‘ভিন্ন স্বাদের গল্পের কাজ ইন্ডাস্ট্রির জন্য সহায়ক হবে’
Published: 20th, May 2025 GMT
ওয়েব সিরিজ
সেরা ওয়েব সিরিজ
‘কালপুরুষ’ (রেদওয়ান রনি)
‘কালপুরুষ’ একটা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ। চরকি এক্সপেরিমেন্টাল কাজ প্রযোজনা করতে ভালোবাসে। মেধাবী একটা টিম কাজ করেছে। নতুন একটি গল্পে নতুনত্ব দেখে আমাদের মনে হয়েছে এ ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল কাজ ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে। সে জায়গা থেকে কাজটি করা। জুরিরা কাজটিকে মূল্যায়ন করেছেন এবং বুঝেছেন যে নানান ধরনের, ভিন্ন স্বাদের গল্পের কাজ ইন্ডাস্ট্রির জন্য সহায়ক হবে। ধন্যবাদ সম্মানিত জুরিদের।
‘রঙিলা কিতাব ’(সাকিব আর খান)
কোনো কনটেন্ট যখন রিলিজ পায়, তখন দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাই আমাদের জন্য অনেক বড় পুরস্কার। তবে মেরিল-প্রথম আলো প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও আমাদেরকে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা অবশ্যই আনন্দের। সমালোচক বিভাগে যাঁরাই মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের সবার জন্য শুভকামনা। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাচ্ছি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের আয়োজক সবাইকে। আর অনুরোধ থাকবে ওয়েব সিরিজের কলাকুশলীদের জন্য বিভাগ চালু করার।
‘সিনপাট’ (রেদওয়ান রনি)
চরকি যখন প্রযোজনা করে, তখন কোনো একটি নির্দিষ্ট শহর বা অঞ্চলের গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সারা বাংলাদেশের গল্প নিয়ে কাজ করে। তাওকিরের আগের কাজ শাটিকাপ দর্শক ও সমালোচক অনেক পছন্দ করেছিলেন, মনোনয়ন পেয়েছিল। এবার সিনপাটও মনোনয়ন পেল সম্মানিত জুরিদের বিচারে। একদম আনকোরা শিল্পীদের নিয়ে করা কাজটি জুরিদের নজরে এসে মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পুরো টিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সেরা চিত্রনাট্যকার
অনম বিশ্বাস (‘রঙিলা কিতাব’)
আমি আর শাওন ছাড়াও হইচই টিম আমাদের সঙ্গে খুব ক্লোজলি কাজ করেছে রঙিলা কিতাব-এর চিত্রনাট্য ডেভেলপ করার সময়। মনোনয়ন পেয়ে আমরা সবাই আনন্দিত। টিমের সবাইকে ও হইচইকে অভিনন্দন।
আশরাফুল আলম শাওন (‘রঙিলা কিতাব’)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচকদের বিচারে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ায় আমি অবশ্যই আনন্দিত। মেরিল-প্রথম আলো দেশের বিনোদন মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। আমি আর অনম বিশ্বাস অনেক সময় নিয়ে, অনেক যত্ন নিয়ে রঙিলা কিতাব–এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলাম। দর্শকেরাও পছন্দ করেছেন, এখন সমালোচকদের বিচারেও মনোনয়ন এল, সব মিলিয়ে একটা স্যাটিসফেকশন কাজ করছে ভেতরে।
নুহাশ হুমায়ূন (‘২ষ’)
নিজের মনোনয়ন নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই কিন্তু সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে মায়ের মনোনয়ন যখন দেখলাম, তখন চোখে পানি চলে এল। এটা মায়ের লেখা প্রথম চিত্রনাট্য, যেখানে কবি হিসেবে মায়ের যে প্রতিভা বা গুণ রয়েছে, সেটা ফুটে উঠেছে চিত্রনাট্যে। অন্তরার মতো সাইকোলজিক্যাল গল্প কিংবা বেসুরার গল্পটা পুরাই কবিতার মতো ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে মা খুব সুন্দরভাবে এটা করেছেন। অবশ্যই মা এই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য।
গুলতেকিন খান (‘২ষ’)
আমরা (নুহাশ এবং আমি) যখন স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম, তখন কোনো পুরস্কারের আশায় লিখিনি! তাই নিজের ছেলের সঙ্গে মনোনয়ন পেয়ে ভালোই লাগছে। ধন্যবাদ!
সালজার রহমান (‘কালপুরুষ’)
একটা সিরিজ বা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে চিত্রনাট্য। এই বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে আমি খুবই খুশি। এটা আমার প্রথম চিত্রনাট্য, সে কারণে আনন্দের মাত্রাটাও অনেক বেশি।
সেরা পরিচালক
অনম বিশ্বাস (‘রঙিলা কিতাব’)
মেরিল-প্রথম আলোর মনোনয়ন টিমের সবাইকে এক্সাইটেড করে ফেলে, সবার ভেতর অন্য রকম একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করতে আরম্ভ করে যে পর্দার পেছনে আমাদের এফোর্টটা কেউ বুঝতে পেরেছে। টিমের এই আনন্দ আমাকে দারুণভাবে আশান্বিত করে; কারণ, এই নমিনেশন আসলে পুরো টিমের।
নুহাশ হুমায়ূন (‘২ষ’)
পরিচালক হিসেবে ‘২ষ’–এর জন্য মনোনয়ন পেয়ে ভালো লাগছে, ধন্যবাদ জুরিদের। অভিনন্দন আমার টিমের সবাইকে।
সালজার রহমান (‘কালপুরুষ’)
নিজের লেখা চিত্রনাট্য নিজে পরিচালনা করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি আশা করছি, যেটা দেখাতে বা বলতে চেয়েছি, সেটা কিছুটা হলেও পেরেছি। এটা আমার লং ফরম্যাটের প্রথম নির্দেশনা। এতে মনোনয়ন পাওয়ায় আমি খুবই কৃতজ্ঞ।
সেরা অভিনেত্রী
জিন্নাত আরা (‘সিনপাট’)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৪–এ সমালোচকদের বিচারে চূড়ান্ত মনোনয়নের ঘটনা শুধু আমার জন্যই নয়, আমার মতো হাজার হাজার অভিনয়ে আগ্রহী মানুষদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা তৈরি করেছে। ‘দুরু’ চরিত্রের গাঁথুনিতে বহু মানুষের অবদান আছে। পুরো সিনপাট টিমের জন্যই এটা একটা সফলতা। এত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিল্পীদের পাশে নিজের নাম দেখে পুলকিত হয়েছি। চলচ্চিত্র স্বাধীন ও বৈষম্যহীন হোক, এই প্রত্যাশা করি। এবং বাংলাদেশে সুনির্মিত কাজের তালিকা আরও দীর্ঘ হোক। মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৪–এর আয়োজক, জুরিবোর্ড ও বাংলাদেশের আপামর দর্শকদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
পরীমনি (‘রঙিলা কিতাব’)
এমন কিছু চরিত্র থাকে, যেটাতে কাজ করলে বেদনা, কষ্ট, অভিমান, বুকের ভেতর দমে যাওয়া আর্তনাদ—সবকিছু কেমন মায়া মায়া আবেশ হয়ে সঙ্গে রয়ে যেতে চায়। রঙিলা কিতাব–এ সুপ্তি আমার অভিনীত তেমনই একটা ভালোবাসার চরিত্র। মুক্তির পর দর্শকেরা এই চরিত্র নিয়ে অনেক ভালো লাগার কথা বলেছিলেন। এখন মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের জুরিবোর্ডও তা পছন্দ করেছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নে রেখেছেন। কাজটি করতে গিয়ে অসাধারণ একটা টিমও পেয়েছিলাম। তাই এই মনোনয়নের জন্য আমার পুরো টিমকে অভিনন্দন ও ভালোবাসা। পুরো ব্যাপারটা আমার জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
মেহজাবীন চৌধুরী (‘আরারাত’)
‘আরারাত’ এমন এক কাজ, যেখানে আমি নিজেকে ভাঙার এবং নতুনভাবে গড়ার সুযোগ পেয়েছি। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এ চরিত্রটি আমাকে অনেক গভীরতায় নিয়ে গিয়েছিল। সমালোচকদের বিচারে এই মনোনয়ন পাওয়া শুধু আমার জন্য নয়, পুরো টিমের জন্য এক বিশাল স্বীকৃতি। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছে।
সেরা অভিনেতা
এফ এস নাঈম (‘কালপুরুষ’)
যে অনুষ্ঠানে বড় বড় শিল্পীকে কাজের সম্মান দেওয়া হয়, সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য, একটা কার্ডের জন্য বড় ভাইদের অনেক অনুরোধ করতাম। একটা সময় নিজের নামে কার্ড আসা শুরু হলো। এবার সেই অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিচারকদের দৃষ্টিতে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছি। যে কাজটির জন্য নিজেকে তৈরি করতে ১৯ মাসের একটি সাধনা করেছি আমি। এখানে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পাওয়া মানে টিমের সবার কাজকে সম্মানিত করা। এই স্বীকৃতি আমার পুরো টিমের। এই অনুভূতি অনেক আনন্দের। ধন্যবাদ সবাইকে।
মোশাররফ করিম (আধুনিক বাংলা হোটেল)
মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মোস্তাফিজুর নূর ইমরান (‘রঙিলা কিতাব’)
মনোনয়ন তো নিঃসন্দেহে ভালো ব্যাপার। আনন্দের ব্যাপার। অনুভূতিও দারুণ। চরিত্রটিকে পছন্দ করলে তো অবশ্যই ভালো লাগে। সে জন্যই তো কাজ করা। উৎসাহ ও স্বীকৃতি কাজের প্রেরণা দেয়, আরও ভালো কাজ করার চেষ্টার জন্য তাগিদ তৈরি করে। খুবই ভালো লাগছে মনোনয়ন পেয়ে। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। আয়োজক ও বিচারকদের ধন্যবাদ। দর্শকদের ধন্যবাদ। ধন্যবাদ হইচইকে এবং অনম বিশ্বাসকে রঙিলা কিতাবকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। টিমের সবাইকে ধন্যবাদ দুর্দান্ত প্রচেষ্টার জন্য।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র ল প রথম আল চ ত রন ট য প রস ক র ম র জন য আনন দ র ই আনন দ চর ত র ক জ কর কর ছ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষকের গোলা খালি হওয়ার পর চড়ছে চালের বাজার
ভরা মৌসুমে যখন দাম কমে যাওয়ার কথা, তখনই চালের বাজার উল্টো পথে। রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে হঠাৎ কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বিভিন্ন জাতের চালের দাম। এতে সাধারণ ভোক্তা যেমন চাপের মুখে পড়েছেন, তেমনি হতাশ কৃষকরাও। এখন চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী দেখে অনেক কৃষক মনে করছেন, তারা ঠকেছেন। এ পরিস্থিতিতে আবারও সামনে এসেছে ‘সিন্ডিকেট’ ও ‘করপোরেট দখল’।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রেকর্ড চাল উৎপাদন হলেও কৃষক ও ভোক্তা এর সুফল পাচ্ছেন না। কারণ, ধান যখন কৃষকের হাতে থাকে, তখন দাম কম থাকে। ব্যবসায়ীদের হাতে যাওয়ার পর চালের দাম বাড়িয়ে তোলা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চালের প্রায় ৫৫ শতাংশ বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়। ফলন ভালো হলে সরবরাহ বাড়ে, আর বাজারে দাম কমে। এ বছর বোরোতে রেকর্ড ২ কোটি ১৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বোরো উৎপাদন ১৫ লাখ টন বেশি হয়েছে। তবু বাজারে চালের দাম বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরু বা মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে। এ ছাড়া মাঝারি (বিআর-২৮) মানের চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬৩ টাকা, মোটা চালের কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে সরু ও মোটা চালের কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত দর বেড়েছে। এ ছাড়া মাঝারি (বিআর-২৮) মানের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনও বলছে, চালের দাম বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত এক মাসে সরু চালের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মাঝারি ও মোটা চালের দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।
তবে এক বছরের ব্যবধানে এসব চালের দাম গড়ে বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
অথচ খাদ্যের মজুত গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এখনও বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখন দেশের বিভিন্ন গুদামে খাদ্য মজুত আছে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৬ টন, যার মধ্যে চাল ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৫ টন ও গম ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৬ টন। এ ছাড়া ধানের মজুত রয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৫ টন। বর্তমানে খাদ্যের এই মজুত গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩ লাখ টন বেশি।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রব বলেন, ‘ধান বিক্রি করে এখন আফসোস করছি। এক মাস আগে ১০০০-১১০০ টাকায় ধানের মণ বিক্রি করলাম। এখন শুনি, চালের দাম কেজিতে ৮ টাকার মতো বেড়েছে। আমরা ধান থেকে কেজিপ্রতি এক-দেড় টাকা বেশি পেলেও মিলাররা চালে ৮ টাকা লাভ করল।’
ময়মনসিংহের ফুলপুরের কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, সেই ধান সস্তায় বেইচা এখন আবার চড়া দামে কিনি খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’
রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, মাঠে যখন ফসল থাকে, তখন দাম কম। কৃষক বিক্রি করার পরই মূল্যবৃদ্ধির খেলা শুরু হয়।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলছেন, বৃষ্টির কারণে ধানের গুণগত মান কিছুটা নষ্ট হয়েছে, এতে দাম বেড়েছে। গত ১৫ থেকে ২০ দিনে মণপ্রতি ধানের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। এর ফলে মিল পর্যায়ে চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ঈদের আগেই কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুত করেছে এবং এখন কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, ৮৫ শতাংশ মিলারের সংরক্ষণ ক্ষমতা নেই। তবে বড় করপোরেট চালকলগুলো তিন থেকে চার মাসের ধান মজুত করে। পরে তারাই বাজারে সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়।
চালের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে সরকার কিছু উদ্যোগ নিলেও ফল এখনও দৃশ্যমান নয়। গত সপ্তাহে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা খাদ্য বিভাগ চালের বাজারে অভিযান চালায়। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই অভিযান শুধু খুচরা পর্যায়ে। মিলগেট আর গুদামে নজরদারি দুর্বল।
চট্টগ্রামে কিছু ধান উৎপাদন হলেও এটি ধানের আবাদ এলাকা নয়। দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর আশপাশের জেলা থেকে ধান আসে চট্টগ্রামে। বর্তমানে বোরো মৌসুমেও বাজারে ধান আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বোরো ধান, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীদের দাবি, মূলত পরিবহনের ভাড়া ও ধানের দাম বেড়ে যাওয়া এবং চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে। এর বাইরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের কারণেও প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ ছাড়া কৃষকরাও ধানের দাম বাড়িয়েছেন।
চট্টগ্রামে রাইস মিল মালিক সমিতির আওতায় ১২৬ চালকল রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরি করে। চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎই বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এর কারণ পরিবহনের ভাড়া ও ধানের দাম বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এ কারণে মিল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না। এটিও চালের দামে প্রভাব ফেলছে।
কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে পুরোনো ধান মজুত থাকার পরও ঈদের পর তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। সরু চালের ২৫ কেজির বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮২০ থেকে ১ হাজার ৯২০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ১ হাজার ৬৮০ থেকে ১ হাজার ৭২০ টাকা।
মিলারদের একাংশ মনে করেন, ধানের সামান্য দাম বাড়ার কারণে চালের দর ১ থেকে ২ টাকা বাড়তেই পারে। তবে ৭ টাকা পর্যন্ত দর বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক। খুচরা বিক্রেতা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চালের দাম বাড়াকে মিলারদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, মোকামে অধিকাংশ মিলে পুরোনো ধান ও নতুন ধান মজুত রয়েছে। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক চাল সরবরাহ হচ্ছে। মিলগেটে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। অনেক ব্যবসায়ী অর্ডার দিয়েও সময়মতো চাল পাচ্ছেন না।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, কেউ অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। খাদ্য কর্মকর্তা আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, বোরো মৌসুমে প্রচুর ধান উঠেছে। তবু চালের দর বাড়ার পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, সব সময় কৃষকের হাতে যখন ফসল থাকে, তখন দাম কমিয়ে রাখা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। আবার যখন কৃষকের হাত থেকে পণ্য চলে যায়, তখন দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে ক্ষতির মুখে ফেলা হয়। সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, ভরা মৌসুমেও চালের দাম এত বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। এতে নিম্নবিত্তের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় কৃষি সংস্কার কমিশন গঠনসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
গত বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প মূল্যায়ন সভা শেষে কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, কৃষকের ফসল মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রক্ষায় এবার সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনার নির্ধারিত সময় ১৫ দিন এগিয়ে এনেছে। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এটা রোধ করা গেলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি)