হৃদয়-শরিফুলদের ফিল্ডিং দেখে শঙ্কিত সাবেকরা
Published: 21st, May 2025 GMT
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের বিগত এক-দেড় বছরের পারফরম্যান্স সমর্থকদের মধ্যে হয়তো ভয়ের সঞ্চার করেছে; যে কারণে আরব আমিরাতের কাছে টি২০ সিরিজ হারের শঙ্কা অনেকের মনে। শারজাহতে আমিরাতের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হলে এ শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। কারণ বিগত দুই ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো স্বাগতিকরা নিজেদের উজাড় করে খেলেছে। আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে তেমনি ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবে তারা। আর বাংলাদেশ তো সব সময় জেতার জন্যই খেলে। এর পরও সমর্থক মনে শঙ্কার উৎপত্তি প্রিয় দলের বাজে খেলার কারণে।
আমিরাতের মতো একটি অপেশাদার দলের বিপক্ষে ছন্নছাড়া বোলিং-ফিল্ডিংকে পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান ও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। গেল ম্যাচের একাদশে চারটি পরিবর্তন হলেও ব্যাটিং মন্দ হয়নি। তানজিদ হাসান তামিম (৫৯) ও লিটন কুমার দাসের (৪০) ভালো করা এবং মিডলঅর্ডারে তাওহীদ হৃদয়ের ৪৫ রান বড় স্কোরে নিয়ে গেছে বাংলাদেশকে। ২০ ওভারে ২০৫ রান করা দলের ম্যাচ হেরে যাওয়া হতাশাজনক।
রকিবুল হাসানের মতে, 'আমরা কাল (সোমবার) ম্যাচটা হেরেছি তিনটি কারণে- দুর্বল বোলিং, দুর্বল ফিল্ডিং ও দুর্বল চিন্তা। ক্রিকেটে চিন্তা ও উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে খেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে খুবই বোকার মতো খেলেছে তারা। থ্রো করার দরকার নেই, তবু থ্রো করে অতিরিক্ত ৪ রান দিয়েছে। আউট হয় অথচ আউট করতে পারেনি। যেখানে সাবধানে বল করার কথা, সেখানে নো বল করেছে।
এগুলো চিন্তার বিষয়। একটা টাইট ম্যাচে এত ভুল হলে জেতা যায় না। এর পরও শেষ ওভার পর্যন্ত গিয়েছিল ম্যাচটি। সে সুযোগও আমরা হাতছাড়া করেছি।' তিনি বলেন, ‘শরিফুলের থ্রোটা সাংঘাতিক রকমের ভুল। ব্যাকআপ না থাকার পরও ওভাবে থ্রো করেছে। শেষ ওভারে ৭ রানের খেলা সেখানে নো এবং ওয়াইড বল করেছে। এককথায় বুদ্ধি দিয়ে খেলা হয়নি।”
পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজটি ঠিক করা হয়েছিল। সেই সিরিজও চাপহীন খেলতে পারলেন না লিটনরা। কোনো ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। পেস বোলিংয়ের সেনসেশন নাহিদ রানার টি২০ অভিষেক হলো পরাজয়ে। ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে হতাশ করেছেন এই বোলার। প্রত্যাশিত বোলিং করতে পারেননি তিন সংস্করণের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা তানজিম হাসান সাকিবও।
তবে বেশি চোখে লেগেছে শরিফের ওভার থ্রো, রানার রানআউট করতে না পারা আর হৃদয়ের খামখেয়ালি ফিল্ডিং। সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর চোখে পরাজয়ের কারণ ভুল ফিল্ডিং, ‘২০৫ রান টি২০ ম্যাচে অনেক স্কোর। বোলিং ভালো হলে নিরাপদে জেতার মতো রান। এই রান ইউএই দল তাড়া করে ফেলবে, তা কোনোভাবে চিন্তায় আসে না। আমরা সেভাবে বোলিং-ফিল্ডিং করতে পারিনি। খুবই দুঃখজনক একটি সহযোগী দেশের সঙ্গে খেলে হেরে গেছি। ওরা ছয় দিন চাকরি করে এক দিন ক্রিকেট খেলে। তাদের কাছে ম্যাচ হার ভালো বার্তা দেয় না। এ রকম হারলে প্রশ্ন ওঠে ক্রিকেটটা কোন দিকে যাচ্ছে। এ কারণে এসব দলের বিপক্ষে সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে হয়।'
কোনো সন্দেহ নেই লিটনরা আজ 'সিরিয়াস' ক্রিকেট খেলে সিরিজ জিতে পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতি নেবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েকবার শর্ত বদল, তবুও টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে পারছে না বিসিবি
মাঠের ক্রিকেটে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই। নেই স্থিতিশীল পরিস্থিতিও। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ক্রিকেটে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ক্রিকেট প্রশাসনে যে অস্থিরতা, তা কাটাতে পারেনি মাঠের পারফরম্যান্সও। তাতে সবকিছুই যেন ওলটপালট। তাই তো ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি আয়ের যে উৎস, সেখানেও যা-তা অবস্থা। শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, বিশ্বজুড়েই ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আয় হয় টিভি স্বত্ব থেকে। সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে ক্রিকেট বোর্ডগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্রিকেট আগ্রহে ভাটার কারণে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রিই করতে পারছে না বিসিবি। একাধিকবার শর্ত বদল, সময়সীমা বৃদ্ধি, দাম কমানো এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর শর্ত দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছে না বিসিবি। তা রীতিমতো ভাবাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সবশেষ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দুই টেস্টের জন্য টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে না পারায় বিসিবি বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে খেলা দেখায়। যেখান থেকে কোনো লাভই করতে পারেনি। উল্টো প্রোডাকশন খরচ বহন করতে হয়েছে। সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এই সিরিজের টিভি স্বত্বও এখন পর্যন্ত বিসিবি বিক্রি করতে পারেনি। ৪ কোটি টাকায় টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে চেয়েছে বিসিবি। তাতেও আগ্রহ দেখায়নি কেউ।
শুধু তা-ই নয়, ২০২৫–২৭ হোম সিরিজের স্যাটেলাইট, ডিজিটাল এবং ডিটিএইচ সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও তাতে কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি। গত ১২ জুন ইংরেজি ও বাংলা জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায়, ১২ জুলাই ২০২৫ থেকে ১৫ জুন ২০২৭ পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে এসব স্বত্ব বিক্রয়ের জন্য আগ্রহীদের দরপত্র দিতে হবে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৮ জুলাই। কিন্তু বিসিবি যেসব শর্ত দিয়েছিল, তা মেনে কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।
আরো পড়ুন:
সাইফউদ্দিন-নাঈম শেখকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা
দশ বছরে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বাজে অবস্থা বাংলাদেশের
বিসিবি যে শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সিকিউরিটি ডিপোজিট। এই অর্থ ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, অপরিবর্তনীয় ব্যাংক গ্যারান্টি বা ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিশাল এই অঙ্ক জমা দিতে রাজি নয় কোনো প্রতিষ্ঠানই। কোনো সাড়া না পেয়ে বিসিবি গত ২৭ জুন ও ৪ জুলাই দরপত্রে সংশোধনী আনে এবং শুধুমাত্র পাকিস্তান সিরিজের জন্যও আলাদা দরপ্রস্তাব আহ্বান করেছে। তাতেও কোনো প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে বিসিবির একাধিক পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা কেউ কথা বলতে রাজি নন। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ বাজেভাবে হারের পর আড়ালে চলে গেছেন তারা।
টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে না পারলেও স্পন্সরশিপ স্বত্ব এই সিরিজের বিক্রি করতে পেরেছে বিসিবি। পাকিস্তান–বাংলাদেশ সিরিজের স্পন্সর হয়েছে কেএফসি।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল