সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার শিমরাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলেছে একটি চক্র। উপজেলার সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার মহাসড়ক ঘেঁষে এসব জমি দখল করা হয়েছে। ভাড়া দিয়ে টাকাও আদায় করছে চক্রটি। এর পরও জমি উদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সওজের চোখের সামনে দিনের পর দিন এভাবে জমি দখল চলছে। তারা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ৫ আগস্টের আগে মাঝেমধ্যে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মো.

আবুল হোসেন ও বিল্লাল হোসেনের ভাষ্য, সাইনবোর্ডের উত্তরে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রাতারাতি জমি দখল হয়েছে। টিন ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে গণশৌচাগার, গরুর খামার, দোকানপাট, বসতঘরসহ নানা স্থাপনা। 
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চিটাগাং রোডে গুলিবর্ষণ করে হতাহতের মামলার আসামি উপজেলা জাপার সহসভাপতি আখিনুর চৌধুরীসহ প্রভাবশালী একটি চক্র এ কাজে জড়িত। দলখদাররা বাস কাউন্টার ও ধর্মীয় স্থাপনাও গড়ে তুলেছে। রয়েছে রেস্তোরাঁ, যাতায়াতের পথ, নার্সারি, পুরোনো টায়ারের ব্যবসা, রেস্তোরাঁর মাঠ, বাঁশের আড়ত, এমনকি গাড়ির গ্যারেজও।
সানারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ আলী, সাইনবোর্ডের আব্দুল হান্নান, শিমরাইলের মো. সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, সওজের নজরদারি না থাকায় শত কোটি টাকার জমি অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে। মিজমিজির বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, সওজের শিমরাইল কার্যালয় থেকে শুরু করে মহাসড়কের সাইনবোর্ড পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশের শত কোটি টাকার জমি যে যার মতো করে দখল করে নিয়েছে। রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ নীরব রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গণশৌচাগার ও দোকানপাট ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা। হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ (টিআই) আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি পাবলিক টয়লেট, গরুর খামার, দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে আখিনুর চৌধুরীসহ একটি অসাধু চক্র। টাকা আয়ের ফন্দি হিসেবে জায়গা দখল করা হয়েছে। 
মহাসড়কজুড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে আখিনুর চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে হতাহতের মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁর গাড়ি পার্ক করার জন্য সওজের জায়গা দখল করে আরসিসি ঢালাই করে মাঠ বানানো হয়েছে। রেস্তোরাঁটির মালিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি একা তো দখল করিনি, সবাই করেছে। যখন সওজের দরকার পড়বে, তখন ছেড়ে দেব।’
সওজের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে নার্সারি করেছেন বলে দাবি ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘যখন তারা চাইবে, ছেড়ে দেব।’ শিমরাইল মোড়ে সাতটি মার্কেট মালিকও সওজের জমি দখল করে অবৈধ স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মার্কেট মালিক দেলোয়ার হোসেন, নুর উদ্দিন ও হাবিবুল্লাহ হবুলও বলেছেন, সওজের যখন প্রয়োজন হবে, তারা জমি ছেড়ে দেবেন। 
একই মোড়ে অর্ধশত অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে বাস কাউন্টার মালিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাদানীনগর এলাকায় মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। পুরোনো টায়ারের বৃহৎ মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে মহাসড়কের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
মহাসড়কের সাইনবোর্ডসহ শিমরাইল পর্যন্ত শত কোটি টাকার জমি দখল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ সডক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আহসান উল্লাহ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আমরা উচ্ছেদে যেতে পারিনি। গত বছরের ১৫ জুলাই উচ্ছেদের কথা ছিল। কিন্তু দেশের অবস্থা তখন স্বাভাবিক ছিল না বলেই উচ্ছেদ করা হয়নি।’
এ কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘কিছু কিছু শিল্পের জন্য অ্যাপ্রোচের অনুমতি রয়েছে। আমাদের অনুমতি না নিয়ে সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত আমাদের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল ন র ম ণ কর স ইনব র ড অব ধ স থ ব যবস সওজ র

এছাড়াও পড়ুন:

গুমের মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার অব্যাহতির আবেদন

গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদন করা হয়।

মামলাটির ১৩ আসামির মধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সিটিআইবির সাবেক তিন পরিচালক গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

গ্রেপ্তার এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অব্যাহতির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আইনজীবী আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুর ও মাজাহারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরওয়ারের বিরুদ্ধে ১২ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়নি।

আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) চারটি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন। এর মধ্যে তিনটি অপরাধ (আটক, অপহরণ ও নির্যাতন) তাঁর আসামিরা ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই সংঘটিত হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের পদায়নের আগের ঘটনার দায় দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ আইনে নেই।

এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে গুমের ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যে ঘরে ছিলেন, সেটি ২১ ফুট বাই ১৭ ফুটের ছিল বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেই ঘরে জানালা পাঁচটি, দুটি দরজা, ওয়ার্ডরোব, রিডিং টেবিল, পরে এয়ারকন্ডিশনও লাগানো হয়েছিল। অর্থাৎ আযমীকে গুম করে রাখার ঘর আয়নাঘর ছিল না, অন্য কোনো জায়গা ছিল। এ কারণে আযমীকে গুম করে রাখার অভিযোগও এই আসামিদের ওপর বর্তায় না।

এসব কারণে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি অভিযোগ থেকে তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।

এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসিতে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। জেআইসির অবস্থান ঢাকা সেনানিবাসের ডিজিএফআই সদর দপ্তরের পেছনে। এটি ‘আয়নাঘর’ নামেও পরিচিত। জেআইসি বা আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবি।

এ মামলার ১০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।

পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও আছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এ মামলার পলাতক আসামি। তাঁদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা অব্যাহতির আবেদন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ