কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংসহ গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষ স্থগিত করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) ভুক্তভোগী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে যান। ক্লাস শেষে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র‍্যাগিং, সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তারা নবীনদের শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

আরো পড়ুন:

যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা 

সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য

এ সময় ঠিকভাবে পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের একজন এবং ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন তারা। এছাড়া ‘শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন?’ বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়। এতে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। 

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন। 

অভিযুক্ত আবর্তনের শ্রেণি প্রতিনিধি ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র‍্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিসের সমস্যা যে ছেলের, তার সঙ্গে রুমে ঢোকার সময় একজনের ধাক্কা লাগে। এতে ওই বিষয়টি ঘটে গেছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”

একই আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।” 

রাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মাত্র ৫-১০ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।”

তবে ভুক্তভোগী আবর্তনের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।” 

লিখিত অভিযোগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভাগের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জেনে গেছে।”

থাপ্পড় মারার অভিযোগে শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, “র‍্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য।”

তিনি বলেন, “যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”

এ বিষয়ে কল দিলে বিভাগীয় প্রধান ড.

মেহের নিগার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র একজন গঠন কর বর ষ র আম দ র ব ষয়ট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইইউর বাইরের দেশে নতুন ৫ লাখ কর্মভিসা দেবে ইতালি

শ্রমিকসংকট মোকাবিলায় বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির কৌশলের অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকদের প্রায় ৫ লাখ নতুন কর্মভিসা দেবে ইতালি।

২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এ ভিসা দেওয়া হবে বলে গতকাল সোমবার ইতালির মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০টি ভিসা দেওয়া হবে। পরে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনকে বৈধপথে কর্মভিসা নিয়ে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

ডানপন্থী জোটের প্রধান হিসেবে প্রায় তিন বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এ ধরনের উদ্যোগ নিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তাঁর সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করার কথা জানিয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

ইতালির জর্জিয়া মেলোনি সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করা শুরু করেছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

নতুন শ্রমিক নেওয়ার পাশাপাশি, মেলোনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া দ্রুত করা ও ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
গতকালের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শ্রম ও শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এবং গত কয়েক বছরে জমা পড়া প্রকৃত কর্মভিসার আবেদন যাচাইয়ের ভিত্তিতে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে; যাতে ব্যবসার প্রয়োজন মেটানো যায় ও কার্যক্রমটি বাস্তবসম্মত হয়।’

বয়স্ক জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও নিম্ন জন্মহার ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালিতে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। ইতালিতে ২০২৪ সালে নতুন শিশু জন্মের চেয়ে ২ লাখ ৮১ হাজার বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট জনসংখ্যা ৩৭ হাজার কমে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজারে নেমে গেছে। এক দশক ধরেই দেশটিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

ইতালির কৃষি-পেশাজীবীদের সংগঠন কোলদিরেত্তি সরকারের এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি মাঠে শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও দেশের খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গত রোববার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, ‘বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

চলতি জনসংখ্যার হ্রাস ঠেকাতে এবং বর্তমান জনসংখ্যার স্তর ধরে রাখতে ইতালিকে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি অভিবাসী গ্রহণ করতে হবে—ওসেরভাতোরিও কন্তি পাব্বলিচি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনইতালির ভিসা ভোগান্তিতে ৬০ হাজার কর্মী ১৫ অক্টোবর ২০২৪আরও পড়ুনসম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ইতালিতে কর্মী কম যাচ্ছেন, কারণ কী ১০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
  • আবেগে নেইমারের স্বাক্ষর করা বল নিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড
  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়
  • শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
  • আগের পাঁচ মাসের চেয়ে জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
  • প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে সুবাতাস
  • লুকিয়েও বাঁচেন না কাব্য, ক্যামেরাম্যান খুঁজেই ফেলে!
  • কনটেইনার পরিবহনে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম বন্দর
  • ইইউর বাইরের দেশে নতুন ৫ লাখ কর্মভিসা দেবে ইতালি