদীয় আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বিএনপিতে দুই ডজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অনেকে এখনও নির্বাচনী প্রচারে না নামলেও ভেতরে-ভেতরে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিএনপির মধ্যে প্রার্থীজট রয়েছে।
জেলার ১১টি উপজেলায় সংসদীয় আসন ছয়টি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন ঘোষণার পর থেকেই জেলায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সরব হয়ে উঠেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা। সামাজিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, দরিদ্র সহায়তা, লিফলেট বিতরণসহ নানা কৌশলে ভোটারদের মন জয় করতে সক্রিয় তারা।
প্রতিটি আসনেই বিএনপির রয়েছে সামাজিক ও দলীয় বিভাজন। তবে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। নওগাঁর ছয় আসনেই তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি এখনও দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও সম্ভাব্য দু’ডজন প্রার্থী নিজেদের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে কয়েক মাস ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জোরেশোরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। মাঠ পর্যায়ে এই দুই দলের পাশাপাশি প্রচারের মাঠে আছে সিপিবি। জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি বা অন্য দলের তেমন উল্লেখযোগ্য প্রচার এ জেলায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন তিনজন। তারা হলেন–সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা.
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনে বিএনপির হয়ে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, সাবেক জেলা সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী। জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) আসনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট ও ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে বিএনপি নেতা পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি মাঠে সক্রিয়।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে মাঠে সরব বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মতিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. ইকরামুল বারী টিপু। শোনা যাচ্ছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী মনোনয়ন চাইতে পারেন। জামায়াতে ইসলাম এই আসনে জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিবকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে। সিপিবি থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক অধ্যাপক ডা. এসএম ফজলুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ-৫ (সদর) আসন জেলার কেন্দ্রস্থল। এ আসনে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সরব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু। এই আসনে দলের টিকিট পেতে চেষ্টা চালাবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন। এই আসনে জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি আ স ম সায়েমকে দল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এবি পার্টি থেকে কাজী আতিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রোজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী।
নওগাঁয় এ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি ও জামায়াতই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল পর্যায়ে এই দুই দল দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত সংগঠন ধরে রাখতে পেরেছে বলেই এত দ্রুত মাঠে নামতে পেরেছে। তবে জেলার ৬টি আসনের প্রতিটিতে জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে একাধিক গ্রুপিং রয়েছে। এছাড়া নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন কিংবা এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
জেলার রাজনীতি এখন মূলত বিএনপি ও জামায়াত ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও মাঠপর্যায়ের তৎপরতায় এই দুই দলের সক্রিয়তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে দৃশ্যমান। নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর যদি অন্য দলগুলো মাঠে নামে, তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জমে উঠবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা জামায়াতের আমির খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব বলেন, ‘জামায়াত সুসংগঠিত দল। এখানে গ্রুপিং লবিং এবং দলীয় বিভাজন নেই। অসাম্প্রদায়িক, নৈতিক সমাজ গড়তে সৎ, যোগ্য ও আদর্শ প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা তাদের হয়ে কাজ করবেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুবক্কর সিদ্দিক নান্নু বলেন, বিএনপি বড় দল। মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তাঁর জন্য কাজ করবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ক ন দ র য় কম ট র ব এনপ র স ব ক স র রহম ন পর য য় ন ত কর উপজ ল ইসল ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় কলেজে অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!
নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অধ্যক্ষ থাকতেও সেখানে আরেকজন নিজেকে ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ দাবি করে কলেজ পরিচালনায় এগিয়ে এসেছেন। এতে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর বিস্ময়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুন এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কলেজ কক্ষে বসে থাকা অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের পাশে একটি চেয়ার নিয়ে বসেন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন। তিনি নিজেকে এডহক কমিটির পক্ষ থেকে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে মাহবুব আলমকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ইমামুল হোসেন কলেজ ত্যাগ করেন।
বর্তমান অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জানান, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বৈধ এডহক কমিটির সুপারিশে আমাকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদালতের স্থগিতাদেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং পূর্ববর্তী কমিটির কেউ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন না।’
অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন দাবি করেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে বর্তমান এডহক কমিটি স্থগিত হয়েছে। ফলে পূর্বের সভাপতি লুৎফর রহমান বৈধভাবে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। ‘আমি আইন অনুযায়ী চলছি, আদালতের রায়ের প্রতীক্ষায় আছি’, বলেন ইমামুল।
২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা মিছিল-মিটিং করলে উপজেলা প্রশাসন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর গঠিত এডহক কমিটি সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। পরে মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপত্তি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় সেই কমিটিকে পরিবর্তন করে নতুন কমিটি গঠন করে এবং মাহবুব আলমকে পদে পুনর্বহাল করে।
তবে হঠাৎই মমতাজ জাহানের মৃত্যুর পর, পূর্বের কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান আদালতের রায়ের সুযোগ নিয়ে ইমামুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেন বলে দাবি করেন। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ মে তারিখে ফজলে হুদা বাবুলকে নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তিন মাসের মেয়াদও বাড়িয়েছে।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, একটি চেয়ারকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে যে নাটক চলছে, তা আমাদের শিক্ষাজীবনে ভয়ানক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষার পরিবেশ নেই, প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যা।
বর্তমান কমিটির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত কাউকে জোর করে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ নেই। নিয়ম মেনে যিনি নিয়োগ পাবেন, তিনিই বৈধভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজে চলমান এই ‘দ্বৈত অধ্যক্ষ’ সংকট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক অচলাবস্থার শঙ্কা তৈরি করেছে।
সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল আরও বলেন, চেয়ার দখলের লড়াইয়ের ফলে বদলগাছী মহিলা কলেজে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা না আসলে কলেজজুড়ে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে পারে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।