ভারতের এজবাস্টন-দুঃস্বপ্ন কি তাহলে কাটতে চলেছে
Published: 4th, July 2025 GMT
এজবাস্টন যেন ভারতের জন্য দুঃস্বপ্নের এক নাম! এই মাঠে কখনোই কোনো টেস্ট জিততে পারেনি দলটি। মনসুর আলী খান পতৌদি থেকে এস ভেঙ্কটরাঘবন, কপিল দেব থেকে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে বিরাট কোহলি-কেউই পারেননি। হালের সেরা ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাকেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
এজবাস্টনে এবার ভারত দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুবমান গিল। তাঁর নেতৃত্বে এবার এজবাস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ভালো অবস্থানেই আছে ভারত। প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে এগিয়ে থেকে আজ দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেছে ভারত। তৃতীয় দিনের খেলা তারা শেষ করেছে ১ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে। ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে ২৪৪ রানে। ২৮ রান নিয়ে উইকেটে আছেন লোকেশ রাহুল। তাঁর সঙ্গী করুণ নায়ারের রান ৭। তাহলে কি এজবাস্টনের দুঃস্বপ্ন এবার কাটতে চলেছে ভারতের?
লাঞ্চ বিরতিতে মাঠ ছাড়ছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথ (বাঁ থেকে)। দুজনেই করেছেন সেঞ্চুরি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে অব্যবহৃত বোমা ফেলা হতো গাজায়
ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেওয়া ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো অব্যবহৃত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র অবতরণের আগে গাজায় নিক্ষেপ করত। দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম প্রহর থেকেই তেল আবিবে ফেরার পথে অবশিষ্ট গোলাবারুদ হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পাইলটরা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) কমান্ডারদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। তারা যুদ্ধবিমানগুলোর অবশিষ্ট লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন গাজাকে। এ কারণে ইরানের সঙ্গে যে ১২ দিনের লড়াই চলাকালে গাজায়ও ব্যাপক বিমান হামলা ও প্রাণহানি ঘটে।
সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমা ফেলার বিষয়টিকে আবারও সামনে এনেছে। এসব বোমায় নিহত প্রায় সবাই বেসামরিক নাগরিক; বিশেষ করে নারী ও শিশু।
আইডিএফের মূল লক্ষ্য ইরানে স্থানান্তরিত হওয়া সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় তার বিমান হামলার তীব্রতা অনেকাংশে বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে পরিকল্পনা থাকলেও এসব হামলা যথাযথভাবে পরিকল্পিত ছিল না; এগুলো ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’তেও আঘাত হানেনি।
গত ১৪ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ পরিচালনা করে ইসরায়েল। এ সময় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি তেহরানেই নিবদ্ধ ছিল। তবে সময়টি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্যও ছিল তীব্র রক্তক্ষয়ী। তখন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতেও ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলায় ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সামগ্রিকভাবে ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রে গুলিবর্ষণসহ বিমান হামলায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা শত শত।
গত ১৮ জুন বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে আইডিএফ বিমান হামলায় এক নারী ও তাঁর শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। আল-আত্তারের একটি তাঁবুযুক্ত এলাকায় খান ইউনিসে একই দিনে একটি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, আইএএফ কমান্ডার মেজর জেনারেল তোমের বার গোলাবারুদ অবশিষ্ট আছে– এমনটা জানতে পেরে তা ব্যাপকভাবে গাজায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৬১৩ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা, জানাল জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ৬১৩ জনকে হত্যা করেছে। জিএইচএফের বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্র এবং এর ‘মানবিক’ কনভয়ের কাছাকাছি অথবা উভয় স্থানেই ক্ষুধার্ত এ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়। এ পরিসংখ্যান গত ২৭ জুন পর্যন্ত। এরপর আরও ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানায়, মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জনেরও বেশি। আর ৪ হাজার জনের বেশি আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের বারণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে গাজায় গত মে মাসের শেষ দিকে অস্ত্র হাতে ত্রাণ বিরতণ শুরু করে জিএইচএফ। জাতিসংঘ বলছে, যে প্রক্রিয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিরপেক্ষ নয়। আর মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ পদক্ষেপকে ‘মানুষ হত্যার কসাইখানা’ বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়ে আসছে।
গাজার একজন বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, তারা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রমাণ রেকর্ড করেছেন। এ কেন্দ্রগুলোতে ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। কিছু ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের স্নাইপাররা গুলি করে। অন্যরা সাহায্যপ্রার্থী পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়।
আরও ১৩৮ জন নিহত
গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েল বাহিনীর হামলায় আরও ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫২ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস, আল-মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় অস্থায়ী তাঁবুতে ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় ১৫ জন নিহত হন। এক সময় ইসরায়েল কর্তৃক এটাকে তথাকথিত ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছিল। এখন সেই ‘নিরাপদ অঞ্চলকেই’ সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ করে তুলেছে তারা।
হামলায় ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা নিহত
মিডল ইস্ট আই জানায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৫৭ হাজার ২৬৮ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫-এর বেশি। গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা মুহান্নাদ ফাদল আল-লেই নিহত হন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে মধ্য গাজার আল মুগাজি শরণার্থী শিবিরে হামলায় তিনি আহত হন। তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। এ নিয়ে ইসরায়েল ২৬৫ ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করল।
যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করছেন হামাস নেতা
চলমান পরিস্থিতিতে হামাস নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবিত চুক্তি বিবেচনা করছেন। একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন গতকাল শুক্রবার জানায়, হামাস নেতারা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছেন। তবে তারা আরও দৃঢ় নিশ্চয়তা চান যে, এ যুদ্ধবিরতি ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটাবে।
হামাস কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিলিত হন। পরে এক বিবৃতি জারি করে নিশ্চিত করেন যে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া ঘোষণার আগে অন্য ‘ফিলিস্তিনি দলগুলোর’ সঙ্গে কথা বলছেন।
মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তীব্র মানবিক সংকট আরও খারাপ হয়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি মেনে নিয়েছে।
ইসরায়েলের আরেক সেনা নিহত
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় তাদের আরেক সেনা নিহত হয়েছেন। আসাফ জামির নামে ১৯ বছর বয়সী ওই সেনা সদস্য দক্ষিণ গাজায় নিহত হন। আহত হয়েছেন দু’জন। আলজাজিরা জানায়, গাজায় এ পর্যন্ত ৮৮০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত হন ৩২০ জন।