পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত
Published: 3rd, May 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্রগোষ্ঠীর হামলার পর এবার পাকিস্তান থেকে আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।
পাকিস্তান থেকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গতকাল শুক্রবার এক সরকারি নোটিশে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আসা সব ধরনের পণ্যের আমদানি ও পরিবহন নিষিদ্ধ এখন থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশন্ত্র গোষ্ঠী হামলা চালায়। এতে ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। ভারত এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি পরিচালনাকারী বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালকের (ডিজিএফটি) কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে কোনো কিছু আনতে চাইলে সরকারের স্পষ্ট অনুমতি লাগবে।
ডিজিএফটি জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে কোনো পণ্য আনতে হলে সরকারের বিশেষ অনুমতি লাগবে।
ভারত শুধু আমদানি বন্ধ করেই থেমে থাকেনি। সরকার আরও একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তানকে আবার এফএটিএফের ‘গ্রে লিস্টে’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। এই আন্তর্জাতিক সংস্থা সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও অর্থ পাচার রোধে নজরদারি করে।
ভারতের তরফে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে পাকিস্তানকে ঋণ না দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হবে।
ভারতের দাবি, এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানে যেসব আর্থিক উৎস সন্ত্রাসবাদে সহায়তা করে, তা বন্ধ করা।
পেহেলগাম হামলার মাত্র দুই দিন পর ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা। এ চুক্তির অধীন পাকিস্তান সিন্ধু নদীসহ কয়েকটি নদীর পানি পেয়ে থাকে।
ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান সরকারও সিমলা চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেয়। ১৯৭২ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এ চুক্তি করা হয়েছিল।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের পরামর্শ দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদক ষ প আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৮ মাসে দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে এই সময়ে ফিলিস্তিনের গাজায় বহু সাংবাদিককে সরাসরি নিশানা করে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এ তথ্য জানিয়েছে।
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ২০২৫ সালের বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচক প্রকাশ করেছে আরএসএফ। সংস্থাটি সেখানে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম ১৮ মাসেই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে দুই শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এসব সাংবাদিকদের মধ্যে অন্তত ৪২ জনকে হত্যা করা হয়েছে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়।
প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজা উপত্যকায় আটকে পড়া সাংবাদিকেরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। খাদ্য, পানিসহ সবকিছুরই চরম সংকটে রয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া দখলকৃত পশ্চিম তীরে সাংবাদিকেরা নিয়মিত ইসরায়েলি বাহিনী এবং সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের হাতে হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
শুধু ইসরায়েলি বাহিনী নয়, গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদও সেখানে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ। সংস্থাটি বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বাধা দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের করা সাইবার অপরাধ আইনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
আরএসএফের করা এবারের গণমাধ্যম স্বাধীনতার সূচকে ফিলিস্তিনের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬৩তম। এই সূচকে ২০২৪ সালের তুলনায় ছয় ধাপ অবনমন ঘটেছে ফিলিস্তিনের। সংস্থাটি বলছে, এবার তালিকায় থাকা ১৮০টি দেশের মধ্যে ১১২টি দেশেই গণমাধ্যম স্বাধীনতায় অবনতি ঘটেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গড় নম্বর কমেছে ৫৫ পয়েন্ট, যা সূচকটি প্রকাশ করার পর থেকে সর্বনিম্ন।
গাজায় সাংবাদিক হত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) দ্বারস্থ হয়েছে আরএসএফ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় সাংবাদিকদের ওপর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক এই আদালতে একাধিক অভিযোগ দাখিল করেছে সংস্থাটি।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় সাংবাদিক নিহতের পৃথক একটি হিসাব দিয়েছে ফিলিস্তিন সরকারের গণমাধ্যম ব্যুরো। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শুধু ২০২৪ সালেই দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।