পাঠশালার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল
Published: 20th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি বাতিল করেছে ভারতের আহমেদাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন (এনআইডি)। শিক্ষাবিষয়ক আদান–প্রদানের জন্য ২০২৩ সালে হওয়া এই সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৮ সাল পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছর আগেই চুক্তি বাতিল করল এনআইডি।
গতকাল সোমবার এনআইডির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় অগ্রাধিকারের সর্বোচ্চ স্বার্থে এনআইডি আহমেদাবাদ একটি দৃঢ় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় অনুভূতি এবং তার নৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সংহতি রেখে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন আহমেদাবাদ এবং পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট ঢাকা বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সহযোগী চুক্তি সমাপ্ত করা হচ্ছে।’
এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্র অনেকটা একই রকম। ডিজাইন, অ্যানিমেশন থেকে ফটোগ্রাফি বা চিত্র নির্মাণ অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে সমঝোতার এবং একসঙ্গে কাজ করার জায়গা রয়েছে। সেই কারণেই ২০২৩ সালে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এনআইডির পরিচালক অশোক মণ্ডল ভারতের সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘আমরা দেশের সঙ্গে এবং আমাদের সরকারের পাশে রয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতিই প্রাধান্য পাবে এবং সে কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো সরকার (রাজ্য বা কেন্দ্র) থেকেই কোনো রকম নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’
ওই প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, চুক্তি সই হলেও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে গত দুই বছরে যৌথভাবে কোনো প্রকল্প করা হয়নি। অতীতেও চুক্তি হয়েছে; কিন্তু কোনো প্রকল্প হয়নি।
তবে এ ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে কূটনীতির ভাষায় ‘পিপল টু পিপল কন্টাক্ট’ বা মানুষে মানুষে আদান-প্রদানের ক্ষেত্র আরও সংকুচিত হবে। বেসামরিক ক্ষেত্রে, যেমন শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়বে।
আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এক ভারতীয় কূটনীতিবিদ প্রথম আলোকে বলেন, যত দূর মনে হচ্ছে, আপাতত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিম্নগামী হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬.৫১ কোটি টাকার রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কিন্তু রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ হাজার ২১.৫১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৭.৩৮ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৯. ৩৮ কোটি টাকা বেশি।
কাস্টমস ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার ঐক্য পরিষদের কলম বিরতি ও কমপ্লিট শাট ডাউনের অস্থিরতার মধ্যেও রাজস্ব আদায়ের যে ধারাবাহিকতা চলছে, তাতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার ঐক্য পরিষদের কলম বিরতি ও কমপ্লিট শাট ডাউনের মধ্যেও বেনাপোল কাস্টমস হাউসে কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দপ্তরে উপস্থিত থেকে রাজস্ব আদায়ের তদারকি করায় চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে বলে জানান, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান।
দূরত্ব কম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বছরে পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৪.২৪ মে. টন পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ভারতে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪০.২১ মে. টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি কম হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি হচ্ছে এবং ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক রপ্তানি হচ্ছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৭৪.৮৫ মে. টন রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০.৭৭ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৬৬৫.১৫ মেট্রিক টন কম।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে সার্বিক আমদানির পরিমাণ ৮ শতাংশ কম হলেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। এটি হাউজের উল্লেখযোগ্য অর্জন।