ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
Published: 24th, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে গাছ ফেলে হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার ভোরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাসিরনগরের কামারগাঁও এলাকার আব্বাস মিয়া (৩২) ও বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের সেন্টু মিয়া (৩৬)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে অ্যাম্বুলেন্সটির গতিরোধ করে মুখোশধারী ডাকাত দল। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া মুকবুলপুর গ্রামের ছবদর আলীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সটিতে নেওয়া হচ্ছিল।
লাশবাহী গাড়িটিতে থাকা আত্মীয়স্বজনদের ওপর দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ১০-১৫ জনের ডাকাত দল। তারা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে এবং এক নারীসহ ৯ জনকে পিটিয়ে আহত করে। এমনকি মরদেহের ওপর থেকে কাফনের কাপড় সরিয়ে মৃত ব্যক্তির পা তুলে দেখে টাকা বা মূল্যবান কিছু লুকানো হয়েছে কি না। ডাকাতেরা অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ যাত্রীদের কাছ থেকে অন্তত ১০টি মুঠোফোন ও ৫০ হাজার টাকার বেশি লুট করে।
এ ঘটনায় নিহত ছবদর আলীর বড় ছেলে ও পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো.
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে ডাকাত দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে ও লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ায় বাদুড় আছে ১৫০ প্রজাতির, সেখানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৫টি। দেশের আয়তন কিংবা আবাসের বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাদুড় নিয়ে আমাদের গবেষণার ঘাটতি একটি বড় কারণ। গবেষণার উদ্যোগ যেমন কম, তেমনি আকার-আকৃতি, গুপ্তস্থানে বসবাস, চেনাজানার জটিলতায় দেশের বাদুড় সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি।
স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর নানা দিক মূলত আমার গবেষণার জগৎ। ফলে বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দেয়। তাই অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি গত দুই বছর যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে কিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি।
এই গবেষণাকালে গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রিতে যাই গুহায় বাস করা বাদুড়ের খোঁজে। সাঙ্গু নদের পাড়ঘেঁষা একটি মারমা পাড়ায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। সাঙ্গু নদের পশ্চিমে পাহাড়ি পথ। সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্র ও থানচি থেকে যোগ দেওয়া একজন গাইড। ওই পাহাড়ি পথও আমাদের অজানা। তাই গন্তব্যে যেতে একজন স্থানীয় গাইডের সন্ধানে থানচি থেকে যোগ দেওয়া গাইড আমাদের নিয়ে গেল পাশের একটি পাড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পাড়ায় বাস করে খুমি সম্প্রদায়।
পরদিন খুব সকালেই রওনা হলাম গুহার উদ্দেশে। আমাদের তিনজনের দলে খুমি পাড়া থেকে যুক্ত হন আরও চারজন। গুহাটি অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো আকৃতি। ফলে ওপর দিক থেকে গুহায় ঢুকতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে আমরা গুহার মাঝামাঝি উচ্চতা বরাবর খাঁজে দাঁড়াতে সক্ষম হই। কিন্তু গুহার ভেতরে নামার তেমন কোনো পথ নেই। গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে গুহার ভেতর নামার জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমার গবেষক ছাত্র অং শৈ নু মারমা কোনোমতেই আমাকে নামতে দিতে রাজি নয়, নামার পর যদি গুহা থেকে উঠতে না পারি! আমার মধ্যেও সাহসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিল। ফলে দিকনির্দেশনা দিয়ে খুমি পাড়ার গাইডদের ভেতরে পাঠালাম। ওরা গাছের শিকড় ধরে তর তর করে নেমে গেল নিচে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এল কয়েকটি বাদুড়ের নমুনা নিয়ে। দু–একটি বাদুড় দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলাম। এমন বাদুড় এর আগে তো দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বাদুড়ের নমুনার দৈহিক ও খুলির মাপজোখ নিলাম। কিন্তু প্রজাতি শনাক্তে তাতেও কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে দাঁতের গঠন পরীক্ষা করি। আর তখনই বেরিয়ে এল বাদুড়ের পরিচয়। প্রায় তিন মাস পর নিশ্চিত হলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি বাদুড়। এই বাদুড়ের ইংরেজি নাম মায়োটিস ব্যাট, অন্য নাম মাউস-ইয়ারড ব্যাট; লাতিন নাম মায়োটিস অ্যানেকটান্স। বাংলায় বলা যায় ইঁদুরকানী বাদুড়। এর কানের গঠন অনেকটা ইঁদুরের কানের মতো, তাই এমন নাম। তা ছাড়া এ বাদুড়ের মুখের চারপাশে কিছু লম্বা লোম থাকে। আকারে ছোট। ঊর্ধ্ববাহুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫ মিলিমিটার, লেজ তুলনামূলকভাবে লম্বা, যা প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ মিলিমিটার, দেহের তুলনায় কিছুটা লম্বা। এদের ওপরের চোয়ালের তিন নম্বর প্রিমোলার দাঁতটি অতিক্ষুদ্র, যা দাঁতের সারি থেকে ভেতরের দিকে সরে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যান্য নিকটাত্মীয় থেকে এদের আলাদা করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১২ প্রজাতির ইঁদুরকানী বাদুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু এই জাতের বাদুড়ের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। এই বাদুড় শুধু দেশের জন্য নতুন নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশ বিরল। ফলে প্রতিটি রেকর্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ম্যামালিয়া নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এই বাদুড় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করি। এই বাদুড় নথিভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বাদুড়ের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। এই বাদুড়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।
ড. এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়