রেস্তোরাঁ ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা বাড়বে
Published: 11th, January 2025 GMT
সরকার আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই রেস্তোরাঁ ব্যবসাসহ বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এই খাতের ব্যবসায় অসম এক প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে অবৈধ লেনদেন। এ কারণে আমরা রেস্তোরাঁ ব্যবসায় হুট করে ভ্যাট বাড়ানোর বিরোধিতা করে আসছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের যৌক্তিক কারণগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। আমরা সারা দেশের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় মানসম্মত রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পাড়ার অলিগলিতেও রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে। সবাই ভ্যাটের আওতায় নেই। আবার ফুটপাতে, রাস্তায়ও এই ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে। এ জন্য আমাদের দাবি ছিল, ভ্যাট না বাড়িয়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হোক, কিন্তু সেটি করা হয়নি। এর ফলে এখন যেটা হবে, তা হলো যাঁরা সব নিয়মকানুন মেনে এই ব্যবসা করেন, তাঁদের ওপর ভ্যাটের চাপ বাড়বে। তাতে বাড়বে খাবারের দাম। আর যাঁরা ভ্যাটের আওতায় নেই, তাঁরা কম দামে খাবার বিক্রি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক হারাবে। তাদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর পাড়া–মহল্লার রেস্তোরাঁ যেহেতু ভ্যাটের আওতায় নেই, সেখান থেকে কর কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের একটি সুযোগ তৈরি হবে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, ধানমন্ডি এলাকার একটি মানসম্মত রেস্তোরাঁর কথা। এমনিতেই এ ধরনের রেস্তোরাঁর পরিচালন খরচ বেশি। এখন ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে সেখানে খাবারের খরচ বেড়ে যাবে। আগে ৪০০ টাকার একটি মাংসের গ্রিল বা কাবাব বিক্রি করলে ২০ টাকা ভ্যাট দিতে হতো, এখন দিতে হবে হবে ৬০ টাকা। কিন্তু পাড়া–মহল্লার দোকানে ঠিকই কিছুটা কম দামে এই গ্রিল বিক্রি হবে। খাবারের মানের হয়তো কিছুটা তারতম্য হবে। কিন্তু দামের কারণে সাধারণ মানুষ ভালো রেস্তোরাঁর বদলে পাড়া–মহল্লার দোকান থেকে গ্রিল কিনতে বেশি আগ্রহী হবেন। এতে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা কমবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫