পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ হট্টগোলের পাশাপাশি তাঁকে হেনস্তার ঘটনাও ঘটে। পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া শিক্ষকের নাম কুশল বরণ চক্রবর্তী। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদোন্নতি বোর্ডের কার্যক্রম স্থগিত করার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কুশল বরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে তাঁর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল। 
কুশল বরণের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করে তাঁকে চরম অপমান ও হেনস্তা করা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাড়িতে করে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি সনাতনী জাগরণ জোট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সঙ্গে যুক্ত তিনি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই শিক্ষকের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের খবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগে থেকে ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদকেও ওই অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। এ অবস্থান কর্মসূচিতে থেকেই বিকেল ৪টার দিকে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পাশাপাশি কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি বোর্ড বাতিল ও  বরখাস্তের দাবি জানান। আর এসব ঘটনার মধ্যেই সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে যান ওই শিক্ষক। 

এ ব্যাপারে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি নির্ধারিত সময়ে সাক্ষাৎকার দিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে যাই। কিন্তু  একটি দল আগে থেকে পরিকল্পনা করে আমার বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে হেনস্তার চেষ্টা করে। কয়েক দিন ধরেই তারা আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে তারা যেসব প্রশ্ন তুলছে, আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত ছিলাম। তারা আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি।  সহউপাচার্য  উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন।’

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ উচ্চ স্বরে কথা বলছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা হইচই করছেন।  এ সময় উপাচার্যকে নির্লিপ্তভাবে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী  বলেন, কুশল বরণ চক্রবর্তী অভ্যুত্থানের আগে ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে– এমন অপপ্রচার চালিয়েছেন বিদেশে। তাই তাঁর পদোন্নতির খবরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছেন। এটা তার প্রাপ্য ছিল।

মব সৃষ্টি করে হেনস্তার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি  বলেন, কুশল বরণের আজকের এ অবস্থার জন্য তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দায়ী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মব উপ চ র য অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ