Samakal:
2025-07-05@02:13:54 GMT

জৈব সারে মাসে লাখ টাকা আয়

Published: 4th, July 2025 GMT

জৈব সারে মাসে লাখ টাকা আয়

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের রিমন শেখ। ২০১৯ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়ছিলেন অর্থনীতি বিষয়ে। নিজের থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন টিউশনি করে। কোনো মাসে খরচ কম হলে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতেন। তবে করোনা মহামারি সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামে। 
টিউশনি না থাকায় বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে থাকেন তিনি। লকডাউন থাকায় বাড়িতে বসেই লেখাপড়া চালাতে থাকেন। এ সময় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে টিউশনি থেকে সঞ্চয় করা মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা বিনিয়োগে ছোট পরিসরে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির প্রজেক্ট। ধীরে ধীরে উদ্যোগটি বড় হতে থাকে এবং এখন তা ৪০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। এই কেঁচো কম্পোস্ট সার থেকেই সব খরচ বাদে মাসে লাখ টাকা আয় হচ্ছে তাঁর। এরই মধ্যে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। এখন চাকরির পিছে না ঘুরে অন্যকে তাঁর প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.

আশরাফুল আলম বলেন, জৈব সারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ১৬টি উপাদান আছে এতে। রাসায়নিক সার একবার ব্যবহার করে পরেরবার তার দ্বিগুণ সার প্রয়োগ না করলে ফসল ভালো হয় না। জৈব সার একবার ব্যবহার করলে তার সুফল অন্তত দুবার পাওয়া যায়। জৈব সারে জমির স্বাস্থ্য ও প্রাণ সতেজ থাকে। রাসায়নিক সার ব্যবহারে তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়া যায়। আর জৈব সারে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ে। ফলে কৃষকরাও এখন জৈব সারের দিকে ঝুঁকছেন। রিমনের তৈরি ভার্মি কম্পোস্ট সার তাঁর বাড়ি থেকেই কৃষকরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 
রিমন বলেন, ‘করোনার সময় কুষ্টিয়ায় টিউশনি হারিয়ে হতাশ না হয়ে আয়-রোজগারের পথ খুঁজতে থাকি। বাড়ির পাশেই বাবার এক বিঘার একটি আম বাগান আছে। ওই বাগানে সাড়ে তিন হাজার টাকার কেঁচো কিনে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করতে শুরু করি। ফার্মের নাম দিই সোনার বাংলা এগ্রো। আমি ছাত্র হওয়ায় খবর পেয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন সার তৈরির নানা কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন। আমিও দক্ষতার সঙ্গে তা রপ্ত করে জৈব সারের যে ধরনের উপাদান থাকা দরকার সেভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরিতে সক্ষম হই। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সদর উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আমার সার ঢাকায় ল্যাব টেস্টে পাঠিয়েছিলেন। টেস্টে এই সারে সব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। ফলে আমার সারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে।’ 
রিমনের পিতা জমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখন আমার ছেলের প্রজেক্ট দেখাশোনা করি। ছেলে আমাকে আর বাইরে কাজ করতে দেয় না। এখানে এখন চারজন নিয়মিত শ্রমিক আছে। তাদের কাজে আমিও সহযোগিতা করি। প্রতি মাসে লেবার খরচ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকার গোবর ও ১৫ হাজার টাকার বস্তা কিনতে হয়। বর্তমানে মাসে ২৫ টন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি টন সার বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। এ ছাড়া কেঁচো বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকা কেজি। সব খরচ বাদ দিলেও মাসে লাখ টাকা আয় হচ্ছে। ছেলের এখন লক্ষ্য গোবর না কিনে গরু কিনবে। টাকা জমাচ্ছে। গাভি ও ষাড় গরু কিনে আলাদা ফার্ম করা হবে। সরকারি সহায়তা পেলে খুব দ্রতই ফার্ম করা সম্ভব হবে।’ 
রিমনের সফলতা দেখে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তত করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন নতুন উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন লাভের মধ্যে আছি। আশা করছি, আর চার-পাঁচ মাস পর থেকে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হবে।’  
স্থানী কৃষক মামুনুল হক বলেন, জৈব সারে জমির প্রাণ সতেজ থাকে। রাসায়নিক সার ব্যবহারে তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়া যায়। জৈব সারে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ে। ফলে কৃষকরা এখন জৈব সারের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সামসুল আলম বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি জেলা। জমির স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য জৈব সারের কোনো বিকল্প নেই। ভার্মি কম্পোস্ট সারে জমির শক্তি ১০ গুণ বেড়ে যায়। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাত্রা কমানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে এই সার উৎপাদন ও বিক্রি করে ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন করেছেন শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা রিমন শেখ। তাঁর এই সাফল্য তরুণদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ধরনের তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম প স ট স র ত স র ব যবহ র ট উশন

এছাড়াও পড়ুন:

আইফোন থেকে স্যাটেলাইটে জরুরি বিপদবার্তা পাঠিয়ে জীবন বাঁচালেন এক পর্বতারোহী

বিপদে পড়লে প্রযুক্তি যে জীবন রক্ষা করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তার উদাহরণ। সম্প্রতি দুর্গম এক পর্বত থেকে নামার সময় ১০ হাজার ফুট উঁচুতে আহত হন এক পর্বতারোহী। সে সময় ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা কাজে লাগিয়ে জরুরি বিপদবার্তা পাঠান তিনি। আইফোন থেকে পাঠানো জরুরি বিপদবার্তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর অবস্থানের তথ্য যুক্ত থাকায় উদ্ধারকারীরা সহজে তাঁকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ফলে প্রাণে বেঁচে যান সেই পর্বতারোহী।

৫৩ বছর বয়সী ওই পর্বতারোহী স্নোমাস পর্বতশৃঙ্গে অভিযান চালাচ্ছিলেন। সফলভাবে শৃঙ্গে পৌঁছানোর পর তিনি নিচে নামার জন্য ‘গ্লাইডিং’ নামের একধরনের কৌশল অবলম্বন করেন। এ পদ্ধতিতে সাধারণত পর্বতারোহীরা নিয়ন্ত্রিতভাবে ও দ্রুত নিচে নামেন। কিন্তু নামার সময় একটি দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। গুরুতর আঘাতের কারণে তিনি আর চলাফেরা করতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। এমন এক পরিস্থিতিতে আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধার মাধ্যমে তিনি স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে পরিবারের একজন সদস্যকে বার্তা পাঠান। বার্তা পাওয়ার পরপরই দ্রুত উদ্ধারকারী দল সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী শহরে নিয়ে আসে।

অ্যাপল ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ১৪ সিরিজের মাধ্যমে স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা চালু করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল বা নেটওয়ার্কবিহীন স্থান থেকেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জরুরি বার্তা পাঠানো সম্ভব। গ্লোবাল স্টার নামের একটি স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান এই সেবা পরিচালনা করে থাকে।

সূত্র: নিউজ১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ