নরসিংদীতে সই জালিয়াতি করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, ৫২ লাখ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২
Published: 2nd, July 2025 GMT
নরসিংদীর শিবপুরে সই জালিয়াতি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি থেকে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের কার্যসহকারী আরিফুল ইসলাম (৩৫) ও পিয়ন আশিক ভূঁইয়া (২৫)। আরিফুল ইসলাম ওরফে তুহিন পৌর এলাকার হোসেন আলীর ছেলে ও আশিক ভূঁইয়া খড়িয়া এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর-কাবিখার ৪৩০টি বিল পাস করে শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। এসব বিল উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের মধে৵ বিতরণ করার জন্য উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে জানানো হয়, ৪৩০টি বিলের মধ্যে ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আগেই উত্তোলন করা হয়ে গেছে।
পরে সোনালী ব্যাংকের শিবপুর শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট বিলের কপি ও ব্যাংকের পে-স্লিপ তলব করে একাধিক চিঠি পাঠান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন; কিন্তু এর কোনো জবাব না পেয়ে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সকে (এনএসআই)।
এনএসআইয়ের একটি দল তদন্ত করে দেখতে পায়, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে আরিফুল ইসলাম ও আশিক ভূইয়া জড়িত। এনএসআইয়ের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও সোনালী ব্যাংক শিবপুর শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দুই কর্মচারী টিআর-কাবিখার ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গতকাল বিকেলে আরিফুল ইসলাম ও আশিক ভুইয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা দুজন অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রতারণার মাধ্যমে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এবং সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্বাক্ষর জাল করে গত ২৭ মে ও ৪ জুন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তাঁদের থানায় আটক রাখা হয়। গতকাল আরিফুল ইসলামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় গতকাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। ওই দুজনকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ফ ল ইসল ম কর মকর ত র ৫২ ল খ উপজ ল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি