কিছু হলেই আমাকে নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন পরীমণির
Published: 20th, May 2025 GMT
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমণি। বর্তমানে অভিনয় ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। গতকাল রাতে হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে চিত্রনায়িকা পরীমণির মৃত্যুর গুজব। এরপর রাতেই নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে জানান, দেনে বেঁচে আছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মানুষের এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড নিয়ে দারুণ বিরক্ত এই নায়িকা।
পরীমণি বলেন, ‘সারা দিন শুটিং করে যখন ফোন হাতে নিলাম, আমি শকড। ফোনকলের চেয়ে বেশি মেসেজ। ধরেন, আপনার কোনো আত্মীয়র মৃত্যুর খবর শুনলেন, আপনি সেই আত্মীয়কেই ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বেঁচে আছেন? যেকোনোভাবে গুজবটা ছড়িয়েছে, আমার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার জন্য কতটা শকিং!’
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘মৃত্যু তো আসলে আমার হাতে নেই। আপনি তো জানেন না, কখন চলে যাবেন। আল্লাহর কাছে স্বাভাবিক মৃত্যু চাই সব সময়।’
পরীমণি বলেন, ‘এই যে আমার ঝুলন্ত মরদেহটা উদ্ধার করল, তারপরও লাইভে এসে কথা বলছি আপনাদের সঙ্গে। কোনো একটা ফোকাস সরানোর জন্য মানুষ পরীমণিকেই বেছে নেয়। আলুর দাম কমাতে পারছে না বলে পরীমণির বিয়ের খবর করে দাও। এখন বিয়ে দিতে পারছে না বলে একদম মেরে ফেলল।’
আত্মহত্যা করা মতো কোনো ইস্যু তার জীবনে নেই বলেও জানান পরীমণি। তার কথায়, ‘আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমার জীবনে এখন সুইসাইড করার মতো কোনো ইস্যুই নাই। আমার দুইটা বাচ্চা নিয়ে, কাজ নিয়ে অনেক খুশি। এই খুশির মধ্যে আপনাদের জীবনযাপন ঢুকিয়ে দেবেন না। কিছু হইলে খালি পরীমণিকে নিয়ে টানাটানি কেন? আর কিছু খুঁজে পান না?’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পানি নিয়ে ‘অমৃত’র অনাচার
ভূগর্ভের পানি তুলে বোতলজাত করে ব্যবসা করছে ‘অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট’ নামে একটি কোম্পানি। বাবুগঞ্জের রহমতপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে কারখানার জন্য একটি গভীর নলকূপের অনুমোদন নেয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটারের অনুমতি নিয়ে আরও তিনটি কূপ স্থাপন করে এক লাখ লিটার পানি তুলে বিক্রি শুরু করে। পানি নিয়ে অমৃতের এ অনাচারে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পানির জন্য হাহাকার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন, কারখানা নির্মাণ এবং এসবের জন্য পানির চাহিদা মেটাতে বাবুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসানো হয়েছে। এতে পানির স্তর নেমে গেছে। ৮০ ভাগ নলকূপ এখন অকেজো। আগে যেখানে ৭৫০ থেকে ৮০০ ফুট নিচে গেলে নলকূপে মিলত বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন সাড়ে ৯০০ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি তোলা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছয় ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রামে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মাধবপাশা ইউনিয়নের। এখনই পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাজুড়ে পানির হাহাকার আরও বাড়বে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুমন বলেন, অমৃত গ্রুপ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে কিনা, সেটি তদন্তের পর সত্যতা পেলে কেবল সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে; এর আগে নয়।
এদিকে, পানি নিয়ে অমৃতের অনাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী এম মাসুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, অমৃত গ্রুপ সরাসরি ভূগর্ভ থেকে মোটা পাইপ ও পাম্পের সাহায্যে লাখ লাখ লিটার পানি তুলে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাদের বলা হয়েছে, পানি বিক্রির ব্যবসা চালাতে হলে নদী কিংবা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ৯ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাধবপাশা ইউনিয়নের পূর্ব পাংশা গ্রামের শাহনাজ পারভীনের অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। আশপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। কিছুদিন ফিটকিরি দিয়ে, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পুকুরের পানি পান করেছেন। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে সিকদারবাড়ির হাউজিংয়ের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও কয়েকবার চাপার পর নলকূপ থেকে পানি ওঠে।
যেভাবে অনিয়মের শুরু
মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে দেড় যুগ আগে অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু। প্যাকেট গুঁড়া মশলা, বোতলজাত সরিষার তেল বাজারজাত করত প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালে ওয়ারপো থেকে যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বোতলজাত (অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটার) পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। পুরোনো কারখানার এক পাশে ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করে তারা। প্রথমে একটি ছয় ইঞ্চি ব্যাসের কূপের অনুমোদন নিয়ে পরে অবৈধভাবে আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও চারটি কূপ থেকে গড়ে এক লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করেছে। অভিযোগ পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় ওয়ারপো পরিদর্শক টিম।
যা বলছে ওয়ারপো
সমকালের পক্ষ থেকে ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৯৬০ ফুট গভীরতায় ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপের সাহায্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছিল। ১৬ হাজার লিটার পানি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আরও তিনটি কূপের মাধ্যমে ৮০ হাজার লিটার পানির জন্য আবেদন করে। এ আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এরপরও তারা বড় একটি কূপ থেকে ৩৫ হাজার লিটার পানি তুলছে এমন প্রমাণ পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম রয়েল বলেন, অনুমোদনের আগে অন্য কোনো কূপ থেকে পানি তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অমৃত গ্রুপকে সাবধান করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অমৃতের প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ। তাঁর দাবি, ১৬ হাজারের অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন ১৪ হাজার লিটার পানি আহরণ করছেন। এতে এলাকাবাসীর টিউবওয়েলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি পানি সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করছে। তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র অমৃত গ্রুপের হেড অফিসে রক্ষিত আছে বলে দাবি তার।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বা অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদা ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানা নেই।
ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অমৃত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোন প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ পানি ভূগর্ভের উৎস থেকে তুলেছে, তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।