বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পালের বিরুদ্ধে নিয়মের বাইরে গিয়ে দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি নীতিমালা উপেক্ষা করে চারজন ঠিকাদারের অনুকূলে ৩০ লক্ষাধিক টাকার কার্যাদেশও দেন। এই অনিয়ম তদন্তের দাবি জানিয়ে ইউএনও তাপস পাল ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
১৯ মে এ অভিযোগ দেন ঠিকাদার মো.
লিখিত অভিযোগে রফিকুল মোল্লা উল্লেখ করেছেন, ৮ মে দরপত্র আহ্বানের তারিখ দেখানো হলেও পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়নি। ১৪ মে বেলা ১১টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের নোটিশ বোর্ডে ওই দরপত্র আহ্বানের নোটিশ টানানো হয়নি।
১৫ মে চারটি দরপত্রের বিপরীতে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন ইউএনও তাপস পাল। প্রথম দরপত্রের জন্য কার্যাদেশ পায় শেখ মো. জাহিদুজ্জামানের মালিকানাধীন মেসার্স জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ। দুই নম্বর দরপত্রের কাজ দেওয়া হয় চিরঞ্জীব বিশ্বাসের মালিকানাধীন মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজকে। তিন নম্বর দরপত্রের কার্যাদেশ পায় তাহজ্জত খানের মালিকানাধীন মেসার্স ইউসুফ খান এন্টারপ্রাইজ। চার নম্বর দরপত্রের কার্যাদেশ দেওয়া হয় মো. ফারুক মল্লিকের মল্লিক ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজকে।
জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শেখ মো. জাহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কোনো কাজ পাইনি। কে আপনাকে এসব তথ্য দিয়েছে?’
ইউএনও তাপস পাল বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে চারটি কাজের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। সামনে জুন মাস হওয়ায় উপজেলা পরিষদের আরও কিছু কাজ করানো হবে, এজন্য একসঙ্গে দরপত্র আহ্বান করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যান তিনি।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, ‘চিতলমারীর দরপত্র আহ্বানসংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট স স ক র ও ম র মত র দরপত র দরপত র র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সেবায় দুর্ভোগ, ৬ মাসেও হস্তান্তর হয়নি নতুন ভবন
৯ তলাবিশিষ্ট সুবিশাল ভবন নির্মাণের ছয় মাস পেরিয়েছে। এখনও স্থাপন করা হয়নি একটি লিফটও। যে কারণে ভবনটি হস্তান্তর করেনি গণপূর্ত বিভাগ। ফলে চালু করা যায়নি পিরোজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে করে উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। চিকিৎসার জন্য তাদের যেতে হচ্ছে খুলনা-বরিশালসহ দেশের বড় বড় শহরের হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হওয়ার সময় ১৯৮৬ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে নতুন ভবনে চালু হয় ৫০ শয্যার হাসপাতাল। ২০০৫ সালে সেটি ১০০ শয্যার উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। নদীবেষ্টিত পিরোজপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এখানে থাকতে চাইতেন না। জেলার মানুষকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে হতো খুলনা বা বরিশালে। এখন দিনে সহস্রাধিক রোগী আসেন।
সূত্র জানায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালে অধিকাংশ সময়ই রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় দ্বিগুণ। শয্যা না পেয়ে রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয় রোগী ও তার স্বজনের। বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরও।
পিরোজপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ার বাসিন্দা মনিরুল আলম সেলিম বলেন, বর্তমান ১০০ শয্যার হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট। সামান্য চিকিৎসা দিয়েই খুলনা বা বরিশাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। এলাকার গরিব ও সাধারণ মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী পারভেজ আকন বলেন, জেলা হাসপাতালের নতুন ভবন মাসের পর মাস পড়ে আছে। তাই রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোগী বাড়ায় ২০১৭ সালে এই হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালে ১২ তলা ভিতবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শুরু করে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগ। শুরুতে সাততলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন ও বরাদ্দ পেয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে আরও দুটি তলা সম্প্রসারণ করে ৯ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়।
প্রথম দরপত্র অনুযায়ী ৪০ কোটি টাকার কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড। ৬ কোটি টাকার অষ্টমতলা ও ৫ কোটি টাকার নবম তলার নির্মাণের কাজ করে খান বিল্ডার্স ও কহিনূর কনস্ট্রাকশন। নবনির্মিত আধুনিক এ ভবনে সিসিইউ, আইসিইউ বিভাগসহ শতাধিক কেবিন আছে। পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিট, করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আলাদা ওয়ার্ড আছে। এই ভবনে চারটি লিফটের জায়গা আছে।
শুরুতে ২০২০ সালের জুনে ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় ভবন নির্মাণের মূল কাজ। লিফট স্থাপন না করায় ছয় মাসেও ভবনটি হস্তান্তর হচ্ছে না।
জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রের ভাষ্য, নতুন ভবনে চারটি আধুনিক লিফট স্থাপনের জন্য ২০২২ সালে চার দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। কোনো ঠিকাদারই এ দরপত্রে অংশ নেননি। ওই সময়ে লিফট স্থাপনে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাজারদরের চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম থাকায় ঠিকাদাররা আগ্রহী হননি বলেও জানায় সূত্রটি।
এ বিষয়ে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. রাইসুল ইসলাম জানান, লিফট স্থাপনের জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রাক্কলন জমা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বরাদ্দ পেলে নতুন দরপত্র আহ্বান করবেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের সীমানা দেয়াল নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
নতুন ভবনে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবলও পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এলে জেলাবাসীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হবে না।