তালাবদ্ধ চেম্বার ভবন ঘিরে দুশ্চিন্তায় আমদানিকারক
Published: 19th, June 2025 GMT
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সুনামগঞ্জ দপ্তরে চলছে না কোনো কার্যক্রম। ১১ মাস ধরে নিষ্ক্রিয় চেম্বার অফিস সক্রিয় হয়নি প্রশাসক নিয়োগের পরও। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা আমদানিকারকদের উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে থমকে যায় সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই চেম্বারের কাজ, যে অচলাবস্থা কাটেনি ১১ মাসেও। প্রতিষ্ঠানের সভাপতিসহ চেম্বারের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা গণঅভ্যুত্থানের পর বিদেশে পাড়ি জমান। সেই থেকে চেম্বারে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এমনটাই জানিয়েছেন জেলার একাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ী।
এদিকে সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় চেম্বারসহ ওই ভবনে কোনো কর্মতৎপরতা নেই।। চেম্বারের আয়ের প্রধান উৎস সুনামগঞ্জ জেলা শহরের উকিলপাড়ায় এই চারতলা ভবনের ভাড়া বাবদ উপার্জিত অর্থ। বর্তমানে সেটিও বন্ধ। কোনো ভাড়াই জমা পড়ছে না চেম্বারের ব্যাংক হিসাবে।
চলমান পরিস্থিতিতে চেম্বার, এর সামগ্রিক কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হাজারো আমদানিকারক। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চলমান পরিস্থিতিতে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। স্বাভাবিক কার্যক্রম এখানে বন্ধ। এর মাঝে আগামী মাসে জেলার কয়েক হাজার আমদানিকারক কীভাবে তাদের আইআরসি নবায়ন করবেন এবং এলসি জমা দেবেন, তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
এর আগে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছিল সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স। এর কার্যক্রম পরিচালনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। এটি পরিচালিত হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে; চলছে আর্থিক অনিয়ম। ২০১২ সালে এমনটা দাবি করে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ মো.
সে সময় অভিযোগকারী ১৩ জন সদস্য মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর ১২ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তৎকালীন চেম্বার কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম নুরুলকে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালে রামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্ব হাতে নেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মুকুট এবং তাঁর ভাই, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মুকুট ও চপলের।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা চেম্বার ভবন ভাঙচুর করে। এখানকার কিছু আসবাব ভবন থেকে বের করে নিয়ে তাতে আগুন দেওয়া হয়। একই বছরের ১৯ নভেম্বর চেম্বার সদস্য বিএনপি নেতা আবু সাঈদ মুহাম্মদ খালিদসহ অন্যরা চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন চেম্বার কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অপরদিকে জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে সার্বিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের অচলাবস্থা দূর করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক-সুনামগঞ্জ) নিয়োগ করা হয়। সে সময় তাঁকে ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কমিটি গঠন করে নির্বাচিত কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল দায়িত্ব পাওয়ার পরও চেম্বারের কার্যক্রম সচল হয়নি।
চেম্বার সদস্য আবু সাঈদ মো. খালিদ বলেন, চেম্বারের অবৈধ কমিটি বাতিল করে গত বছর ১৯ নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন তারা। পরে তা করাও হয়েছিল। তবে এখনও কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ রয়েছে। মূলত স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ পূর্ববর্তীদের সঙ্গে মিলে এখও চেম্বার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
চেম্বারের বর্তমান পরিচালক জিএম তাশহিজ এ ব্যাপারে জানান, তিনি আট বছর সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য। চেম্বার পরিচালনায় তিনি কখনোই কোনো অনিয়ম দেখেননি। এখানকার আর্থিক রিপোর্ট তৈরি করা হয় ফার্মের মাধ্যমে। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বার্ষিক সভায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করে সব সদস্যকে জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় এ কপি দেওয়া হয়।
চেম্বারের আরেক পরিচালক এনামুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে দলীয়করণ বা পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালনা করার অভিযোগ সত্য নয়। তবে ঠিক কবে নাগাদ চেম্বারের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, এ নিয়ে কেউ নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ তৎক ল ন ব যবস য় র পর প ন র পর পর চ ল ব র কর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ছেলেকে হত্যার পর ঘরেই পুঁতে রাখলেন বাবা
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে আইয়ুব আলী (২) নামে এক শিশুকে হত্যার পর মরদেহ ঘরেই পুঁতে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের পশ্চিম ধুরাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
অভিযুক্ত বাবার নাম নুরুল আমিন (৩০)। তিনি একই গ্রামের ফজুল মিয়ার ছেলে। তবে পরিবারের দাবি, তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন নুরুল আমিন। বুধবার দুপুরে ছেলে আইয়ুবকে নিজের কাছে নেন তিনি। পরে ধারালো দা দেখিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভয় দেখিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন নুরুল আমিন। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যরা ফেরেন। এ সময় কৌশলে ঘরে ঢুকে ছেলে কোথায় তা জানতে চান স্বজনরা, কিন্তু নুরুল আমিন জানেন না বলে জানান। পরে ঘরের পাশে মাটির স্তূপ দেখে সন্দেহ হলে তাকে আটকে রাখা হয়। তখন তিনি স্বীকার করেন, মাথায় আঘাত করায় ছেলে আইয়ুবের মৃত্যু হয়েছে। পরে নিজ ঘরে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখেন ছেলের মরদেহ। এমনকি এসময় দুটি ছাগলও হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখেন নুরুল আমিন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত শাবল ও কোদাল উদ্ধার ও অভিযুক্ত বাবা নুরুল আমিনকে আটক করে। একই সঙ্গে মরদেহ উদ্ধার থানায় নিয়ে আনা হয়।
জানতে চাইলে নিহত শিশুর দাদা ফজুল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে পাগল। আমরা বাড়িতে ছিলাম না। বিকেলে এসে শুনি, ছেলে তার বউকে মারধর করে নাতিকে নিজের কাছে নিয়ে রেখে দেয়। সন্ধ্যায় ঘরে গিয়ে দেখি, হত্যা করে গর্তের ভেতরে রেখে দিয়েছে।’
হালুয়াঘাট সার্কেলের এএসপি সাগর সরকার বলেন, খবর পেয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার বাবাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।