র্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত
Published: 3rd, July 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংসহ গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষ স্থগিত করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) ভুক্তভোগী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে যান। ক্লাস শেষে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র্যাগিং, সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তারা নবীনদের শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
আরো পড়ুন:
যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা
সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য
এ সময় ঠিকভাবে পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের একজন এবং ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন তারা। এছাড়া ‘শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন?’ বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়। এতে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন।
অভিযুক্ত আবর্তনের শ্রেণি প্রতিনিধি ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিসের সমস্যা যে ছেলের, তার সঙ্গে রুমে ঢোকার সময় একজনের ধাক্কা লাগে। এতে ওই বিষয়টি ঘটে গেছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”
একই আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।”
রাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মাত্র ৫-১০ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।”
তবে ভুক্তভোগী আবর্তনের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।”
লিখিত অভিযোগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভাগের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জেনে গেছে।”
থাপ্পড় মারার অভিযোগে শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, “র্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য।”
তিনি বলেন, “যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
এ বিষয়ে কল দিলে বিভাগীয় প্রধান ড.
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র একজন গঠন কর বর ষ র আম দ র ব ষয়ট তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসির ফলাফল: নীলফামারীর ১০ কলেজে পাস করেনি কেউ
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় নীলফামারীতে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউই পাশ করেননি। এই ১০টি কলেজ থেকে ৪০ জন পরিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
এইচএসসির ফলের আড়ালে চোখের জল, শিক্ষায় কীসের সংকেত
এইচএসসির ফল: সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বড় সাফল্য, পাশের হার ৯৮.৫
এদিকে, নাম সর্বস্ব এসব কলেজ স্থানীয় শিক্ষাথীদের জীবন ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। নীলফামারী সদরের লক্ষীচাপ গ্রামের সৃজনশীল কলেজে ছাত্র-ছাত্রী তো দুরের কথা, ক্লাস রুমে কোনো চেয়ার, বেঞ্চ বা শিক্ষা উপকরণ নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
কলেজটির জমিদাতা মজিবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “এখানে প্রিন্সিপ্যাল-প্রফেসর কেউ নেই। ছাত্ররা কে কোথায় পরীক্ষা দিল—এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।”
অভিভাবক নূর উদ্দীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে কলেজটি বন্ধ অবস্থায় আছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কিছুই হচ্ছে না এখানে। এ ধরনের কলেজ এলাকায় শিক্ষাথীদের জীবন নষ্ট করছে। এমন কলেজ থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।
তবে কোথাও কোথাও লেগেছে ২০২৪-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধাক্কা। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন রাজনীতির শিকার হয়েছে কলেজের লেখাপড়া।
ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে একসময় অনেক শিক্ষার্থী ছিল। নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে লেখাপড়া, শিক্ষার্থী-সবই শূন্যের কোটায় বলে জানিয়েছেন কলেজটির প্রভাষক মো. জাকারিয়া ইসলাম।
এই কলেজের অনেক শিক্ষক ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকে আর কলেজে আসেন না বলেও জানান তিনি।
এদিকে, কেউ পাশ না করা কলেজগুলোর পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- জলঢাকা উপজেলার বাগুলাগাড়ী স্কুল ও কলেজ, চাওড়াডাংগী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজ, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়ান খাল স্কুল ও কলেজ, ডিমলা উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল ও কলেজ, জেলা পরিষদ স্কুল ও কলেজ, সীমান্ত কলেজ, গয়াখড়িবাড়ী বালিকা কলেজ, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষিচাপ সৃজনশীল কলেজ এবং সাতপাই হাই স্কুল ও কলেজ।
ঢাকা/সিথুন/মেহেদী