‘আদালত প্রাঙ্গনে মব নিয়ে সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে 'মিথ্যা' আখ্যা দিয়ে এবং তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায়, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ যুব ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। 

শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে জেলা যুব ফেডারেশন আহ্বায়ক সাকিব হোসেন হৃদয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম ইফতির সঞ্চালনায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জাহিদ সুজন।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব নারায়ণগঞ্জ এর দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ আকাশ, মুখপাত্র গাজি রাকিবুল ইসলাম হিমেল, শ্রমিক সংহতি নারায়ণগঞ্জ এর সদস্য সচিব মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ এর সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, যুব নারায়ণগঞ্জ এর যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মোল্লা এবং গণসংহতি জেলার অন্যতম নেতা আলমগীর ইসলাম আলম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে জাহিদ সুজন বলেন, "নারায়ণগঞ্জের ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য ও সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানকে ভুয়া মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।"

তিনি পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, "আমরা পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম জিসানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ থাকলে হাজির করুন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।" 

তার দাবি, পুলিশ জানিয়েছে জিসানের গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। সুজন অভিযোগ করেন, "স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে একই রকমভাবে প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হতো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ বনাম ইসলামের নামে ভূয়া দ্বন্দ্ব তৈরি করে মানুষকে বিভাজিত করে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিলো।"

জাহিদ সুজন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা গত ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে বলেছি, বাংলাদেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকে, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।"

তিনি আন্তর্জাতিক প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "একদিকে আমাদের পাশের দেশ ভারত অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করছে।"

২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে আলমগীর হোসেন আলম বলেন, "২৪'এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলাম। ন্যায় বিচার ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছিলাম।"

তবে তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের পরে আদালত-প্রশাসনে মব হাজির করে কিছু গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ আদায় করেছে।"  

তিনি আরও দাবি করেন, "আমরা জানতে পেরেছি ১৮ নং ওয়ার্ডের এক মাদকাসক্ত ব্যক্তি বিএনপির নেতা বন্যায় ত্রাণ দুর্নীতি করেছিল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে জিসানকে প্রতিহিংসাবশত মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে।"

এদিকে সভাপতির বক্তব্যে জেলা যুব ফেডারেশন আহ্বায়ক সাকিব হোসেন হৃদয় বলেন, আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের পক্ষে। জিসানকে যে কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটা একেবারে একটি বানোয়াট।

মেয়র আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় জিসান নাকি পুলিশকে অবরুদ্ধ করেছে। আদতে সে সেদিন সেখানে ছিলোই না। 

প্রশানকে বলতে চাই আপনাদের উপর নাগরিকদের অনাস্থা তৈরী হয়েছিলো, কিন্তু আপনাদের ক্ষমা করে নাগরিকরা আপনাদের প্রতি আস্থা তৈরী করেছে।

আপনারা পুনরায় আবার অনাস্থা ফিরিয়ে আনবেন না। আবার যদি আনেন তাহলে মাফ তো পাবেই না। আমরা সাংবাদিক ও আমাদের সবযোদ্ধা জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ এর ইসল ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০ (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ইজিবাইক চালকদের সাথে সংঘাতে জড়ালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। 

এ ঘটনায় ইজিবাইকচালকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। তাদের অবরোধে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ গেটে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়।

এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- মোঃ আবু সাঈদ (১৯), মারুফ (১৯), আসিফ (৩০), মাহিম (২২), ফয়সাল আহমেদ (২৮), হুমায়ন কবির (২৬), এনামুল হক শান্ত (২৩), শাহীন খন্দকার (২২) ও নুহেল মুন্সী আপন (২২)। তবে আহত ইজিবাইক চালকদের নাম পাওয়া যায়নি।

(ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন)

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা চাষাড়ায় ঢুকতে বাঁধা দেয় ইজিবাইক চালকদের। এ নিয়ে কথাকাটাকিাটি হয় উভয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে ইজিবাইকরা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে  ইজিবাইক চলকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। পরে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংঘর্ষের সময় ইজিবাইক চালকদের অনেকেই তাদের গাড়ির সিটের নিচ থেকে লাঠি ও লোহার রড বের করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।

ধারণা করা হয়, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ইজিবাইক চালকরা যে শিক্ষার্থীদের উপর সুযোগ পেলেই হামলা করবে। কারণ গত এক দেড় মাস ধরেই চাষাড়ায় ইজিবাইক ঢুকতে বাধা দিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জমতে থাকে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে। আজকে তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।

ওদিকে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমই থেকে আমাদেরকে ট্রাফিক মনিটরিং সেলে দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই বড় অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাষাঢ়ায় প্রবেশ করেন। পরে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যান। এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

তবে উজ্জল নামে এক অটোরিকশাচালক জানায়, ‘আমাদের চাষাঢ়া যাওয়া নিষেধ। আমরা নিষেধ উপেক্ষা করে চাষাঢ়া গেছি, এটা আমাদের অপরাধ। কিন্তু তারা আমাদের অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অনেককে তারা মারধর করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় দুই পক্ষই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মানতে একমত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ শহরের অসহনীয় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিকেএমইএ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

এরই ধারাবাহিকতায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ’র যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শতাধিক যানজট নিরসন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। এ কাজে  নিয়োগপ্রাপ্তরা বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গত প্রায় এক মাস ধরে এই শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার ফাঁকে যানজট নিরসন কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে নগরীর যানজট অনেকটা কমে এসেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • “শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, ইন্ধন থাকতে পারে তৃতীয় পক্ষের”
  • শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০ (ভিডিও)
  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি