সরকারি হাসপাতালের নাম শুনলেই মাথায় আসে দালাল আর হয়রানির কথা। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানি সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেন অতি পরিচিত ঘটনা।
হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে না করতেই শুরু হয় দালালদের উৎপাত। নানান কৌশলে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় আশপাশের কোনো নিম্নমানের প্রাইভেট হাসপাতালে। টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ানোর পর ঘুষ দিয়ে পেছনের লোক আগে সাক্ষাতের সুযোগ পায় আর ঘুষ না দিলে দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করতে হয় চিকিৎসকের সাক্ষাতের জন্য।
এ ছাড়া দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয়, আনসারসহ বিভিন্ন লোক রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করে। চিকিৎসকের লিখে দেওয়ার পরও রোগীর সিট পাওয়ার জন্য এবং হাসপাতালের ট্রলি ব্যবহারের জন্য এমনকি প্রায় প্রতিবারই সিরিয়ালে দাঁড়ানোর সময় টাকা দিতে হয়।
অপারেশন থিয়েটারের সিরিয়ালেও একই অবস্থা। অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীকে বের করার সময়ও টাকা দাবি করা হয়। আনসার সদস্যরা এসে চুক্তি করে আগে টাকা দিলে আগে সিরিয়াল দেওয়া হবে। ড্রেসিং করানোর সময়ও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যও নির্ধারিত সরকারি ফি এর বাইরে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়।
ঢাকার হাসপাতালগুলোতে হয়রানির পরিমাণ অধিক। বিশেষ করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। স্টাফদের সুযোগ দেওয়ার নামে টাকা দিয়ে অন্য লোকদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেবাগ্রহিতাদের হয়রানি নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি হাসাপাতালের সেবার মান বৃদ্ধির অনুরোধ জানাচ্ছি।
আজিজুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের অবৈধ শেয়ার ইস্যু, তদন্ত করবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের অবৈধ শেয়ার ইস্যু করার বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক রেজাউন নূর মেহেদী।
আরো পড়ুন:
ইতিবাচক লেখনিতে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার: ডিবিএ সভাপতি
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়। বিএসইসির তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখবে। কী উদ্দেশ্যে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে এত বড় অংকের শেয়ার ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কোম্পানির বোর্ড ড্যাফোডিল পরিবারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তার বিপরীতে শেয়ারে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা করে ৪.৬৭ কোটি শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন দেয় ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ, যা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে করার কথা ছিল। তবে, এর আগে কোম্পানিকে এ বিষয়ে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কোম্পানি তা করেনি। ফলে, অবৈধভাবে শেয়ার ইস্যু করার হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে যে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করেছে। তাই, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি।
এমতাবস্থায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দুজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৫৪ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.২৪ টাকা।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ২৬২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪১.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪.১১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১০ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৩৯ শতাংশ শেয়ার আছে। এ কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ আছে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। গত সোমবার (৩০ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫৪ টাকায়।
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ড্যাফোডিল পরিবারের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি আইটি সলিউশন, কম্পিউটার অ্যাসেম্বলিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ব্যবসা করে।
ঢাকা/এনটি/রফিক