পাকিস্তানে তীব্র ঝড়-বৃষ্টিতে নিহত অন্তত ১৯, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি: ডন
Published: 25th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও তীব্র ঝড়ের কারণে অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯০ জন। দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এর ফলে সেখানে সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন।
তবে দেশটির প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টিপাতে অন্তত ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৯২ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় পাঞ্জাবের রিলিফ কমিশনার নাবিল জাভেদ বলেছেন, ঝড়ে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, বাড়ির দেয়াল ও ছাদ ধসে, গাছ ও সোলার প্যানেল পড়ে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। লাহোরে অন্তত দুই ডজন সোলার প্যানেল ও বিলবোর্ড পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাঞ্জাব ছাড়াও ইসলামাবাদে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হয়, ফলে নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বহু গাছ পড়ে যায়। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
মুলতানের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (মেপকো) জানায়, ঝড়বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। মুলতান, খানেওয়াল, ভেহারি ও সাহিওয়ালে সাময়িক ব্ল্যাকআউট হয়।
খাইবার পাখতুনখোয়ায় পেশোয়ার ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (পেসকো) জানায়, ১১৩টির বেশি ফিডার ট্রিপ করে। পেশোয়ার, মারদান, সোয়াবি, সোয়াত ও অ্যাবোটাবাদে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। পেশোয়ার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
সোয়াতের মিংওরা, আমানকোট ও কামবারে জলাবদ্ধতা হয়, শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে পরীক্ষা দিতে হয়। আম্বার ও প্যান্ডিয়ালি এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েন।
এসময় ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডন। পরে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
এদিকে পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববারও পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান, ফয়সালাবাদ, শিয়ালকোট, পেশোয়ার ও মারদানে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের শুধু এক জায়গায় আছে ড্রাগনস ব্লাড ট্রি
একটি গাছ, যার রক্ত লাল। মাথা দেখতে অনেকটা ছাতার মতো, গঠন যেন কোনো গ্রহান্তরের জীবের মতো। এই প্রজাতির গাছের নাম ‘ড্রাগনস ব্লাড ট্রি’। দেখে মনে হয় যেন রূপকথার পাতা থেকে নেমে আসা কোনো চরিত্র। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ প্রজাতির গাছ এখন টিকে থাকার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে। ফুরিয়ে আসছে তার শ্বাস নেওয়ার সুযোগ।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, আগ্রাসী পশুপালন আর দশকজুড়ে চলমান যুদ্ধ এই প্রজাতির গাছকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। এই বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে একটি গোটা দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি। তবে ধূলিঝড় আর যুদ্ধের দেশ ইয়েমেনের সোকোত্রা দ্বীপে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনপণ লড়াই করছেন একদল মানুষ।
আরব সাগরের ওপর দিয়ে ধেয়ে আসা ধুলাময় বাতাসে উঁচু মালভূমিতে নিজের গোড়ালির চেয়ে নিচু এক চারাকে আগলে রেখেছেন সিনা কায়বানি। তিনি ও তাঁর পরিবার একটি নার্সারি পরিচালনার মাধ্যমে বিপন্ন এই প্রজাতির গাছ রক্ষায় একটানা লড়াই করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এসব গাছের মরে যাওয়া নিজের সন্তানকে হারানোর মতো।’
একসময় সোকোত্রা দ্বীপজুড়ে মাশরুমের মতো ছায়া দেওয়া মাথা আর কাঠের ভেতরে বইতে থাকা রক্তলাল রসের জন্য বিখ্যাত এই প্রজাতির গাছ ছড়িয়ে ছিল।
হর্ন অব আফ্রিকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোকোত্রাকে গ্যালাপাগোস দ্বীপের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটা এক নিঃসঙ্গ অথচ মোহময় দ্বীপ। এখানে ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার এক-তৃতীয়াংশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এর জীববৈচিত্র্য এতটাই বিস্ময়কর যে ২০০৮ সালে ইউনেসকো একে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা দিয়েছিল। পাথর ভেদ করে উঠে আসা ‘বোতল গাছের’ ফুলে ওঠা কাণ্ড যেন শিল্পীর হাতে গড়া ভাস্কর্য। আরও আছে ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স গাছ, যাদের প্যাঁচানো ডালপালা আকাশের দিকে এমনভাবে উঠে যায় যে দেখলে মনে হয়, প্রার্থনায় মেলে ধরা দুটি হাত।
তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের কল্পনাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করে ‘ড্রাগনস ব্লাড ট্রি’। এটা যেন এক অপার্থিব গাছ। ড. সিউসের রঙিন কল্পকাহিনি থেকে উঠে আসা কোনো জীবন্ত চরিত্র। প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার পর্যটক এই দ্বীপে পা রাখেন; যাঁদের বেশির ভাগই আসেন ড্রাগনের রক্তাভ বনের পরাবাস্তব দৃশ্য দেখতে।
সোকোত্রা দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য স্থানীয় গাইড রাখা বাধ্যতামূলক এবং দ্বীপের বাসিন্দাদের পরিচালিত ক্যাম্পে থাকার নিয়মও রয়েছে। অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে স্থানীয়রা যেন বঞ্চিত না হন, সে কারণেই এ ব্যবস্থা। কিন্তু এই প্রজাতির গাছ যদি হারিয়ে যায়, তাহলে দ্বীপবাসীর জীবিকার একমাত্র ভরসাটিও হারিয়ে যাবে। এ কারণে গাছগুলো শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এরা সোকোত্রার আত্মা।