যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে রাজি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। আজ রোববার ভারতের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি চলাকালে আজই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো শান্তি। আর ভারত বলছে, দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে সাবেক সেনাদের মোতায়েন করা হবে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনে ভারত। তবে তা বরাবরই নাকচ করে এসেছে ইসলামাবাদ। এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ৬ মে রাত থেকে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে ভারত ও পাকিস্তান। চার দিন সংঘাতের পর ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয় তারা।

এর পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হামলা বন্ধ রয়েছে। পরে আজ ভারতের সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানান, ১২ মে দুই দেশের সেনা অপারেশনের প্রধানের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, তা চলবে। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই। গতকাল দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে নতুন করে আলাপ হয়নি বলেও জানান তিনি।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নিয়ে সর্বশেষ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে দেশটি শান্তি চায় বলে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। সংবাদমাধ্যম আরটি আরবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সহিংস দেশ নই। আমরা একটি সচেতন ও দায়িত্বশীল দেশ। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো শান্তি।’

আরও পড়ুনপাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নারী ব্লগার গ্রেপ্তার১৮ ঘণ্টা আগে

পাকিস্তান শান্তি চায়—এমন বার্তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন দেশ সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, তাঁকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল–এন) অন্যতম প্রধান মিত্র পিপিপি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিলাওয়াল লিখেছেন, ‘আমার সঙ্গে আজ প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছেন, শান্তির পক্ষে পাকিস্তানের অবস্থা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে আমি যেন একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিই।’ আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ওই প্রতিনিধিদলের কাজ হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের অপপ্রচারগুলো তুলে ধরা।

আরও পড়ুনপেহেলগাম হামলা: বিরোধীদের দাবি এড়াতেই কি বিদেশে দল পাঠাচ্ছে মোদি সরকার১৭ মে ২০২৫

এদিকে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। শনিবার ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার সাবেক সেনাকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪৩৫ জনের লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত অস্ত্র রয়েছে। সাবেক সেনাসদস্যদের মোতায়েন করার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর সরকারও।

আরও পড়ুনমাত্র ২৩ মিনিটেই পাকিস্তানকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে: রাজনাথ১৬ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ম ত য় ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ