৭ মাস নারীকে বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেন নোবেল, ৯৯৯-এ কল পেয়ে উদ্ধার: পুলিশ
Published: 20th, May 2025 GMT
রাজধানীর ডেমরা থানায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার রাত ২টার দিকে ডেমরা থানাধীন স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডেমরা থানায় করা এক নারীর মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয় এবং নোবেলের সঙ্গে তার মাঝে মধ্যে মুঠোফোনে যোগাযোগ হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল ওই নারীর সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গিয়ে দেখা করেন। তারপর নোবেল তার ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর উদ্দেশে ওই নারীকে বাসায় নিয়ে এসে আরও ২/৩ জন অজ্ঞাত সহযোগির সহায়তায় নোবেলের বাসায় তাকে আটক রাখে। ঘটনার সময় নোবেল ভিকটিমের মোবাইল ভেঙে ফেলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করেন। তারপর ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গতকাল ১৯ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নোবেলের বাসায় আটক রাখেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নারীকে নোবেলের মারধরের একটি ভাইরাল হয়, যার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে। পরে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার ঘটিকায় ডেমরা থানা পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে বলে জানান ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান।
ওসি মাহমুদুর রহমান জানান, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
দুই বছর আগেও নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সেবার প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন নোবেল। কিন্তু পরে আর তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলার গানের শো সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই তাকে ঘিরে আলচনা-সমালোচনা ছিল। একটা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শো করতে গেলেও সেখানেও তাকে নিয়ে সমালচনা হয়। ২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন তিনি। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নোবেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন শিল্পীর দিকে। সেই ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর অন ষ ঠ ন ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
আয়ে শীর্ষে অ্যাপেক্স, মুনাফায় বাটা
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর চেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। গত জানুয়ারি–মার্চে জুতার দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ৫৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। একই সময়ে জুতার বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শু ব্যবসা করেছে ৩৫৮ কোটি টাকার। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স ১৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ৫১ শতাংশ বেশি ব্যবসা বা আয় করেছে।
বাটার চেয়ে অ্যাপেক্স বেশি ব্যবসা করলেও মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে বাটা শু। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাটা মুনাফা করেছে ৩৭ কোটি টাকা। সেখানে অ্যাপেক্সের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে অ্যাপেক্সের চেয়ে ৫১ শতাংশ কম ব্যবসা করেও বাটা শু অ্যাপেক্সের চেয়ে ৩৬ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। মূলত দুটি কারণে মুনাফায় অ্যাপেক্সকে টপকে গেছে বাটা। তার মধ্যে অন্যতম অ্যাপেক্সের তুলনায় বাটার পণ্য উৎপাদন খরচ ছিল কম। আবার ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ খরচও অ্যাপেক্সের তুলনায় অনেক কম ছিল বাটার।
কোম্পানি দুটির গত জানুয়ারি–মার্চের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে সম্প্রতি কোম্পানি দুটি আলাদাভাবে তাদের এই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বাটা ও অ্যাপেক্সের ব্যবসা ও মুনাফার এই তারতম্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩৫৮ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে বাটা শুর পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৫৪ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ হয়েছে। আর জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে অ্যাপেক্সের ৫৪০ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির আয়ের ৭৭ শতাংশ অর্থ পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে। এই তুলনায় দেখা যায়, ১০০ টাকা আয় করতে বাটার উৎপাদন খরচ যেখানে ৫৪ টাকা, সেখানে অ্যাপেক্সে ১০০ টাকার আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ ৭৭ টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে ভালো ব্যবসা করেও বাটার চেয়ে বেশি মুনাফা করতে পারেনি দেশীয় কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ বাটার খরচ ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। একই সময়ে এই খাতে অ্যাপেক্সের খরচ ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এই সুদ ব্যয়ও মুনাফার ক্ষেত্রে অ্যাপেক্সকে বাটার চেয়ে পিছিয়ে দিয়েছে।
ভালো ব্যবসা করেও মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) দিলীপ কাজুরি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাটার তুলনায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি। এ কারণে বাটার চেয়ে বেশি ব্যবসা করেও আমরা মুনাফায় পিছিয়ে রয়েছি। বাটা তাদের জুতার বড় অংশ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করে। এমনকি দেশজুড়ে শোরুমগুলোর কর্মীদের বড় অংশও আউটসোর্সিংয়ে করা হয়। সেখানে আমাদের পণ্য তৈরি হয় নিজস্ব কারখানায়। দেশজুড়ে আমাদের আউটলেটগুলোও পরিচালিত হয় নিজস্ব কর্মী দিয়ে। এ কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বাটার তুলনায় বেশি। আমরা পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করি না। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রার বিনিময় হারসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি। এ কারণেও আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে।
দেশে জুতার বাজারে বর্তমানে শীর্ষ দুই কোম্পানি অ্যাপেক্স ও বাটা। জুতার বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে বহুজাতিক বাটাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলেছে অ্যাপেক্স; কিন্তু মুনাফায় বাটার চেয়ে পিছিয়ে আছে অ্যাপেক্স। বাটা শু তাদের আর্থিক বছরের হিসাব করে পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি–ডিসেম্বর) সঙ্গে মিলিয়ে। আর অ্যাপেক্সের আর্থিক বছর হিসাব হয় অর্থবছরের (জুলাই–জুন) সঙ্গে মিলিয়ে। সেই হিসাবে অ্যাপেক্সের সর্বশেষ হিসাব বছর ছিল ২০২৩–২৪ অর্থবছর। ওই বছর কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার। তার বিপরীতে হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা। আর বাটা শু ২০২৩ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরে ব্যবসা করেছে ৯৮৮ কোটি টাকার। তার বিপরীতে বহুজাতিক কোম্পানিটি বছরের শেষে মুনাফা করেছিল ৪০ কোটি টাকা।
কোম্পানি দুটির পুরো বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, বাটার চেয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেও মুনাফায় পিছিয়ে ছিল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। সেটিরও অন্যতম কারণ উৎপাদন খরচে পিছিয়ে থাকা। ২০২৩–২৪ হিসাব বছরে অ্যাপেক্সের ১০০ টাকা আয় করতে পণ্য উৎপাদনের পেছনে খরচ করতে হয়েছে ৭০ টাকা। সেখানে বাটার ১০০ টাকার আয়ের জন্য উৎপাদন খরচ ছিল ৫৪ টাকা।
জানতে চাইলে বাটা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঈদের কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করেছে বাটা। এই সময়ে উৎপাদন সক্ষমতা সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। আবার দর-কষাকষির মাধ্যমে অনুকূল শর্তে কাঁচামাল সংগ্রহ করেছে। সেই সঙ্গে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর ফলে প্রথম প্রান্তিকে ভালো মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাটা বাংলাদেশ জানিয়েছে, সাত বছর ধরে চামড়া ও পাদুকা খাতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে তারা। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক ও কর বাবদ মোট ২৮১ কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।