ইসলামে আজানের জবাব দেওয়া সুন্নত। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি শুধু যে নামাজের সময় জানায়. তা নয়; বরং আমাদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে আহ্বান করে।
আজ আমরা আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম শিখব।
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়মআজান শুনলে মুমিনের উচিত মুয়াজ্জিন যা যা বলেন, তা–ই আবার নিজের মুখে বলা। নবীজি (সা.
তবে দুয়েকটি বাক্যে সামান্য ব্যতিক্রম আছে। আজানের প্রতিটি বাক্যের উচ্চারণ এবং তার জবাব নিচে দেওয়া হলো:
মুয়াজ্জিন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
জবাব: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
মুয়াজ্জিন: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
জবাব: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
মুয়াজ্জিন: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
জবাব: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
মুয়াজ্জিন: হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ।
জবাব: এই দুটি বাক্যের জবাবে বলুন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (কোনো উপায় বা ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া)।
মুয়াজ্জিন: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
জবাব: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’।
মুয়াজ্জিন: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
জবাব: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
ফজরের আজানে ‘আস–সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ (নামাজ ঘুমের চেয়ে উত্তম) বলা হলে, জবাবে বলতে হবে, ‘সাদাকতা ওয়া বারারতা’ (তুমি সত্য ও ন্যায় কথা বলেছ)।
আরও পড়ুনকিশোরদের আজান শেখালেন তিনি০৯ মার্চ ২০২৫আজান শুনলে করণীয়আজান শুনলে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। কথাবার্তা বা অন্য কাজ বন্ধ করে মুয়াজ্জিনের বাক্য পুনরুক্তি করা মুস্তাহাব। আজান যখন আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করে, তখন জবাব দেওয়ার মাধ্যমে মুমিনও সেই ঘোষণায় শরিক হয়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে তা পুনরুক্তি করে, শয়তান তার থেকে দূরে পালায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৯)
আজানের পর দোয়াআজান শেষ হলে একটি বিশেষ দোয়া পড়া সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর এই দোয়া পড়বে, তার জন্য (কেয়ামতের দিন) আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৪)
দোয়াটি হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা, ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাযি ওয়া‘আদতাহু, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মি’আদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রতিপালক তুমিই, হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে দান কর ওয়াসিলা (সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও সুমহান মর্যাদা এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছে দাও, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ, নিশ্চয় তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করো না।’
আরও পড়ুনআজান এল কেমন করে ১০ নভেম্বর ২০২৪আজকাল অনেকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আজান শোনেন। এমন ক্ষেত্রেও জবাব দেওয়া যায়, তবে মসজিদের আজান শুনে জবাব দেওয়ার মর্যাদা বেশি। আজান শুনলে যেখানেই থাকুন, কাজ থামিয়ে মুয়াজ্জিনের বাক্যটি নিজেই বলুন।
গাড়ি চালানোর সময় বা কাজের মধ্যে হলেও মনে মনে জবাব দেওয়া যায়। আজান শেষ হলে ওপরের দোয়াটি পড়ুন। নারী–পুরুষ উভয়ের জন্যই এই সুন্নাহ প্রযোজ্য। তবে হায়েজ বা নিফাসের সময় নারীরা জবাব দেবেন না।
আরও পড়ুনআজান হলে জুমার নামাজে২৫ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজ ন শ ন আল ল হ আশহ দ আকব র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া খুব বড় শক্তি, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের চুক্তি করা উচিত: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’
আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূমি দাবি করেছেন।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প আর পুতিনের বৈঠকটি হয়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে—এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।
আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন১১ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।
জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোনেৎস্কের তিন ভাগ এলাকাও তার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়েছিল, সেটা ছাড়াই একটি শান্তিচুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক কি যুদ্ধ থামাতে পারবে, ইতিহাস কী বলছে১৭ ঘণ্টা আগেনিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।
এদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকাটা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার একটি মূল উপাদান হত্যা বন্ধ করা।’ জেলেনস্কি জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প–জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দুই নেতার তুমুল বাগ্বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন জেলেনস্কির সঙ্গে তর্কে জড়ান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও।
এবার ট্রাম্প অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, পুতিন আর জেলেনস্কিকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের সংবাদ সম্মেলনে ‘সংবাদ সামান্যই’১৬ আগস্ট ২০২৫যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ও রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।
তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়—ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশ ইউক্রেনীয়রা১৫ আগস্ট ২০২৫