মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন মহল্লা ও গ্রামে গ্রামে এখন পোস্টারের ছড়াছড়ি। এসব পোস্টার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কমিটির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনকে পদপ্রত্যাশী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা সাঁটিয়েছেন। এর ফলে প্রায় দুই দশক পর এই উপজেলায় সরাসরি ভোটে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থীদের সমর্থকেরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাউন্সিলরদের (ভোটার) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদপ্রার্থীরা।

২২ জুন মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়াম এলাকায় সকাল ১০টা থেকে সম্মেলন শুরু হবে। উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৫টি পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সম্মেলন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আhlsল মুকিতকে প্রধান এবং সদস্য বকসী মিছবা-উর-রহমান, আবুল কালাম বেলাল ও বকসী জুবায়ের আহমদকে সদস্য করে ৪ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

সম্মেলন সম্পন্ন করতে গঠিত নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুন সকাল ১০টা থেকে সম্মেলন শুরু হবে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৫টি পদে ১৬ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.

ফখরুল ইসলাম ও মুজিবুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আহমেদ ও সদস্য রানা খান। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোট হচ্ছে। নির্বাচিত এই পাঁচ নেতৃত্ব পরবর্তী সময়ে জেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি গঠন করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মুকিত আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, এরই মধ্যে সব প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যালট পেপার ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মুদ্রণকাজ চলছে। প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট নির্বাচন করা শেষ। ছয়টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। সদর উপজেলার ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ১৩টি শাখা কমিটির ৯২৩ জন নেতা এই সম্মেলনে ভোট প্রদান করবেন।

সম্মেলন কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নেতা-কর্মীরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরাও বড় আকারের পোস্টার সাঁটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীরা দলের সমাবেশে একযোগে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাউন্সিল সম্পর্কে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, জাতীয় কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্যসচিব আবদুর রহিম রিপনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাঁদের পছন্দের নেতা নির্বাচিত করবেন। সব প্রস্তুতি খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলছে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে। আজ সকালে আমি একটি গ্রামীণ বাজারে প্রার্থীদের বড় পোস্টার দেখেছি। পছন্দের নেতৃত্ব বেছে নিতে কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করছি। এ রকম একটি সম্মেলন প্রমাণ করছে, দলীয় ঐক্য ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে মৌলভীবাজার বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র সদস য সদর উপজ ল ব এনপ র র রহম ন র উপজ ল গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

মাদকসহ বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকারের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রেপ্তার

বগুড়ার আলোচিত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতভর অভিযানের পর আজ বুধবার ভোরে শহরের সেউজগাড়ি পাপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁদের আটক করে সেনাবাহিনীর একটি দল। থানা-পুলিশে হস্তান্তরের পর তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তুফান সরকারের স্ত্রী আইরিন আক্তার (২০), তুফানের শ্বশুর আলম আকন্দ (৪৫) ও শাশুড়ি তাসলিমা আক্তার (৪০)। অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে তুফানের শ্যালক নয়ন পালিয়ে যান।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে তুফান সরকারের ছোট স্ত্রী ছাড়াও তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ১৫ বোতল ফেনসিডিল ও বেশ কিছু ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগার পাঠানো হয়েছে।

তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁর বাড়ি শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ২১টি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভালো কলেজে ভর্তির করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই এক ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানির পর তুফানের সাবেক স্ত্রীর বড় বোন তৎকালীন পৌর কাউন্সিলর মারজিয়া এবং তুফানের সাবেক স্ত্রী ওই মেয়ে ও তাঁর মাকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেন। খবর পেয়ে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে মারজিয়া ও পরে তুফানসহ তাঁর সহযোগীদের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর বাদীর সঙ্গে আপস করে কারাগার থেকে মুক্তি পান তুফান।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে চলে যান তুফান সরকার। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। দুদকের একটি মামলায় তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদকসহ বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকারের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রেপ্তার