যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর খুশি নন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নিজের মন্ত্রিসভার সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন আমাদের উদ্দেশ্য করে অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন।’

ট্রাম্প আরও বলেন, পুতিন অনেক মানুষকে হত্যা করছেন। এর মধ্যে অনেকেই তাঁর নিজের সেনা, আবার অনেকে ইউক্রেনের সেনা।

রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সিনেটের প্রস্তাবিত একটি বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

তবে ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, সেই বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আপনাদের বলব না। আমরা কি একটু চমক রাখতে পারি না?’ এরপর তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলার প্রসঙ্গের দিকে কথা ঘুরিয়ে নেন। বলেন, দীর্ঘ পরিকল্পনার পর ওই হামলা চালানো হয়েছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘ইউরোপ কখনোই ইউক্রেনকে ছেড়ে যাবে না।’

মাখোঁ বলেন, যেসব দেশ নিজেদের ইচ্ছায় ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চায়, তাদের নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স মিলে একটি জোট গড়ে তুলবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ আরও বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করব, যেন যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যায়, যেন শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু করা যায়। কারণ, ইউক্রেনে শুধু তাদের নিরাপত্তাই নয়, আমাদের নিরাপত্তা ও মূল মূল্যবোধও এখন ঝুঁকিতে পড়েছে।’

এর আগে গতকাল ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রশাসন ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠাবে। নতুন চালানটিতে মূলত ‘আত্মরক্ষামূলক’ অস্ত্র থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের অস্ত্রের মজুত কমে আসার কারণে ওয়াশিংটন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল। পেন্টাগন বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সক্ষমতা ‘পর্যালোচনা’ করছে।

নির্বাচনী প্রচার চলাকালে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেনে দ্রুত যুদ্ধ থামাবেন। ইতিমধ্যে কয়েকবার টেলিফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলাসহ বেশ কিছু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত তিনি সহিংসতা থামাতে সক্ষম হননি।

গত মে মাসে ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা তুরস্কে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন এবং বন্দিবিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হন। তবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো তো পরের কথা, দুই পক্ষ এখনো সাময়িক যুদ্ধবিরতিতেই সম্মত হতে পারেনি।

গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য সম্ভাব্য তারিখ জানতে মস্কো অপেক্ষা করছে। আলোচনার তারিখ চূড়ান্ত হলে তা ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন পেসকভ।

গত কয়েক সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে দূরপাল্লার হামলা বাড়িয়েছে। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন অংশের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে।

গত সোমবার তারা ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ডাচনে নামক গ্রাম দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ট র ম প বল ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে ৩ জনকে হত্যা: ৮ জন রিমান্ডে

কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (৯ জুলাই) কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজের ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক এ আদেশ দেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়াও রয়েছেন। অপর আসামিরা হলেন—রবিউল আউয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫), আকাশ (২৪), মো. সবির আহমেদ (৪৮) এবং নাজিমুদ্দিন বাবুল (৫৬)। তাদের সবাইকে পৃথক পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আরো পড়ুন:

গণপিটুনিতে তিনজনকে হত্যা: ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ২

প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে শ্বশুরবাড়ি পুড়িয়ে দিল গ্রামবাসী

কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. সাদিকুর রহমান জানিয়েছেন, গণপিটুনির মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে প্রত্যেক আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে। রিমান্ড শেষে মেডিকেল করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যকে গণপিটুনি ও কুপিয়ে হত্যা করে। নিহতরা হলেন—কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) এবং মেয়ে জোনাকি আক্তার (২২)। এ সময় গুরুতর আহত হন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার। রুমাকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা বেগম বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ ৬৩ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পরপরই সেনাবাহিনী এবং র‌্যাব অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে, গণপিটুনিতে তিনজনকে হত্যার মামলার তদন্তভার প্রথমে বাঙ্গরা থানাকে দেওয়া হলেও পরে তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত করছেন ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী।

ঢাকা/রুবেল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ