কক্সবাজারের টেকনাফের সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া এলাকায় বসতঘর থেকে মিনারা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিনারা বেগম টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্ত্রী। তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পূর্ব পাড়া এলাকায়। তিন সন্তানের জননী ছিলেন মিনারা বেগম।
পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাতে ওই গৃহবধূর লাশটি উদ্ধার করা হয়। গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় লাশটি ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মিনারা বেগমের বড় ভাই মো.
মো. ইলিয়াস আরও বলেন, যৌতুকের দাবিতে তাঁর ছোট বোনকে নির্যাতন করে আসছিলেন ইব্রাহিম। বোনকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করে এ বিষয়ে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিনারা বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত পেলে ওই নারীর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য তিন বছরের পরিকল্পনা বহুপ্রতীক্ষিত উদ্যোগ; এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই পথনকশার লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেউলিয়াত্ব আইন সংস্কার, খেলাপি ঋণের (এনপিএল) সমাধান, সংকট ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এই পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয়।
এই পথনকশায় পরিষ্কার ও কাঠামোবদ্ধ সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের গভীর সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে এই পরিকল্পনার জটিলতা ও ব্যাপকতার কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সফলতা শুধু নতুন আইন প্রণয়ন নয়, বরং সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। সময়মতো ও কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘদিনের দুর্বলতা। অতীতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত। দেশে ছোট ও দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, মূলধন পর্যাপ্ত নয় এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি ঋণ অনাদায়ি (নন পারফর্মিং) এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়তে পারে। যদি এই সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ভবিষ্যতেও নানা ধাক্কার মুখে পড়বে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে না এই খাত। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক খাতের অবস্থা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারকে এই পথনকশা আইন আকারে প্রণয়ন ও প্রয়োগের দিকে নজর দিতে হবে। আরও যা যা দরকার, তা হলো প্রথমেই দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করে অধিকতর শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব দেওয়া; জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ও চুরি হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা ইত্যাদি। অন্যদিকে কার্যকর ঋণ পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর। ভালো পরিকল্পনা জরুরি হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং নতুন সরকারের কাঁধে বর্তায়।
সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)