আড়াই মাস আগে নগরের একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিচয় হয় শাফায়েত উল্লাহ নামের এক কলেজছাত্রের। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠলে পরস্পরের ছবি বিনিময় করেন। এরপর কলেজছাত্রীর ছবি সম্পাদনা করে অশ্লীলভাবে তৈরি করেন ওই ছাত্র। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আদায় করা হয় ২১ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এরপরও থেমে থাকেননি শাফায়েত। আরও টাকা চাইলে বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের চকবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নগর–পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছবি আদান–প্রদানের পর কলেজছাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন শাফায়েত। প্রথমে কলেজছাত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। তখন টাকা দিতে না পারায় তাঁর কাছে স্বর্ণালংকার চান। বাধ্য হয়ে মায়ের দুই ভরি ওজনের দুটি সোনার চুড়ি গত ৫ মার্চ নগরের দিদার মার্কেট এলাকায় শাফায়েতের হাতে তুলে দেন কলেজছাত্রী। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার টাকা দাবি করেন। টাকা না থাকায় দফায় দফায় কানের দুল, নেকলেস, আংটিসহ মোট ২১ ভরি স্বর্ণালংকার তুলে দেন শাফায়েতের হাতে, যার মূল্য সাড়ে ৩১ লাখ টাকা।

পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ২১ ভরি স্বর্ণালংকার পেয়েও ক্ষান্ত হননি শাফায়েত। তিনি আবারও ওই কলেজছাত্রীকে চাপ দিতে থাকেন। দাবি করেন দুই লাখ টাকা। গত ১৫ এপ্রিল নগরের চেরাগী মোড় এলাকায় ৩০ হাজার টাকাসহ দফায় দফায় মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দেন শাফায়েতের হাতে। কিন্তু আরও টাকা দাবি করতে থাকেন। শেষমেশ কলেজছাত্রী বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন।

ছবি আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ছবি যত কম শেয়ার করা যায়, তত নিরাপদ।

গ্রেপ্তার শাফায়েতকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি আলমগীর হোসেনকে লিবিয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আরেকজনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণকারীরা ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে ভুক্তভোগীর স্বজনদের ফোন করে মুক্তিপণ না দিলে হত্যার হুমকি দিত।

পিবিআইবি ঢাকা মহানগর উত্তরের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আলমগীর হোসেন (৪২) লিবিয়ায় জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল বুধবার দেশে পৌঁছেছেন। আর সিরাজ উদ্দিনকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আলমগীর ও সিরাজ লিবিয়ার ত্রিপোলিতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সেখান থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। এরপর ইমো অ্যাপের মাধ্যমে দুজনকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চান অপহরণকারীরা। তাঁদের স্বজনেরা অপহরণকারীদের কাছে দেড় লাখ টাকা পাঠান। তবে মুক্তিপণের বাকি টাকার দাবিতে অপহরণকারীরা আলমগীর ও সিরাজকে নির্যাতন চালাতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় গত ২৯ জানুয়ারি আলমগীরের বড় ভাই আবদুল মালেক (৫২) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর আদাবর থানায় মামলা করেন। পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর মামলাটির তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি ওই ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার কড়ইতলা মোড় থেকে রাসেল হক (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাসেলের মামা কামাল হোসেন অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তিনি লিবিয়ায় থাকেন। মুক্তিপণের টাকা লেনদেন নিয়ে কামালের সঙ্গে রাসেলের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। রাসেলের মুঠোফোনে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাসেলের মুঠোফোনটি জব্দ করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, রাসেলকে গ্রেপ্তারের পরও নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় আরও ৪ লাখ টাকা অপহরণকারীদের কাছে পাঠায় ভুক্তভোগীর পরিবার। লিবিয়ায় অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে মিন্টু ফরাজীকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের পর অপহৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন অপহরণকারীরা। কিন্তু অপহৃতদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেন। তাঁরা বেশির ভাগ সময় অপহরণকারীদের মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে কথা বলতেন। মাঝেমধ্যে ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের ইমো আইডি থেকে স্বজনদের কল করে টাকা না দিলে অপহৃতদের হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।

আলমগীর ও সিরাজের বরাত দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের হাত–পা বেঁধে মারধর করতেন। কখনো কখনো পায়ের তালুতে পিভিসি পাইপ ও বিদ্যুতের মোটা তার দিয়ে মারতেন। খাবার ও পানির কষ্ট দিতেন। এমনকি শীতের মধ্যে খালি গায়ে মুখে গামছা ভরে শরীর দেয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে মারধর করা হতো। পরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লিবিয়ার ত্রিপোলির জিলজিয়া হাসপাতাল এলাকায় অপহৃত আলমগীর হোসেন ও সিরাজ উদ্দিনকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

অপহরণকারীরা যাতে মুক্তিপণের টাকা তুলতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহায়তায় অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, পিবিআই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে আলমগীর ও সিরাজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়। আলমগীরের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল এবং সিরাজের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তিনি বলেন, অপহরণের সঙ্গে দেশে যারা জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। লিবিয়ায় অবস্থানরত অপহরণকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লন্ডন ঘোষণা বাস্তবায়ন নির্ভর করছে ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর
  • ‘টাকা নাই জীবন নাই’ নামের আইডি থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো
  • শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান ফখরুলের
  • নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে: মির্জা ফখরুল
  • লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের হাত থেকে বেঁচে ফিরলেন ৩ বাংলাদেশি
  • দেশের মঙ্গলের জন্যই দেশকে দ্রুত নির্বাচনের ট্র্যাকে ওঠাতে হবে: ফখরুল