শখের ছাগলে স্বাবলম্বী মোকলেছার, কিনছেন গাভি ও জমি
Published: 15th, March 2025 GMT
ছোটবেলা থেকেই ছাগলের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা মোকলেছার রহমানের। সেই ভালোবাসা থেকেই শখ করে একটি ছাগল কিনে পালন শুরু করেন। একটি, দুটি করে এখন তাঁর খামারে ৫০টি ছাগল। শৈশবের শখ বর্তমানে পরিণত হয়েছে পেশায়। বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। ছাগল বিক্রি করে তাঁর মাসে আয় হচ্ছে গড়ে ২৫ হাজার টাকা।
মোকলেছার রহমানের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ডারারপাড় গ্রামে। কাঁচা–পাকা সড়ক ধরে মোকলেছারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের মতো ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। উঠানে কাঁঠালপাতা, খড় ও ভুসি খাওয়াচ্ছিলেন। এই প্রতিবেদককে দেখে উঠে এসে বসতে দিয়ে শোনান ছাগল পালনে সফলতার গল্প।
মোকলেছার রহমান জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই বাবু মিয়া লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করেন। বাবা রফিকুল ইসলামও তারাগঞ্জ ও/এ দাখিল মাদ্রাসায় চাকরি করেন। ২০০৬ সালে মোকলেছার দাখিল পাস করেন। ২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বড়ভিটা গ্রামের মোকছেদুল ইসলামের মেয়ে মোতাহারা আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর চাকরির পেছনে ছোটেন। চাকরি না পেয়ে হতাশ হন।
মোকলেছার জানান, হতাশার মধে৵ তাঁকে ভরসা এনে দেয় লেখাপড়ার সময়ে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কেনা শখের ব্ল্যাকবেঙ্গল জাতের ছাগল। ২০১৬ সালে স্ত্রী মোতাহারার পরামর্শে ছাগল পালন শুরু করেন। এক বছরে ছয়টি ছাগল ২৪টি বাচ্চা দেয়। ১২টি বিক্রি করে ৬০ টাকা আয় আসে। এই আয় মোকলেছারের চোখ খুলে দেয়। এরপর পুরোদমে ছাগল পালনে নেমে পড়েন। এখন তাঁর খামারে ৫০টি ছাগল। বর্গা দেওয়া আছে আরও ২০টি ছাগল। ছাগল পালনের টাকায় গাভি ও জমি কিনেছেন। তাঁকে দেখে গ্রামের অনেকে এখন ছাগল পালন করে বাড়তি আয় করছেন। মোকলেছারের স্বপ্ন—গ্রামের প্রতিটি উঠানে ছাগল পালন করা হবে। সচ্ছলতার হাসি থাকবে প্রতে৵ক মানুষের মুখে।
মোলেছার জানান, দেশি জাতের ছাগল বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। একটি ছাগল সর্বোচ্চ চারটি বাচ্চা দেয়। ছয় মাস বয়সী একটি ছাগল বিক্রি হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায়। একটি ছাগল ছয় মাসে খড়, কাঁচা ঘাস ও ভুসি খায় দুই হাজার টাকার।
মোকলেছার রহমান বলেন, ‘বাবা-ভাই দুজন চাকরি করেন। আমিও দাখিল পাসের পর চাকরির জন্য এদিক–সেদিক হন্যে হয়ে ঘুরেছি; কিন্তু চাকরি হয়নি। শখের বসে কেনা ছাগল দিয়ে খামার গড়ার পরিকল্পনা করি। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার খামারে ৫০টি ছাগল। বর্গা দিয়েছি আরও ২০টি। ছাগল পালন করে মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। চাষাবাদ আর ছাগল পালনের টাকায় সুখে সংসার চলছে। আমার ইচ্ছা ২০০ ছাগলের একটি খামার করার।’
মোকলেছার রহমানের দেখে ওই গ্রামের সাদেক হোসেন ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। সাদেক বলেন, ‘মোকলেছারের পরামর্শে তাঁর খামার থেকে ছাগল কিনে খামার করেছি। আমার খামারে এখন ২০টি ছাগল আছে। ছাগল পালনে মনে প্রশান্তি আসে। খরচ অনেক কম। ছাগল বিক্রি করে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’
শুধু সাদেকই নন; গ্রামের সাইফুল ইসলাম, এনামুল হক, আশরাফুল ইসলাম ছাগলের খামার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন। ছাগল বিক্রির টাকায় কেউ গাভি, আবার কেউ জমি কিনেছেন। ওই গ্রামের গৃহবধূ ময়না খাতুনের ভিটামাটি ছাড়া কিছু ছিল না। এখন টিনের বাড়ি, ৭ শতাংশ নিজের জমি আছে। গাছগাছালিতে ঘেরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। ময়না খাতুন বলেন, ‘ভাই মোর স্বামী কিষান খাটে। রান্না, ঘর গোছানোর কাম করি মুই অলস বসি আছনু। মোকলেছার ভাই মোক একটা ছাগল বর্গা দিছে। এ্যালা মোর ৫টা ছাগল। ছাগল পালনের টাকায় সংসার ভালোয় চলোছে।’
অভাবের কারণে সোমেদার ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। গালমন্দ ছিল নিত্যদিনের বিষয়; কিন্তু এসব থেকে মুক্তি দিয়েছে ছাগল পালন। সোমেদা বলেন, ‘অল্প জায়গায়, অল্প টাকায় ছাগল পালন করা যায়। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তিন বছর আগে মোকলেছারের কাছে ছাগল কিনে তাঁর পরামর্শে ছাগল পালন শুরু করছি। বিক্রি বাদ দিয়ে এখন তাঁর ছয়টি ছাগল আছে।’
সয়ার ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আল ইবাদত হোসেন পাইলট জানান, মোকলেছার শিক্ষিত বেকার যুবকদের মডেল। তাঁর পথ অনুসরণ করে অনেকেই ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, মোকলেছার রহমান একজন আদর্শ খামারি। তিনি শুধু নিজেই নন, এলাকার অন্তত ১০টি পরিবারকে নিজের ছাগল বর্গা দিয়ে ছাগল পালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখানো পথে এলাকার অনেকেই হাঁটছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড অনুকরণীয়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে তাঁকে সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম কল ছ র র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় ভোট চলছে, কে বসছেন ক্ষমতার মসনদে
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে শনিবার (৩ মে) ভোটগ্রহণ শুরুর কথা জানানো হয়।
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।
সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, লেবার পার্টি কিছুটা এগিয়ে আছে। তবে শেষ মুহূর্তের ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে, কে বসবেন ক্ষমতার মসনদে।
এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবন যাত্রার ব্যয়। এছাড়া, স্বাস্থ্য সেবা ও হাউজিং ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।
নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তার জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।
দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেওয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুণতে হবে।
প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে। কোনো দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে।
আলবানিজ পরিমিত কর হ্রাস, সস্তা স্বাস্থ্যসেবা এবং যারা প্রথমবারের বাড়ি কিনতে চান, তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ডাটন বলেছেন, তিনি জ্বালানি কর ও গ্যাসের দাম কমাবেন এবং পাঁচ লাখ বাড়ির জন্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করবেন।
উভয় পক্ষকেই মার্কিন রাজনীতির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে। ছয় সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হতে না হতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে তার বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা করেন।
কিছু জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তোষামোদ করার কারণে ডাটনের প্রতি ভোটারদের সমর্থন কিছুটা কমেছে।
ঢাকা/ইভা