সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ। সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাংলাদেশ আর হারাতে চায় না।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত এক সেমিনারের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদ আমলের গণমাধ্যম পরিস্থিতি: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার–এর একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন। ২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিষয়ে করা ওই প্রতিবেদন (গতকাল প্রকাশিত) সম্পর্কে তিনি বলেন, সংবাদটির মাধ্যমে পত্রিকাটি বলতে চেয়েছে আগের আমলের মতো এখনো সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হচ্ছেন। কিন্তু আগের সময় ও বর্তমান সময়ের মধ্যে যে গুণগত পার্থক্য হয়েছে, সে কথা বলা হয়নি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যের বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টাকে তিনজন সাংবাদিকের করা প্রশ্ন এবং একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদন (গতকাল প্রকাশিত) একই সূত্রে গাঁথা বলে সেমিনারে মন্তব্য করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিনজন সাংবাদিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন করেছিলেন এবং আজকে (গতকাল) একটা ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার যে হেডলাইন (শিরোনাম), এটা কিন্তু এক সূত্রে গাঁথা। এটার উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে যে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার একটা প্রেক্ষাপট রচনা করা। আবার ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ ফিরিয়ে আনার একটা প্রেক্ষাপট রচনা করা।’

তিনজন সাংবাদিকের করা প্রশ্ন এবং সেই ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তৈরি করা ন্যারেটিভ (বয়ান) বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছিল এবং তার ফল ছিল এক–এগারো।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) সূচকে গত ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থানের রেকর্ড উন্নতি হওয়ার সংবাদটি শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতে হয় উপেক্ষা করা হয়েছে নয়তো যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে মনে করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দৈনিক আমার দেশ–এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ। প্রবন্ধে বলা হয়, ‘এখন সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকায় আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে পারছি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আমরা আর হারাতে চাই না।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটা নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত কালাকানুন আছে, তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন করা প্রয়োজন।।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসীন প্রমুখ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সভাপতি মো.

শহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সরাসরি: যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি ১৪ বিমানে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে ইসরায়েলকে

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সরঞ্জাম ও রসদ বহন করে এনেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সামরিক সহায়তা দেশে পৌঁছেছে।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বিমানগুলো ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে পরিচালিত বিমান ও সমুদ্রপথের ‘সাপ্লাই ব্রিজ’ বা সরবরাহ-সেতুর অংশ।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব চালান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি’ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় হামলার পর থেকে ইসরায়েলে আসা আট শতাধিক সামরিক কার্গো বিমানের পর এটি আরো একটি দারুণ সংযোজন।

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে আসা সামরিক সরঞ্জামগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ওয়াশিংটন ও বার্লিনও এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলার পর থেকে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এই পর্যন্ত উভয় দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়েছে।

অন্যদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ