দুই দফা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের পটিয়া থানা ঘেরাও করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পটিয়া থানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা। নেতা-কর্মীদের দাবি, তাঁদের ওপর পুলিশ দুই দফা হামলা করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

এদিকে একই দাবিতে আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে পটিয়া থানার সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। এতে মহাসড়কের দুই পাশে যানজট দেখা দিয়েছে।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০–৪০ নেতা-কর্মী থানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের একটি অংশ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তারা মহাসড়কের ওপর বসে স্লোগান দিচ্ছে।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের মুখপাত্র ফাতেমা খানম প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও কর্মসূচিতে রয়েছেন। শুরুতে নেতা-কর্মীরা থানার ফটকের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে তাঁদের একজন আহত হয়েছেন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১১টায় পটিয়া থানা-পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আন্দোলনকারী পক্ষের সূত্রে জানা গেছে, রাত নয়টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

পটিয়া থানার সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

চলতি বছর আলুর ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ও সংরক্ষণের অভাবে মুন্সীগঞ্জের চাষিদের লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পারা, মূল্য কম ও বাঁশের মাচায় সংরক্ষণ করা আলুতে পচন ধরার কারণে কৃষকের মাথায় হাত। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কারণে জেলার বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। এই অবস্থায় সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৬ লাখ টন আলু দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপাদন উপকরণের অতিরিক্ত দামের কারণে এবার প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ১৬ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ উঠেছে ২৬ টাকা। অথচ বর্তমানে হিমাগার থেকে আলুর পাইকারি দাম মিলছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে চাষি ও ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। এই হিসাবে, হিমাগারে সংরক্ষিত ৪ লাখ টন আলুতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ৬ লাখ টন আলুর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ দেড় লাখ টন পচে গেছে। এই দেড় লাখ টন আলুর উৎপাদন খরচ, বস্তা ও শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা হিসাবে লোকসানের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বাকি সাড়ে ৪ লাখ টন আলু নিজ বাড়ি থেকে ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করায় কৃষকের আরও ৪৯৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান প্রায় ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের ১৮ লাখ মানুষ ১২ হাজার টন আলু খেয়েছে। বাকি ৬৮ হাজার টন আলু অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও ১০ লাখ টন আলু হিমাগার ও বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জোগানই দাম কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্তের ভাষ্য, এবার ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়ে মুন্সীগঞ্জের বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার জালে আটকা পড়েছেন। মহাজন ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। অনেক কৃষকের ভিটেমাটি বিক্রি করার উপক্রম হয়েছে। পরিবারের মুখে দুই বেলা অন্ন জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এই লোকসান শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৃষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে। তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।

আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। কৃষকদের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্যথায় আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষক, যা দেশের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ