৪৩তম বিসিএস থেকে পশুসম্পদ ক্যাডারে নিয়োগ পেলেন ৯৬ জন
Published: 11th, January 2025 GMT
৪৩তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডারে ৯৬ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৯৬ জনের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন/বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (মেট্রো)/প্রভাষক পদে ৮২ জন এবং হাঁস-মুরগি উন্নয়ন কর্মকর্তা/প্রাণী উৎপাদন কর্মকর্তা/সহকারী হাঁস-মুরগি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা/জু অফিসার পদে ১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রার্থীদের ১৫ জানুয়ারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অফিসে গিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হবে। প্রার্থীদের দুই বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার এ শিক্ষানবিশকাল অনূর্ধ্ব দুই বছর বর্ধিত করতে পারবে। শিক্ষানবিশকালে যদি কেউ চাকরিতে বহাল থাকার অনুপযোগী বলে বিবেচিত হন, তবে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই এবং সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ ব্যতিরেকে চাকরি থেকে অপসারণ করা যাবে।
প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার আগে প্রার্থীকে একজন জামানতদারসহ ৩০০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এ মর্মে একটি বন্ড সম্পাদন করতে হবে যে যদি শিক্ষানবিশকালে অথবা শিক্ষানবিশকাল উত্তীর্ণ হওয়ার তিন বছরের মধ্যে চাকরিতে ইস্তফা দেন, তবে প্রশিক্ষণকালে তাঁকে প্রদত্ত বেতন-ভাতা, প্রশিক্ষণ উপলক্ষে উত্তোলিত অগ্রিম/ভ্রমণভাতা/অন্যান্য ভাতাদি ও তাঁর প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয়িত সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে তিনি বাধ্য থাকবেন।
আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া বেশির ভাগই নিয়োগ পাবেন : জনপ্রশাসন সচিব০৯ জানুয়ারি ২০২৫৪৩তম বিসিএস পরীক্ষা, ২০২০–এর ফলাফলের ভিত্তিতে প্রচলিত সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে। যদি কোনো প্রার্থী বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করেন অথবা বিয়ে করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে থাকেন, তবে এ নিয়োগপত্র বাতিল হবে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা দেখা যাবে এই লিংকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আলাস্কা শীর্ষ বৈঠক: পুতিন ১, ট্রাম্প ০
কূটনীতিকে যদি খেলার প্রতীক ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে অনায়াসেই বলা যায়, আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে এক গোলে জিতেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। শূন্য হাতে ঘরে ফিরেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প নিজেকে বিশ্বের সেরা ‘ডিল মেকার’ হিসেবে পরিচয় করাতে ভালোবাসেন। নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় বসামাত্রই তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। ছয় মাস চলে গেছে, যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। শুরুতে দোষ দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে, হোয়াইট হাউসে ডেকে এনে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে খেলার মতো কোনো তাসই তাঁর হাতে নেই। পরে মস্কোর আগ্রাসী বিমান হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়ে চোখ ফেরালেন পুতিনের দিকে, বললেন লোকটা অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, কিন্তু সে সবই ফালতু। খেপে গিয়ে এমন কথাও বললেন, আগামী ১০–১২ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি না মেনে নিলে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
আরও পড়ুনপুতিন না ট্রাম্প— কে কাকে আসলে ফাঁদে ফেলছেন১৩ আগস্ট ২০২৫অথচ নিষেধাজ্ঞা নয়, অতিরিক্ত বাণিজ্যশুল্ক নয়, উল্টো কোনো আগাম শর্ত ছাড়াই পুতিনের সঙ্গে তিনি আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকে সম্মত হয়ে গেলেন। আলোচনার বিষয়—ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি। অথচ সেই বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি নেই। নিউইয়র্ক টাইমস টিপ্পনী কেটে বলেছে, পুরো ব্যাপারটাই দুই পরাশক্তির মধ্যে আপসে দুনিয়া ভাগাভাগির মতো, ঠিক যেভাবে একসময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে দুই-তিনটি ঔপনিবেশিক শক্তি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।
ট্রাম্প অবশ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো চুক্তি হবে না। আলাস্কাতেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ডেকে এনে ত্রিমুখী বৈঠক হবে, এমন কথাও বলেছিলেন। তা হয়নি, সম্ভবত পুতিনের অনাগ্রহেই জেলেনস্কির নাম বাদ যায়। তবে নিজের দুই সহকারী—বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে সঙ্গে নিয়ে পুতিনের দুই সহকারীর সঙ্গে মুখোমুখি বসেছিলেন ট্রাম্প। মাঝখানে কোনো টেবিল নেই, মুখোমুখি তিনখানা করে চেয়ার বিছিয়ে বৈঠক। ট্রাম্প হয়তো বিশ্বাস করতেন, তিনি একবার যদি পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন, তাহলে যুদ্ধবিরতিতে তাঁকে সম্মত করাতে সক্ষম হবেন। এর আগে একই কথা বলেছিলেন উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং-উন সম্বন্ধে। সেখানে চিড়ে ভেজেনি। একই ফলাফল পুতিনের সঙ্গে বৈঠকেরও।
যাঁরা পুতিনকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, তাঁরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি আলাস্কার বৈঠকে আসেননি। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা স্বস্তিকর অবস্থায় আছেন। মস্কো বলছে, যুদ্ধে তারাই জিতছে। অতএব এই সময়ে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে পুতিন আলাস্কায় এসেছিলেন কেন?ইউক্রেনে হামলার জন্য পুতিন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অনাহূত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেই পুতিনকে ট্রাম্প এঙ্কোরেজের বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করলেন। শুধু তা–ই নয়, পুতিন বিমান থেকে নামতে না নামতে তিনি দূর থেকে হাততালি দেওয়া শুরু করলেন। এমন দৃশ্য আগে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। ট্রাম্প তাঁর সরকারি গাড়ি ‘বিস্ট’-এ পুতিনকে নিজের পাশে বসালেন। সেটাও অভিনব। সেখানে তাঁদের দুজনের একান্তে কী কথা হলো, আমরা জানি না। পুতিন ভালোই ইংরেজি জানেন। অনেকেই বলছেন, গাড়িতেই ট্রাম্পকে খুশি করার মতো যা বলার তিনি বলে দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রথম দুই-চার মিনিটের মধ্যেই তিনি বুঝে যাবেন যুদ্ধবিরতি অর্জন সম্ভব হবে কি না। যদি দেখেন, না, কোনো আশা নেই; তাহলে নিজেই সভা থেকে বেরিয়ে যাবেন। তিন-চার মিনিট নয়, আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানালেন, খুব ভালো আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো ‘ডিল’ হয়নি। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি অর্জিত হয়নি। এমনিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে ট্রাম্পকে থামানো কঠিন। কিন্তু এদিন ঘরভর্তি সাংবাদিক থাকলেও তাঁদের কারও কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েই মঞ্চের পেছনে প্রস্থান করলেন।
আরও পড়ুনপুতিন যে দুই জায়গায় ট্রাম্পকে পাত্তা দেন না২৯ মে ২০২৫যাঁরা পুতিনকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, তাঁরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি আলাস্কার বৈঠকে আসেননি। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা স্বস্তিকর অবস্থায় আছেন। মস্কো বলছে, যুদ্ধে তারাই জিতছে। অতএব এই সময়ে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে পুতিন আলাস্কায় এসেছিলেন কেন?
তিনি আসলে বিশ্বমঞ্চে আবার প্রবেশের এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। অন্য কেউ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাঁকে সমান মর্যাদা দিয়ে নিজ দেশে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছেন। এটাই তাঁর জন্য মস্ত কূটনৈতিক জয়। ট্রাম্প যাতে অতিরিক্ত শুল্ক না বসায় বা অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি না করে, সে জন্য কিছু বাড়তি সময় সংগ্রহ তাঁর অন্য উদ্দেশ্য।
পুতিনের অন্য বড় জয় ছিল, এই যুদ্ধ বন্ধে কী কী শর্ত রয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর ‘মূল কারণ’গুলোর সমাধান করতে হবে। এ জন্য যা করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ, তার ন্যাটো জোটে অংশগ্রহণ না করার নিশ্চয়তা এবং সেখানে নতুন নির্বাচন। অনুমান করা হচ্ছে, অপর যে শর্তটি তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তা হলো, এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চলের যে এলাকাগুলো মস্কো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, রাশিয়ার সীমানা হিসেবে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
আরও পড়ুনপুতিন এখন কেন আগের চেয়েও শক্তিশালী২৬ মে ২০২৪বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ট্রাম্প নিজেই ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকা রাশিয়ার দখলে রাখার ব্যাপারে নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, যুদ্ধরত দুই দেশকে একে অপরের সঙ্গে জায়গা বদল করে নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ জমি নিজের দখলে নিয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বড়জোর ৪ শতাংশ ইউক্রেনের জমি। তাহলে একে অপরের সঙ্গে কী বদলাবদলি হবে?
ইউক্রেনের শাসনতন্ত্রে বলা আছে, কোনো অবস্থাতেই দেশের কোনো জমি অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। জেলেনস্কিও মুখে বলেছেন, ইউক্রেনের ‘দ্বিতীয় দেশভাগ’ মেনে নেওয়া হবে না। ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো শান্তিচুক্তি হবে না, জেলেনস্কি সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ থামুক, তা যে শর্তেই হোক, এটা সম্ভবত ট্রাম্প চান। তিনি আশায় আছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি অর্জন সম্ভব হলে তিনি নির্ঘাত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন। এরই মধ্যে ইসরায়েল, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের সরকার তাঁকে মনোনয়ন দিয়ে নোবেল কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ট্রাম্প নিজেও এখানে–সেখানে ফোন করে নিজের হয়ে লবিং করেছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, নরওয়ের অর্থমন্ত্রীকে ফোন করে নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে কথা বলেছেন।
হাসান ফেরদৌস লেখক ও প্রাবন্ধিক
*মতামত লেখকের নিজস্ব