চট্টগ্রামের খুলশীতে নালায় পড়ে ছয় মাসের শিশু সেহেরিজের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে সেহরিজের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া নগরীর সব খোলা নালা ও খাল চিহ্নিত করে ঢেকে ফেলার সময়বদ্ধ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন, সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে অভিন্ন ড্রেনেজ নিরাপত্তা মানদণ্ড প্রণয়ন এবং স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সেহেরিজের মৃত্যুর ঘটনায় দায় স্বীকার করে জনসমক্ষে কর্তৃপক্ষকে বিবৃতি দেওয়ার জন্য বলা হয় নোটিশে। 

ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সেহেরিজের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়; এটি চসিকের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির প্রতিফলন। সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে জীবনের নিরাপত্তা ও আইনের সুরক্ষার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ৫০ ও ৫২ ধারায় জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা পালন করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যারিকেড বা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খোলা ড্রেনে পড়ে যায়। এ সময় শিশুটি তার মায়ের কোল থেকে ছিটকে পানির স্রোতে ভেসে যায়। দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা পর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের চকবাজার খাল থেকে সেহেরিজের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর অরক্ষিত খাল-নালা চিহ্নিত করে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন চসিক মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন। 

রোববার নগরের টাইগার পাসের নগর ভবনে প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সঙ্গে আয়োজিত বিশেষ সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। 

সভায় মেয়র বলেন, খালে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না। একজন নগরবাসী ও মেয়র হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বাকৃবিতে আড়াই মাসেও কম্বাইন্ড ডিগ্রির কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন হয়নি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ (বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স এন্ড এ. এইচ) চালুর কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নে অগ্রগতি না থাকায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অনুষদের কয়েকশত শিক্ষার্থী। 

গত আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৩ সদস্যের কোর্স কারিকুলাম ও মেকাপ কোর্সের রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি গঠন করে। গত ১১ সেপ্টেম্বর গঠিত হওয়া ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট/সুপারিশ দেওয়ার জন্য বলা হলেও দীর্ঘ আড়াই মাস পরও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

আরো পড়ুন:

জাবিতে আইএইজির ১৫তম এশিয়ান আঞ্চলিক সম্মেলন

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় রাবিতে দোয়া

আরো জানা যায়, ১৩ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, সদস্য-সচিব কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার। এছাড়াও কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত ভেটেরিনারি অনুষদের ৫ জন ও পশুপালন অনুষদের ৫ জন অধ্যাপক এবং শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সদস্য হিসেবে আছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, ডিগ্রিটির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের মতানৈক্য বিদ্যমান। কমিটির সদস্যদের মধ্যেও ঐকমত্য না থাকায় কারিকুলাম প্রণয়নের কাজটি ধীর গতিতে চলছে। আন্দোলন থামাতে প্রশাসন দ্রুত কমিটি গঠন করলেও কার্যত সদিচ্ছার অভাব থাকায় এই ধীর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উদ্বেগ প্রকাশ করে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী শিবলী সাদী বলেন, ‘‘দুই মাসেরও বেশি সময় হতে চলছে, এখনো কম্বাইন্ড ডিগ্রির কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন সম্পন্ন হয় নাই, যা উদ্বেগজনক। যেখানে এক মাসের মধ্যে কারিকুলাম প্রণয়ন করার কথা ছিল। কমিটির সম্মানিত স্যারেদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু কিংবা কবে শেষ হবে; এ জাতীয় কোনো কিছু জানতে পারেননি।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘পাশাপাশি আমাদের চলমান ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি যাতে সেমিস্টারভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়। আশা করি, স্যারেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবেন।’’ 

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী সিফাত সালেহীন বলেন, ‘‘কম্বাইন্ড ডিগ্রির কারিকুলাম প্রণয়ন নিয়ে কালক্ষেপণ করছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। আমাদের অনুষদের কয়েকশত শিক্ষার্থী উৎকন্ঠার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পড়াশোনার পর আমাদের কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিতে আবারও কী ধরনের মেকাপ কোর্স করতে হবে; তা আমরা নিশ্চিত নই। যা আমাদের হতাশা বৃদ্ধি করছে। তাই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কম্বাইন্ড ডিগ্রির কোর্স কারিকুলাম চাই। ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন খেলা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ শেষ করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়ন করতে হবে।’’  

এই বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘‘আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা কমিটির সদস্যদের নিয়ে কয়েকটা মিটিং করেছি। আমরা আমাদের কাজ করছি। আমরা দুই ফ্যাকাল্টির ডিনদের সিলেবাসগুলো দেওয়ার জন্য বলেছি ও কোর্স কারিকুলাম দেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা দ্রুত মিটিং দিয়ে একটা রূপরেখা দাঁড় করিয়ে মেকআপ কোর্সের দিকে আগাবো ইনশাল্লাহ।’’  

কতদিনের মধ্যে কম্বাইন্ড ডিগ্রির কোর্স কারিকুলামের রিপোর্ট বা সুপারিশ হতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা এখন বলা যাবে না। দুই ফ্যাকাল্টি থেকে সিলেবাস আসবে সেটা নিয়ে আমরা বসব, তারপর কোন কোর্স কোন বর্ষে পড়ানো হবে ঠিক করে, তারপরে মেকআপ কোর্স করে দেওয়া যাবে। জিনিসটা এত সহজ না, আমরা চেষ্টা করছি ইনশাল্লাহ তাড়াতাড়ি হয়ত পারব।’’  

ঢাকা/লিখন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাকৃবিতে আড়াই মাসেও কম্বাইন্ড ডিগ্রির কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন হয়নি