বছর ঘুরে ফিরে আসে ‘মুল্লুকে চলো’র দিন। এটি ছিল এই অঞ্চলে (আসামসহ বৃহত্তর সিলেট) চা-বাগান তৈরির সময় বঞ্চিত, নিপীড়িত একদল মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সংঘবদ্ধ উত্থানের ডাক। মুল্লুকে চলো দিনটি চা-শ্রমিকদের মনে করিয়ে দেয়, একদিন স্বপ্নের ঘোর কেটে যাওয়া একদল মানুষ কী করে জন্মভিটার দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। কী করে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে জন্মভিটায় ফিরতে চেয়েছিলেন। একদিন কী বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে জীবন বাজি রেখেছিলেন তাঁরা।

খরা ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের এসব মানুষ নিশ্চিত ও উন্নত জীবনের আকাঙক্ষা নিয়ে একদিন জন্মস্থান ছেড়ে এসেছিলেন। গাছ ঝাঁকালেই টাকা পাওয়া যায়—এমন স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল সেই মানুষগুলোকে। আসাম অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে চা-বাগান তৈরি করতে তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের এই মোহ কাটতে বেশিদিন লাগেনি তাঁদের। তাঁরা বুঝে যান, তাঁরা ঠকেছেন। জন্মভূমিতে ফিরতে স্বপ্নচ্যুত এই মানুষেরা মুল্লুকে চলো ডাক দিয়ে তখন পথে নামেন।

পথে ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরে গোর্খা সেনারা এই মানুষদের ওপর হামলা করেন। অনেকেই আর ঘরে ফিরতে পারেননি। চা চাষের বৃত্তবদ্ধ জীবনে তাঁরা স্থায়ী শ্রমিক হয়ে বাঁধা পড়লেন। এই রক্তাক্ত দিনটি এখন চা-শ্রমিকদের কাছে স্বপ্নভঙ্গের প্রতিবাদের দিন হয়ে আছে। চা-শ্রমিকেরা দিনটিকে (২০ মে) এখন ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকেন।

চা-শ্রমিক সংগঠকদের সূত্রে জানা গেছে, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা-বাগানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের টিলাভূমিতে একের পর এক চা-বাগান তৈরি করতে থাকে। জঙ্গলাকীর্ণ এসব ভূমিতে চা-বাগান তৈরিতে তখন অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এই অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি জমিতে সাপ, জোঁক, পোকামাকড়ের মধ্যে কাজ করার মতো শ্রমিকের অভাব ছিল। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো তখনকার অবিভক্ত ভারতের ওডিশা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, চেন্নাই, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খরা ও দারিদ্র্যপীড়িত, অনুর্বর অঞ্চলে দালাল নিয়োগ করে। দালালদের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে নিশ্চিত, সুন্দর ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। দালালদের ফাঁদে পড়েন এসব মানুষ।

এই শ্রমিকদের নিপীড়ন করা হতো। চালানো হতো শারীরিক নির্যাতন। স্বপ্নচ্যুত চা-শ্রমিকেরা গোপনে ‘নিজ মুল্লুকে’ (নিজ দেশে) ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথ কারও জানা নেই। তাঁদের শুধু জানা ছিল, চাঁদপুর থেকে স্টিমারে কলকাতা যাওয়া যায়। এই জানাটুকু সম্বল করেই ১৯২১ সালে দিনক্ষণ ঠিক করে কাছাড় ও সিলেটের প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক মুল্লুকে চলো ডাক দিয়ে পথে নেমে পড়েন।

দিনের পর দিন হেঁটে একসময় নদীবন্দর চাঁদপুরে গিয়ে পৌঁছান তাঁরা। পথে অনেকের মৃত্যু হয়। চা-শ্রমিকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন চা-শ্রমিক নেতা গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত, দেওশরন ত্রিপাঠি, হরিচরণ প্রমুখ। এদিকে চা-বাগান ছেড়ে আসা শ্রমিকদের পথরোধ করতে সরকারের সহযোগিতায় চাঁদপুরে মোতায়েন করা হয় আসাম রাইফেলের গোর্খা সেনা। স্টিমারে উঠতে চাইলে গোর্খা সেনার প্রতিরোধের মুখে পড়েন চা-শ্রমিকেরা। বাধার মুখে শ্রমিকেরা তখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। শ্রমিকদের বিদ্রোহ ঠেকাতে ১৯২১ সালের ২০ মে সেনারা নির্বিচার গুলি চালান। অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এই আন্দোলন তখন একটি সর্বভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনে রূপ ধারণ করে। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে চাঁদপুর ও লাকসাম জংশনের রেলশ্রমিকেরা ২১ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন। ২৪ মে থেকে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শ্রমিক ও ২৮ মে থেকে স্টিমার ধর্মঘট চলতে থাকে। আসাম বেঙ্গল রেলশ্রমিকেরা ৩ মাস এবং স্টিমারশ্রমিকেরা ৬ সপ্তাহ ধর্মঘট করেছিলেন। এই ধর্মঘট ও দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ফলে চা-বাগানের ব্রিটিশ মালিকেরা শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ সময় চা-বাগানের মালিক ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিতে কিছু শ্রমিক বাগানে ফিরে যান। আর অনেকে ফিরে যান নিজ মুল্লুকে। যাঁরা ফিরে এলেন, তাঁরা বাঁধা পড়লেন চা-বাগানের সেই জীবনে।

এ বছর ১০৪তম ‘চা-শ্রমিক দিবস’ পালন করা হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় মিনিটে ‘মুখোশধারী’ শাকিবের ঝড়

ঢালিউড কিং শাকিব খানের প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’। রায়হান রাফি নির্মিত সিনেমাটি ঈদুল আজহায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। প্রচারের অংশ হিসেবে আজ মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটির টিজার। মুক্তির পরই অন্তর্জালে ঝড় তুলেছেন শাকিব।

টিজারের শুরুতে দেখা যায়, মুখোশ হাতে হেঁটে যাচ্ছেন কেউ একজন। একটি বড় রুমের ভেতর মুখোশ পরিহিত একদল মানুষকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। এরপর মুখোশ পরা একদল মানুষ একটি ভবনে প্রবেশ করে সবাইকে জিম্মি করে। তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করতেও দেখা যায় সেই মুখোশধারী গ্যাংয়ের।

নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসে দেশবাসীর প্রতি একটি বার্তা, যেখানে বলা হয় ‘তাণ্ডব আসছে’। সেই সঙ্গে সবাইকে ঘরে অবস্থান করার অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে মুখোশ পরা গ্যাংয়ের প্রধান শাকিব খান তার মুখোশ খুলে ফেলেন। টিজারের একঝলকে জয়া আহসানকেও দেখানো হয়। টিজারটিতে শাকিবের নাচের একটি মুদ্রা আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।

আরো পড়ুন:

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে মুক্তি পেল শাকিবের ‘বরবাদ’

মনিরের মৃত্যু: শাকিবকে রত্নার খোলা চিঠি

১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের টিজার দেখে ভক্ত-অনুরাগীরা তো বটেই, নেটিজেনারাও বিস্মিত। মন্তব্যের ঘরে সেই উচ্ছ্বাসের কথা প্রকাশ করেছেন। একজন লেখেন “এই ‘তাণ্ডব’, ‘বরবাদকেও’ ছাড়িয়ে যাবে।” রাকিব লেখেন, “আগুন।” বিজয় লেখেন, “ইন্ডাস্ট্রি হিট লোডিং মেগাস্টার কাঁপিয়ে দিয়েছে।” প্রেম চৌধুরী লেখেন, “কোরবানির ঈদের বাকি সকল মুভিকে ১০ নং বিপদ সংকেত দিলেন ‘তাণ্ডব’।” এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে।

‘তাণ্ডব’ সিনেমার টিজার দেখে শোবিজ অঙ্গনের অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। চিত্রনায়িকা বুবলী সিনেমাটির টিজার শেয়ার করে লেখেন, “আরেকটি তাণ্ডব আসছে।”

‘তাণ্ডব’ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করছেন সাবিলা নূর। এ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। শাহরিয়ার শাকিলের প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে আলফা আই, কলকাতার এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক এমপি মান্নানের আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধনে যুবদল-ছাত্রদলের হামলার অভিযোগ, সাংবাদিক আহত
  • দেড় মিনিটে ‘মুখোশধারী’ শাকিবের ঝড়